চোর ধরতে নয়, বরং চুরির প্রক্রিয়া বুঝতেই শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি কাজ করছে বলে জানিয়েছেন এই কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
বুধবার বিকালে সিলেটে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি একথা জানান।
সবার মতামত ও বাস্তবতা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে শ্বেতপত্র প্রণয়ন করা হবে জানিয়ে দেবপ্রিয় বলেন, “বৈষম্য দূরীকরণ ও সংস্কারের বিষয়ে তথ্যের স্বচ্ছতা আনতে শ্বেতপত্র কমিটি গঠন করা হয়েছে। চোর ধরতে নয়, চুরির প্রক্রিয়া বুঝতেই কাজ করছে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি, যেন এরকমভাবে আগামী দিনে আর কোনও চুরি না হয়।”
তিনি বলেন, “দেশে ভীতি ও আস্থাহীনতা এখনও বিদ্যমান ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে সবাইকে নিজ নিজ জায়গা থেকে কথা বলতে হবে। দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। এ ব্যাপারে সবার মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। অর্থনৈতিক অবস্থার সংস্কারে আলোচনা অব্যাহত রাখতে হবে।”
অন্তর্বর্তী সরকার ও শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি দেশের বিদ্যমান ব্যবস্থার পরিবর্তন চায় জানিয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় এই ফেলো বলেন, “বিগত সময়ে অনেক রাজনীতিবিদ ও সরকারি কর্মচারী ব্যবসায়ী হয়ে গেছেন বা ব্যবসায়ীরাই রাজনীতিবিদ হয়েছেন- এমনটাই আমরা জেনেছি।
“বর্তমান সরকার ও শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি এ ব্যবস্থার পরিবর্তন কামনা করে। একই ধরনের নিপীড়ন ও ভীতিকর পরিস্থিতির মধ্যে যেন আমরা না থাকি, সে পরিবর্তনই চায় নতুন বাংলাদেশ।”
শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, “আমরা বলেছি, এত উন্নয়ন হলো, তাহলে কর আহরণ বাড়ল না কেন? করের টাকা গেল কই? এত উন্নয়ন হলো, তাহলে ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ হলো না কেন?
“আর বিনিয়োগ হয়ে থাকলে কর্মসংস্থান হলো না কেন? শুধু কর্মসংস্থানের জন্য এত লোক বিদেশে পাঠাতে হয় কেন? এতই যদি উন্নয়ন হয়ে থাকে, তাহলে অতি দারিদ্র্য কমল না কেন? বৈষম্য কমল না কেন?
“এসব চিন্তার মধ্যে একটা বড় বিষয় ছিল, যেসব তথ্য-উপাত্ত সরকার দেয়, সেগুলো ঠিক কি না। বর্তমান সময়ের অন্যতম দুটি দাবি হলো বৈষম্য দূরীকরণ ও সংস্কার। এ দুটি বিষয় বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট তথ্যের স্বচ্ছতা দরকার। এ স্বচ্ছতা আনার জন্যই আমাদের এই শ্বেতপত্র কমিটি গঠিত হয়েছে।”
সিলেটে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির আঞ্চলিক সভা আয়োজনের বিষয়ে তিনি বলেন, “এটা একটা জনশুনানি। এখানে আমরা শুনতে এসেছি, বাংলাদেশে যে এমন একটা পরিস্থিতি হলো, এর মূল কারণ আপনারা কী মনে করেন।
“আপনাদের এলাকার অর্থনৈতিক দুঃখ-কষ্ট চিহ্নিত করা যায় কীভাবে। দুঃখ-কষ্ট আগামী দিনে নিরসন করা যায় কি না। কারণ এসব তথ্য চিহ্নিত করার মধ্য দিয়েই সংস্কারকাজ করা হবে।”
গত দশক বা তার চেয়ে বেশি সময় ধরে উন্নয়নের বিভিন্ন ধরনের বয়ান বাংলাদেশে প্রচলিত আছে জানিয়ে দেবপ্রিয় বলেন, “উন্নয়নের এসব বয়ান নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে আসছেন বিশেষজ্ঞ ও সমাজের বিভিন্ন খাতের বিশ্লেষকরা।”
সিলেটে বুধবার বিকালে আয়োজিত এই মতবিনিময় সভায় জেলার বিভিন্ন খাতের অংশীজনেরা যোগ দেন। সেখানে তারা চা, পর্যটন, মৎস্য, কৃষি, যোগাযোগ, প্রবাসী আয়সহ বিভিন্ন খাতের দুর্নীতি, অবহেলা ও উন্নয়ন-বঞ্চনা নিয়ে নিজেদের মত তুলে ধরেন।