২০১৬ সালের ২০ জুলাই। রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে ‘কণ্ঠনালীতে সূর্য’ নাটক মঞ্চায়নের সব প্রস্তুতি নিয়েছিল নাট্যদল তীরন্দাজ রেপার্টরি। সেবার নাটক মঞ্চায়নের আগে একটি প্রতিবাদী প্রেক্ষাপট তৈরি করতে চেয়েছিল দলটি।
তখন রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে সোচ্চার হয়েছিল দেশের পরিবেশবাদী এবং রাজনৈতিক প্লাটফর্মগুলো। আর তাই নাটক মঞ্চায়নের আগে শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গনে ‘বাকবিতণ্ডা ও বাহাস’ শিরোনামে আলোচনার আয়োজন করে তীরন্দাজ।
রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে আলোচক ছিলেন তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ; এমন প্রচারণায় অনেকেই সেদিন উপস্থিত হয়েছিলেন শিল্পকলায়। কিন্তু বাধ সাধলো শিল্পকলা একাডেমি প্রশাসন।
অনুষ্ঠান শুরুর আগে অনুমতি নেয়া হয়নি কারণ দেখিয়ে ’আয়োজন করা যাবে না’ এমন নির্দেশ জারি হয়।
ফলে ভেস্তে যায় আলোচনা পর্ব। এমনকি মঞ্চায়নের আগ মুহূর্তে নাটকটিরও বরাদ্দ বাতিল করা হয়।
ওই ঘটনা তখন তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছিল নাট্যাঙ্গনে।
সংবাদমাধ্যমে আসা খবরের বরাতে জানা যায়, সে সময় নাট্যদল বটতলার অন্যতম অভিনেত্রী সামিনা লুৎফা নিত্রা তার ফেইসবুকে লিখেছিলেন, “অধঃপতিত হতে গেলেও কিছুটা ঊর্ধ্বে অবস্থান করতে হয়।
“আমাদের শিল্পকলাকেন্দ্রিক বিনোদন শিল্পীদের পতিত হবারও আর কোনো উচ্চতা নেই। অভিনয় নিয়ন্ত্রণের দাদাগিরি দেখিয়ে সরকারি একাডেমি আজ একটি দলের নাটক বন্ধ করে দিয়েছে।”
সমালোচনার মুখে শিল্পকলা একাডেমি থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, “নাটক বন্ধ নয়, জোরপূর্বক অনির্ধারিত তথাকথিত ‘সুন্দরবন চুরি বিষয়ক বাকবিতণ্ডা ও বাহাস’ অনুষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে।”
বছরের পর বছরে শিল্পকলা একাডেমিতে হল না পাওয়া নিয়ে দীপক সুমন সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আমরা আবেদন করে গেছি। কর্তৃপক্ষ কোনো সাড়া দেয়নি।
“এমনকি ওই দিনের হল ভাড়ার যে টাকা দিয়েছিলাম, সেটাও রিফান্ড করেনি।”
নতুন সরকার এবং শিল্পকলা একাডেমির নতুন প্রশাসনের কাছে এ নির্দেশকের চাওয়া, “শিল্পকলা জনগণের সম্পত্তি।
“কাজেই দলীয় বা গোষ্ঠী বিবেচনায় শিল্পকলার হল বরাদ্দ করা যাবে না। সৃজনশীল কর্মের বিষয়বস্তু আর মানের উৎকর্ষতাই হোক এইরকম রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রসমূহ ব্যবহারের যোগ্যতার মাপকাঠি।”
“গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে সৈয়দ জামিল আহমেদ দায়িত্ব নিয়েছেন। উনি বিচক্ষণ ও যোগ্য মানুষ। আশা করি আমাদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির ব্যবধান নাই হয়ে যাবে। বাকিটা সামনের দিনগুলোতে দেখা যাক।”
২০১৬ সালের ঘটনার পর শিল্পকলায় হল বরাদ্দ না পেয়ে নজরুল ইনস্টিটিউটে ‘কণ্ঠনালীতে সূর্য’ নাটকের দুটি প্রদর্শনী হয়েছিল। যদিও সেখানে আলোর উপযুক্ত ব্যবস্থার অভাব এবং অতিরিক্ত খরচ হওয়ার কারণে প্রদর্শনী চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি।
শিল্পকলা একাডেমিতে হল বরাদ্দ না পেয়ে কেটে যায় সাত বছর। এরপর ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে নাটকটির দুটো প্রদর্শনী করা হয়।
এই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে মহিলা সমিতির মিলনায়তনে নাটকের ৪১তম প্রদর্শনী হয়। মহিলা সমিতির মঞ্চে নাটকের ৪২তম প্রদর্শনী গত ২৮ এপ্রিল।
পৌরাণিক কাহিনীকে ঘিরে এই নাটক নিয়ে আবারও মঞ্চে উঠবে তীরন্দাজ রেপার্টরি।
রোববার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তীরন্দাজ রেপার্টরির প্রধান দীপক সুমন লিখেছেন, গণ-অভ্যুত্থান উত্তর বাতিল হওয়া সেই ‘কণ্ঠনালীতে সূর্য’ নাটকের মধ্য দিয়ে মঞ্চে ফিরছে তীরন্দাজ।
আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় বেইলি রোডের মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে ‘কণ্ঠনালীতে সূর্য’ নাটকের প্রদর্শনী হবে।
মোহিত চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ‘কণ্ঠনালীতে সূর্য’ নাটকের মঞ্চ নির্দেশনা করছেন দীপক সুমন। মঞ্চসজ্জা ও আলোক পরিকল্পনা করছেন ফয়েজ জহির।
নাটকটি দেখা যাবে ৩০০ এবং ৫০০ টাকার টিকেটে। শিক্ষার্থী হলে টিকেটের মূল্য পড়বে ১০০ টাকা।
একজন আগন্তুক, যার গলায় সূর্য আটকে গেছে – এমন কাহিনী নিয়ে এগিয়ে যায় ‘কণ্ঠনালীতে সূর্য’ নাটক; যা তীরন্দাজের ষষ্ঠ প্রযোজনা।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তীরন্দাজ জানায়, রাজপথে সাংস্কৃতিক লড়াই-সংগ্রামে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ করে ফ্যাসিজমের পতন ঘটানোর পর আবার মহড়া কক্ষে ফিরেছে দলটি।
নতুন প্রযোজনা হুমায়ুন আজাদের উপন্যাস অবলম্বনে ‘মুনিয়া অথবা ময়নার গল্প’ নির্মাণের কাজ নিয়েও ব্যস্ত রয়েছে তারা।