স্বপ্ন কি ‘সাদা-সাদা, কালা-কালা’ হয়? না কি স্বপ্ন মানে রঙের দুনিয়া?
এক সময় বলা হতো, সবাই সাধারণত সাদা-কালো স্বপ্ন দেখে থাকে। অনেকে পরে যখন স্বপ্নে দেখা কিছুর রঙ বলে তা পুরোপুরি মনস্তাত্ত্বিক।
বিজ্ঞান অবশ্য স্বপ্নের রঙে নতুন করে আলো ফেলে পুরনো ধারণা যাচাই করে দেখছে।
২০১৭ সালের এক গবেষণা বলছে, জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় ৫০ শতাংশই তাদের স্বপ্নে রঙের উপস্থিতি নিয়ে জানিয়েছে। আর ধূসর রঙের স্বপ্ন দেখার কথা জানিয়েছে মোটে ১০ শতাংশ।
যদিও ৪০ শতাংশ জেগে ওঠার পর আর কোনোভাবে স্বপ্নে কোনো রঙের উপস্থিতি ছিল কি না তা বলতে পারছে না।
দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, ধূসর অথবা রঙিন স্বপ্ন দেখার পেছনে বয়সের বিভিন্ন পর্যায় কাজ করে থাকে।
পঞ্চাশের দশক পর্যন্তও গবেষণাতে দেখা গেছে, স্বপ্নে রঙ দেখা বিরল ঘটনা; অথবা কখনই রঙের উপস্থিতি ছিল না স্বপ্নে।
এরপর ২০০৮ সালে গবেষণার ফল বলছে, ৫৫ বছরের বেশি বয়সীরা যারা হয়তো রঙিন টিভি ছাড়া বেড়ে উঠেছে, তাদের মধ্যে প্রায় ৩৪ শতাংশ রঙিন স্বপ্ন দেখে। অথচ ২৫ বছরের কম বয়সীদের ৬৮ শতাংশ রঙিন স্বপ্ন দেখছিল।
এই দুই দলের মধ্যে প্রায় ১৮ শতাংশ বয়স্ক আর ১৫ শতাংশ তরুণ অবশ্য স্বপ্নে দেখা রঙের নাম মনে করতে পারেনি।
কী কারণে কেউ কেউ স্বপ্নে দেখা রঙের বর্ণনা জেগে উঠে আর মনে করতে পারেন না?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন এমন হতেই পারে। কারণ স্বপ্ন দেখার সময় মস্তিষ্ক রঙের চেয়ে বাকি বিবরণে বাড়তি মনোযোগ দেয়।
হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলে মনোবিদ এবং ‘দ্য কমিটি অব স্লিপ’ গ্রন্থের লেখক ডেইরড্রি ব্যারেট বলেন, “বিষয়টা সম্ভবত মনোযোগ এবং স্মৃতিশক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত।”
যেমন কোনো রেস্তোরাঁয় খাওয়া শেষে বের হয়ে এলে ওয়েটারের শার্টের রঙ মনে করা দুস্কর হয়ে ওঠে।
তার মানে কিন্তু এই নয় যে ওয়েটারের শার্ট বর্ণহীন ছিল। বরং এর অর্থ দাঁড়ায়, ওই রঙ গ্রাহকের নজরে গুরুত্ব রাখেনি; আর তাই স্মৃতিতেও থাকেনি।
ঘুমের দুনিয়ায় এবং ঘুম থেকে জেগে ওঠার পর কারও সঙ্গে তাই ঘটে থাকে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই মনোযোগ ও স্মৃতি আরও খানিক দুর্বল হয়ে যায়।
২০১১ সালের দুটো জরিপের বরাতে গবেষকরা বলছেন, তিরিশের কম বয়সী অংশগ্রহণকারীদের ৮০ শতাংশ স্বপ্নে দেখা রঙের কথা বলতে পারে।
কিন্তু ৬০ বছর বয়সীদের বেলায় মোটে ২০ শতাংশ তা বলতে পেরেছে।
এসব উপাত্ত থেকে ব্যারেট বলতে চান, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বপ্ন মনে করার সূক্ষ্ণতা কমে যেতে শুরু করে।
স্বপ্নে সাধারণত কালো, সাদা এবং লাল রঙের কথা জরিপে মিলেছে।
‘স্লিপ অ্যান্ড ড্রিম ডেটাবেজ’ গবেষক, লেখক এবং প্রতিষ্ঠাতা কেলি বাল্কেলি বলতে চান, “এসব রঙের সঙ্গে ভালোবাসা, রক্ত, আগুন সম্পর্কিত।”
কেলি বাল্কেলির ওই ডেটাবেজে ৪০ হাজার স্বপ্নের উপাত্ত জমা করা হয়েছে।
কেউ কেউ স্বপ্নে অদ্ভুত রঙের কথাও জানিয়েছেন গবেষকদের। যেমন নীল রঙের হাত। এমনকি সাধারণত মেলে না এমন রঙ স্বপ্নে দেখেছেন বলেও জানান অনেক। এই তথ্য দিলেন ব্যারেট।
রঙ দিয়ে স্বপ্নের মাহাত্ম্য বোঝা যেতে পারে। কোনো বস্তু, মানুষ, জায়গা, পোশাকের রঙ বিশেষ মানে দাঁড় করাতে পারে স্বপ্নে, বলেন তিনি।
একেক জনের বেলায় একেক রঙ একেক অর্থ হয়ে ধরা দিতে পারে স্বপ্নে।
“স্বপ্নে একটা ঘটনা থাকে। এতে ওই ব্যক্তির জীবন ও প্রতিদিনের কোনো না কোনো ঝলক থাকে”, বললেন ইটি বেন সাইমন।
ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলি -এর হিউম্যান স্লিপ সায়েন্স সেন্টারের এই জ্যেষ্ঠ গবেষক বলছেন, “ধরা যাক, কেউ একজন পেশায় রঙমিস্ত্রি; তার স্বপ্নে রঙ যেভাবে ধরা দেবে বাকিদের স্বপ্নে রঙ একই অর্থ বহন করবে না।”