সদ্য প্রয়াত পরম শ্রদ্ধাভাজন অগ্নিকন্যা বেগম মতিয়া চৌধুরী একটি চেতনার নাম, একটি মতাদর্শের নাম। সেই মতাদর্শ শোষণমুক্তির সংগ্রাম তথা শ্রেণী সংগ্রাম। শোষণমুক্তির অঙ্গীকার থেকেই তাঁর রাজনীতিতে হাতেখড়ি। সমগ্র জীবনব্যাপী সে অঙ্গীকার তিনি নিষ্ঠার সাথে প্রতিপালন করেছেন। ক্ষণজন্মা বেগম মতিয়া চৌধুরী জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ৩০ জুন পিরোজপুরে। আর ২০২৪-এর ১৬ অক্টোবর রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর পিতা মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা এবং মাতা নূরজাহান বেগম গৃহিণী। ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দের ১৮ জুন তিনি সংগ্রামের সহযোদ্ধা খ্যাতিমান সাংবাদিক বজলুর রহমানের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
ইডেন কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় তিনি ছাত্র রাজনীতিতে যুক্ত হন। ১৯৬৩-৬৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম রোকেয়া হলের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন এবং ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ডাকসু’র সাধারণ সম্পাদকের পদ অলঙ্কৃত করেন। ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে প্রথমে তিনি ছাত্র ইউনিয়নের সহ-সভাপতি (যখন রাশেদ খান মেনন সভাপতি) এবং পরে সভাপতি ও সাইফুদ্দিন আহমেদ মানিক সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ছাত্রাবস্থায় তিনি সাফল্যের সঙ্গে ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃত্ব দিয়েছেন। একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, তাঁর নেতৃত্বাধীন সময়ে ছাত্র ইউনিয়নের ছিল গৌরবোজ্জ্বল স্বর্ণযুগ। তাঁর নামেই তৎকালে ছাত্র ইউনিয়নের একটি গ্রুপের নামকরণ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই হয়েছিল ‘মতিয়া গ্রুপ’।
উল্লেখ্য যে, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও গণচীনের মধ্যে আন্তর্জাতিক মতাদর্শগত বিতর্ককে কেন্দ্র করে স্বৈরশাসক কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত পূর্ব পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টি (ইপিসিপি) বিভক্ত হলে হক-তোয়াহা-মতিন-আলাউদ্দিন-দেবেন-বাশার নেতৃত্বাধীন অংশটি পূর্ব পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টি (এম-এল) নামে পৃথক পার্টি গড়ে তোলে। এর প্রভাব ছাত্র আন্দোলনেও পড়ে। সৃষ্টি হয় ইপিসিপি (এম-এল) প্রভাবিত বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন (মেনন গ্রুপ) এবং মণি সিংহ-খোকা রায়ের নেতৃত্বাধীন ইপিসিপি প্রভাবিত ছাত্র ইউনিয়ন (মতিয়া গ্রুপ)। উদার মার্ক্সবাদী মতাদর্শের সংগঠন পূর্ব পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টি (মণি সিংহ-খোকা রায়) মস্কোপন্থী এবং উগ্র বাম হঠকারী মতাদর্শের সংগঠন পূর্ব পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টি (এম-এল) পিকিংপন্থী হিসেবে জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপক পরিচিত লাভ করে। ছাত্র ইউনিয়ন (মেনন গ্রুপ) সাধারণ ছাত্রদের নিকট ‘বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন’ নামে সুপরিচিত ছিল।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঘোষিত জাতির মুক্তিসনদ ছয় দফা কর্মসূচীকে কেন্দ্র করে শুরুতে ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় প্রগতিশীল-গণতান্ত্রিক ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে মতভেদ ছিল। যদিও ছাত্রলীগ প্রথম থেকেই ছয় দফার প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন ব্যক্ত করে রাজপথে সংগ্রাম সংগঠিত করেছিল। তবে ছয় দফা কর্মসূচীর প্রতি সমর্থন প্রদানকে কেন্দ্র করে অখণ্ড ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ শুরুতে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।
পরবর্তীকালে ছাত্র ইউনিয়ন (মতিয়া গ্রুপ) ’৬৮-এর এপ্রিল মাসে প্রথম ছয় দফার প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের সমর্থন প্রদান করে বিবৃতি দেয়। ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সভানেত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক জনাব সাইফুদ্দিন আহমেদ মানিক স্বাক্ষরিত এক যুক্ত বিবৃতিতে বলা হয়, ‘যদিও অপরাপর বিষয়ে আওয়ামী লীগের সহিত তাহাদের মতভেদ রহিয়াছে, তথাপি ৬ দফাকে জনপ্রিয় করার জন্য তাঁহারা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাইবেন। কারণ, উহা পাকিস্তানের সকল অঞ্চলের স্বায়ত্তশাসনের পক্ষেই সহায়ক।’
অপরদিকে ছাত্র ইউনিয়ন (মেনন গ্রুপ), ইপিসিপি (এম-এল) এবং ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ভাসানী) তাদের বক্তৃতা-বিবৃতিতে ছয় দফাকে চরম প্রতিক্রিয়াশীল কর্মসূচী আখ্যায়িত করে নেতিবাচক মনোভাব গ্রহণ করেছিল। পরবর্তীকালে অবশ্য তারা তাদের অবস্থান সংশোধন করে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিল।
ছাত্র ইউনিয়ন (মতিয়া) কর্তৃক ছয় দফা কর্মসূচীর প্রতি সর্বাত্মক সমর্থন প্রদানের ফলে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠনের পথ সুগম হয় এবং ঐতিহাসিক এগারো দফা কর্মসূচীর ভিত্তিতে তুমুল গণআন্দোলন গড়ে উঠার মধ্য দিয়ে সর্বব্যাপী গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয় এবং সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানের জনসাধারণের মধ্যে বিশেষ করে ছাত্রদের মধ্যে ঐতিহাসিক এগারো দফার মধ্য দিয়েই ছয় দফা কর্মসূচী ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। সেদিন মতিয়া চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন ছাত্র ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ছয় দফা অন্তর্ভূক্ত করে ঐতিহাসিক এগারো দফা কর্মসূচী প্রণয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল বলেই ঊনসত্তরের গণআন্দোলন সামগ্রিকতায় ’মহান মুক্তিযুদ্ধের ড্রেস রিহার্সেলে’ রূপান্তরিত হয়েছিল।
১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে ছাত্রজীবন শেষ করে মতিয়া চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে (মোজাফফর) যোগদান করেন এবং কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির সদস্য হন। ১৯৭০-এর ঐতিহাসিক নির্বাচনে তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নৌকা প্রতীকের পক্ষে গণজোয়ার তৈরিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন।
১৯৭১-এ মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি আগরতলায় অবস্থিত ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের প্রশিক্ষণ শিবিরে স্বাধীনতা সংগ্রাম, প্রচারণা, শরণার্থীদের দেখভাল এবং আহতদের শুশ্রূষায় উদয়াস্ত তৎপর ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে জুলাই মাসের ১৩ তারিখে আগরতলার পোস্ট অফিস চৌমুহনীতে পাকিস্তানে মার্কিন অস্ত্র সরবরাহের প্রতিবাদে ভারতের ছাত্র ফেডারেশন আয়োজিত এক সমাবেশে ন্যাপ নেতা মতিয়া চৌধুরী ‘সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন সরকারের কালো হাত ভেঙে দেওয়ার জন্য স্বাধীনতা কামী জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।’
মতিয়া চৌধুরী দুই ঘন্টা ব্যাপী এক দীর্ঘ ভাষণে ইতিহাস বর্ণনা করে বলেন, ‘আজকের স্বাধীনতা আন্দোলন একদিনে গড়ে ওঠেনি। মার্কিন সরকার তার সাম্রাজ্যবাদী নীতির কারণে আইয়ুব ও ইয়াহিয়াকে সাহায্য করছে।’ বক্তৃতায় তিনি আরও বলেছিলেন, ‘বাংলার মেহনতী মানুষের রক্তের বিনিময়ে ইসলামাবাদ গড়ে উঠেছে। এটা খুউব দুঃখের যে চীন ও আমেরিকা আজ একই ভূমিকায় অবতীর্ণ।’ তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘চীনের জনতা বাংলার মানুষের পাশে থাকবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সাম্প্রদায়িকতার বিষ বৃক্ষ বাংলাদেশ থেকে তুলে ফেলতে হবে। পাকিস্তানে কখনও ইসলাম ছিল না, কোনোদিন থাকতে পারে না। ইসলাম শোষণের জন্য নয়।’ আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে তিনি বলেন, ‘এখন একটি ফ্রন্ট করে এগিয়ে যেতে হবে।’ মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করার জন্য তিনি ভারত সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
নয় মাসের রক্তক্ষয়ী জনযুদ্ধে ৩০ লক্ষাধিক প্রাণ আর ২ লক্ষাধিক মা-বোনের সুমহান আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনের পর তিনি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (মোজাফফর)-এর কেন্দ্রীয় নেত্রী হিসেবে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গঠনে বঙ্গবন্ধুর সরকারের গঠনমূলক সমালোচনাসহ সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন।
১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ৩ নভেম্বর কারাগারের অভ্যন্তরে জাতীয় চার নেতার নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর স্বাধীন বাংলাদেশের ভাগ্যাকাশে যখন দুর্যোগের অমানিশা তখন, সেই মর্মন্তুদ ঘটনার অব্যবহিত পরপরই মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বপ্রদানকারী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করতে ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে তিনি বাংলাদেশের প্রগতিশীল-গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ১৯ জন সংগ্রামী নেতাকে সঙ্গে নিয়ে ন্যাপ ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন।
আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সেদিনের সেই যোগদান অনুষ্ঠানের সভায় তিনি বলেছিলেন, “আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ আওয়াজ তুলি, সাম্রাজ্যবাদ নিপাত যাক, স্বৈরতন্ত্র ধ্বংস হউক, জনতার জয় হউক। আসুন আমরা আওয়াজ তুলি, এক মুজিবের রক্ত থেকে লক্ষ মুজিব জন্ম নিবে, বঙ্গবন্ধুর রক্ত সমাজতন্ত্রের বীজমন্ত্র, বঙ্গবন্ধুর পথ ধরে সমাজতন্ত্র কায়েম কর, স্বাধীনতা এনেছি সমাজতন্ত্র আনবো। আসুন আমরা সম্মিলিত কণ্ঠে ধ্বনি তুলি, সামনে আছে জোর লড়াই শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র জনতার ঐক্য চাই, সমানে আছে জোর লড়াই মুক্তিযোদ্ধাদের এক চাই। আসুন আমরা সমবেত কণ্ঠে ঘোষণা করি: ‘জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু। জয় সমাজতন্ত্র। বিপ্লব দীর্ঘজীবী হউক। জয় হউক মেহনতী মানুষের ঐক্যের।’”
আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ও কর্মীদের প্রাণঢালা সংবর্ধনা, বিপুল করতালির মাঝে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সাধারণ সম্পাদিকা বেগম মতিয়া চৌধুরী ন্যাপের কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের উনিশজন প্রভাবশালী নেতাসহ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগদানের সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন। আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে বেগম মতিয়া চৌধুরী এ সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করে বলেছিলেন, ‘‘জাতীয় ঐক্যের জরুরি তাগিদ উপলব্ধি করে এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন— কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগের কর্মসূচী বাস্তবায়নের সংগ্রামে নিয়োজিত থাকার লক্ষ্য নিয়েই তারা আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন।’’ সেদিনের অনুষ্ঠানে ভাষণ দানকালে আওয়ামী লীগ সভাপতি জনাব আবদুল মালেক উকিল বেগম মতিয়া চৌধুরী ও অন্যান্য নেতাকে আন্তরিক অভিনন্দন ও স্বাগত জানিয়ে বলেছিলেন, ‘‘আওয়ামী লীগ নেতার নয়, কর্মীর সংগঠন। আমরা যৌথ নেতৃত্বে বিশ্বাসী। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কর্মী হিসেবে নেতৃত্ব আমাদের কাছে বড় নয়, আদর্শই বড়। আওয়ামী লীগের নেতা একজনই। টুঙ্গীপাড়া থেকেই সেই নেতা আমাদের নেতৃত্ব দেবেন।’’ মতিয়া চৌধুরীসহ ১৯ জন নেতার পরিচিতি অনুষ্ঠানে জনাব মালেক উকিল যখন সবশেষে বেগম মতিয়া চৌধুরীর নাম ঘোষণা করেছিলেন তখন এক অভূতপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা হয়েছিল। যোগদান সভায় সমবেত সহস্রাধিক কর্মী স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করে বেগম মতিয়াকে অভ্যর্থনা জানিয়ে একটানা পনেরো মিনিট করতালি দিয়ে স্লোগান তুলেছিল, ‘‘বিপ্লবী মতিয়া স্বাগতম শুভেচ্ছা’’, ‘‘মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ধ্বংস হোক, নিপাত যাক।’’
যোগদান অনুষ্ঠানের সভায় বেগম মতিয়া চৌধুরী তাঁর ভাষণে আরও বলেছিলেন, ‘‘আসুন আমরা সকলে মিলে গড়ে তুলি ইস্পাতদৃঢ় ঐক্য। সাম্রাজ্যবাদ আর স্বৈরশাসনের কবর রচনা করে পথ চলি ইপ্সিত লক্ষ্যে। মুজিবের মন্ত্রের দীক্ষায় আমরা হই দুর্জয় শপথে বলিয়ান। ইতিহাসের অমোঘ নির্দেশ মেনে নিয়ে শ্রমজীবী জনগণের রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে এগিযে যাই দুর্বার শক্তিতে। জাতির জনকের স্বপ্নের-আকাঙ্ক্ষার শোষণমুক্ত সুখী-সমৃদ্ধ সমাজ তথা সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সুমহান চেতনায় আমরা স্নাত হই, অবগাহন করি। আসুন, আমরা বিপ্লবের রক্তেরাঙ্গা ঝাণ্ডাকে সমুন্নত করি। দুনিয়াব্যাপী শান্তি, স্বাধীনতা আর সমাজপ্রগতির দুর্বার অগ্রযাত্রায় শরীক হই। শ্রমজীবী জনতার বিজয়ের কাফেলায় মিশে যাওয়ার যে আকাঙ্ক্ষা জাতির জনক আলজিয়ার্সে ব্যক্ত করেছিলেন, (বিশ্ব আজ দু’ভাগে বিভক্ত। শোষক আর শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে।) সে আকাঙ্ক্ষার বাস্তব প্রতিফলন ঘটাই এই বাংলাদেশ।’’
এরপর রাষ্ট্রপতি জেনারেল জিয়াউর রহমান ও রাষ্ট্রপতি জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের শাসনকালে স্বৈরতন্ত্র বিরোধী আন্দোলন সংঘটিত করতে গিয়ে তিনি বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তার হন ও কারানির্যাতন ভোগ করেন। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে নানা দুর্বিষহ স্মৃতিও রয়েছে তাঁর। রাজনৈতিক জীবনে তিনি সর্বমোট জেলে গেছেন ১৫ বার। বহু বছর তাঁকে কাটাতে হয়েছে কারাগারে। আইয়ুব আমলে ১৯৬৭ থেকে ১৯৬৯ একটানা দু’বছর জেল খাটেন তিনি।
পরাধীন দেশের কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠের দৈনন্দিন জীবন নিয়ে রয়েছে তাঁর একমাত্র গ্রন্থ ‘দেয়াল দিয়ে ঘেরা’— যা প্রতিটি রাজনৈতিক কর্মীর অবশ্যপাঠ্য। ১৯৬৯-এর ২২ ফেব্রুয়ারি, সেদিনের দীর্ঘ কারাজীবন থেকে মুক্তিলাভের প্রাক্কালে স্বীয় অনুভূতি লিপিবদ্ধ করে মর্মস্পর্শী ভাষায় তিনি লিখেছেন—
“গণআন্দোলনের চাপে মহাশক্তিধর আইয়ুব সরকারের আসন টলটলায়মান। তা সত্বেও সে মরণকামড় দিতে ছাড়ে না। একশ একচল্লিশ জন ডিপিআর বন্দীকে ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েও তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে জেল গেটে পুনরায় নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার করে সরকার রাজবন্দীদের মুক্তির প্রশ্নটিকে প্রহসনে পরিণত করেছে। অন্যদিকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহারের প্রশ্নে কতিপয় আইনগত অসুবিধা আছে বলে উল্লেখ করে আইয়ুব খান বলেছেন, ‘ষড়যন্ত্র মামলা হালকাভাবে দেখা চলে না।’ একদিকে সতেরই ফেব্রুয়ারি গোলটেবিল বৈঠকের তারিখ দিয়েছেন ওদিকে সারা দেশে ছাত্র-জনতার উপর গুলী, লাঠিচার্জ কাঁদুনে গ্যাস বর্ষণ অব্যাহত রাখা হয়েছে।
চৌদ্দই ফেব্রুয়ারি ডাক-এর আহ্বানে সারা দেশে অবিস্মরণীয় হরতাল হল। সারাদিন ধরে দেয়ালের ওপাশ দিয়ে অবিশ্রান্ত স্রোতধারার মত অসংখ্য মিছিল গেল। কত বিচিত্র স্লোগান কানে এল। কতকগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক বক্তব্য সুপষ্টভাবে আসেনি। উচ্চারণও দুষ্ট। কিন্তু ঐসব স্লোগান জানিয়ে দিয়ে গেল, আন্দোলন সব স্তরের মানুষকে টেনে এনেছে। দেয়াল ভিঙ্গিয়ে উঁকি দিয়ে যাওয়া পত্ পত্ করে ওড়া সারি সারি লাল পতাকা দেখে বুঝলাম, শ্রমিক ভাইরা যাচ্ছে। কিন্তু লাল পতাকার মানুষগুলোর সংখ্যা হঠাৎ এত বেড়ে গেল কি করে? মে দিবসেও তো এত পতাকার সমারোহ দেখিনি। সারাদিনের পর যখন সন্ধ্যার অন্ধকার বেশ গাঢ় হয়ে এল। কিন্তু পরদিন ভাবলাম, যাক আজ অন্ততঃ কাউকে প্রাণ দিতে হল না। কিন্তু পরদিন জানলাম লাহোরে এই হরতালের দিন পুলিসের গুলীতে দু’জন মারা গেছে।
বসন্ত এসেছে। সেদিন পড়ছিলাম যে একমাত্র লাহোরেই দশ সহস্রাধিক টাকার টিয়ার গ্যাস ব্যয় হয়েছে। সেই লাঠিচার্জ, টিয়ার গ্যাস, বিস্ফোরিত গন্ধক আর মায়ের কান্নায় ভারী বাতাসই দক্ষিণ দিক হতে বইতে শুরু করেছে। বিচিত্র রাগে হয়ত আসতে পারে নি, তবু বসন্ত এসেছে। অশ্বথ গাছটা টিয়া সবুজ পাতার সাজ পরেছে। কুল গাছ দুটো পত্রহীন হয়ে বসন্তের উত্তাপ আরও একটু গায়ে জড়িয়ে পাতা মেলবার অপেক্ষায় রয়েছে। ওদের নাড়া ডালে দু’একটা ফুল কিভাবে যেন রয়ে গেছে। ঘূর্ণি বাতাসে হঠাৎ একটা কুল পড়লে গাছতলায় বাচ্চাদের লুটোপুটি লেগে যায়। দেয়াল ছাড়িয়ে বহু দূরে কি একটা নাম না জানা গাছ লালের ইশারা দিচ্ছে। হাজতের সামনের প্রকাণ্ড বুড়ো আম গাছটা সবটুকু ফাঁকা রেখে শুধু একদিকে একটা ডালের পাতাশুদ্ধ ঢেকে থোকা থোকা সোনালী বোল এসেছে।
ষোল তারিখ কাগজ খুলতেই চোখে পড়ল ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার দুইজন অভিযুক্ত সার্জেন্ট জুহুরুল হক ও ফজলুল হক বুলেট বিদ্ধ। সার্জেন্ট জহুরুল হকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। প্রেসনোটে বলা হয়েছে, তাঁহারা পলায়ন করিতে গেলে’ …ইত্যাদি।
সংবাদটা পড়ার পর থেকে খালি ভাবছিলাম ওরা বাঁচবে তো। তিনটার দিকে এই শঙ্কা মনে নিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি হঠাৎ দেখি উত্তরের আকাশ রাশি রাশি কালো ধোয়ায় ছেয়ে গেছে আর চারদিকে কেমন একটা কোলাহল। বুকের ভিতর ধক করে উঠল। নিশ্চয়ই কিছু একটা ঘটেছে। পাঁচটার দিকে আবার রাস্তা ঘাট নিস্তব্ধ হয়ে গেল। কারফিউ জারী হল। পরদিন কাগজ থেকে জানলাম সার্জেন্ট জহুরুল হক মারা গেছেন। তাঁর শব মিছিলের উপর গুলীবর্ষণ করা হয়েছে। ক্রুব্ধ জনতা মন্ত্রী ও মুসলিম লীগ নেতাদের বাড়ীতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।
সতের তারিখ পর্যন্ত সান্ধ্য আইন বহাল রইল। এই তিন দিনে এদেশের মানুষ সংগ্রামের স্থাপন করল এক নতুন দৃষ্টান্ত। বিনা অস্ত্রে খালি হাতে তারা কারফিউ ভাঙ্গল। যারা ভেবেছিল মেশিন গান রাইফেল আর গুলীর ভয় দেখিয়ে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনা যাবে তাদের হিসাবটা ওলট পালট হয়ে গেল। ভয় শব্দটাইতো জনতা ভুলে গিয়েছে।
আঠারো তারিখ রাতে বসে বই পড়ছিলাম। হঠাৎ মনে হল কারফিউ নিস্তব্ধ রাতের বুক চিরে অসংখ্য কণ্ঠ ভেসে আসছে। মনে হল মিছিল। আবার ভাবলাম, একে তো কারফিউ, তার উপর এই রাতে কোথা থেকে মিছিল আসবে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম। দেখি শব্দটা এদিকে এগোয় কিনা। না এদিকে এগুলো না কিন্তু শব্দটা থামলোও না। কেবল মুহুর্মুহু উঠতেই থাকল।
পর দিন কাগজে দেখলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রিডার ড. শামসুদ্ধোহা গুলীবিদ্ধ হয়ে শহীদ হয়েছেন এবং তাঁর মৃত্যুর খবর রেডিওতে প্রচার হওয়া মাত্র দলে দলে লোক স্বতস্ফূর্তভাবে রাতের অন্ধকারে কারফিউ ভেঙ্গে স্লোগান দিয়ে বেরিয়ে পড়েছে।
আঠারো তারিখ রাতের পর দেখলাম ঊনিশের দিনের চেহারাও পাপ্টে গেছে। আগের বারের কারফিউতে দেখেছি, বিরতির সময়টুকু পার হয়ে সাইরেন পড়তেই রাস্তা-ঘাট, বাড়ির ছাদ, দোতলার বারান্দা সব খালি হয়ে গেছে। সেদিন সাইরেন পড়তে রাস্তা খালি হল বটে, কিন্তু ছাদ বা বারান্দা সব খালি হল না বরং ওখানে দাঁড়ানো লোকের সংখ্যা স্বাভাবিক সময়ের চাইতে একটু বেশীই মনে হল। সব চেয়ে অবাক লাগল সেই বউটিকে দেখে যে সাধারণতঃ বিকেলের দিকে বছর দেড়েকের ছেলেটাকে কোলে নিয়ে ছাদে ওঠে অথচ গত কারফিউর পর যাকে একদিনও দেখেনি। আজ সেও ছাদে এসে দাঁড়িয়েছিল। কোলে তার ছেলে। পাশে প্রৌঢ়া শাশুড়ী। মাঝে মাঝে রেলিং-এর উপর ঈষৎ ঝুঁকে সে নীচের খালি রাস্তায় টহলদানরত ভারী ট্রাকগুলো দেখছিল। ঊনিশ তারিখ রাতে আবার কারফিউ ভেঙ্গে মিছিল বেরুল। ধন্য আমার দেশ, ধন্য আমার দেশের সংগ্রামী মানুষ।
বিশ তারিখ রাতে কিছুতেই ঘুম এলো না। রাত দুটোর সময় প্রথম একটা দল প্রভাত ফেরী গাইতে গাইতে রাস্তা দিয়ে গেল। তারপর অনেক, অনেক… । মনে হল ওরা গাইতে গাইতে রাত্রির অন্ধকার বুক চিরে আগুনের ফুল ফোটাবে।
আজকের কাগজে একুশের মিছিলের পাশে হেডিং এসেছে ‘আইয়ুব প্রার্থী হবে না।’ শক্তিমদমত্ত আইয়ুবকে মাথা নোয়াতে হলো সংগ্রামী মানুষের আন্দোলনের সামনে।
২২শে ফেব্রুয়ারি।
পিছনের গেটটা সশব্দে বন্ধ হয়ে গেল। আমরা রাজবন্দীদের আর একটা দল জেলের বাইরে মুক্তির সীমানায় পা ফেললাম। সামনে জনতার মিছিল— মিছিল নয়, যেন জনতার সমুদ্র। এই জনতাসমুদ্রের তরঙ্গাঘাতে ভেসে গেছে আইয়ুবী নিপীড়নের বেড়ি।
আমরা এসেছিলাম একা— যাচ্ছি মিছিলে। শতকোটি মানুষ আজ একটি মাত্র মিছিলে শামিল। সারা দেশে যেন একটা বিরাট মিছিল।
আমরা সবাই মিছিলে পা ফেলে এগুলাম। আমরা ফিরে যাচ্ছি জনতার মধ্যে, আত্মীয় পরিজনের সান্নিধ্যে। অগনিত জনতা আমাদের মিছিল করে নিয়ে যাচ্ছে শহীদ মিনারে, তারপর পল্টন ময়দানে। সবখানে শুধু সভা, শুধু সম্বর্ধনা। ‘জনসমুদ্রে জেগেছে জোয়ার।’ কোথাও বিধি নিষেধের বেড়ি নেই— নেই প্রতিরোধের জঞ্জাল। মিছিলের হাজার হাজার অপরিচিত মুখ, কিন্তু নেই অপরিচয়ের ব্যবধান। গত বাইশ বছরে জনতা যা বলতে পারে নি, হয়ত বুঝতেও পারে নি, আর সব কথা বলতে চায়, সব কথা বুঝে ফেলেছে তারা। কে রোধ করবে তাদের কন্ঠ? ‘এই যৌবন জলতরঙ্গ রুধিবি কি দিয়া বালির বাঁধ।’ আজ হোক কাল হোক, এই জনস্রোতধারা খুঁজে নেবেই তাদের পরম মুক্তির মোহনা।
আমরা ফিরে যাচ্ছি মুক্ত আলো হাওয়ার জগতে। কি দুঃসহ তীব্র আনন্দ। অথচ এর পেছনে রয়েছে কি অপার, কি দুঃসহ বেদনা। আমরা ফিরে যাচ্ছি কিন্তু ফিরবে না আসাদ, রুস্তম, মতিউর, জহুরুল হক, ডা. শামসুজ্জোহা এবং নাম জানা না জানা আরও অনেকে— যাদের প্রাণের বিনিময়ে আমরা মুক্তি পেলাম, যারা প্রাণের মূল্যে শোধ করল দেশ মাতৃকার কাছে তাদের জন্ম-ঋণ।”
১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি আওয়ামী লীগের কৃষিবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বে নিযুক্ত হন এবং সাফল্যের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। নিজের রাজনৈতিক দক্ষতা-যোগ্যতায় তিন দফায় গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ মেয়াদে তিনি কৃষি, খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। এরপর এ নিয়ে আরও দু’দফায় তিনি মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীন বাংলাদেশে কৃষি অর্থনীতির প্রাযুক্তিকীকরণ, কৃষকের জন্য যথাসময়ে উন্নত বীজ, সার, কীটনাশক, বিদ্যুৎ, সেচের পানি সহ যাবতীয় কৃষি উপকরণ তিনি নিশ্চিত করেছিলেন। কৃষক যেন ভর্তুকির অর্থ সরাসরি পায় এবং উৎপাদিত কৃষি পণ্যের বাজার দর ঠিকঠাক পায় সে ব্যবস্থাও করেছিলেন। তিনি কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকাকালে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে এবং তাঁর সুযোগ্য পরিচালনায় দেশ মঙ্গামুক্ত হয়। বিএনপি-জামাত সরকারের সময় দেশে সারের জন্য ঘৃণ্য কৃষক হত্যাকাণ্ডের্ মতো ঘটনাকে তিনি সমাধিস্থ করে দেন। নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে শেরপুর-২ আসন থেকে নির্বাচিত হন। এর আগেও তিনি দু’বার একই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১২ জানুয়ারি ২০২৩ থেকে বিলুপ্তির আগ পর্যন্ত তিনি জাতীয় সংসদের সংসদ উপনেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী মতিয়া চৌধুরীকে মহান মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য ২০২১ খ্রিস্টাব্দে বাংলা একাডেমি সম্মানসূচক ফেলোশিপ প্রদান করে।
জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের কালপর্ব ষাটের দশকের শুরু থেকে বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, ছেষট্টির ছয় দফা ভিত্তিক স্বায়ত্তশাসন আন্দোলন, ঊনসত্তরের মহান গণঅভ্যুত্থান, সত্তরের ঐতিহাসিক নির্বাচন, একাত্তরের মহত্তর মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীন বাংলাদেশে সামরিক শাসন বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক সংগ্রামী রাজনীতিক বেগম মতিয়া চৌধুরী সততা, সাহস ও সংগ্রামের এক অনন্য প্রতীক। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে প্রবাদতুল্য এই মহান মানুষটি এতোটাই স্পষ্টভাষী ছিলেন যে, রাজনৈতিক অঙ্গনে তিনি খ্যাত হন ‘অগ্নিকন্যা’ অভিধায়।
আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনসহ জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের প্রতিটি পর্বে তাঁর তেজস্বী অভিব্যক্তি তাঁকে ‘অগ্নিকন্যা’ রূপে জনমনে প্রতিভাসিত করেছে। স্বাধীন বাংলাদেশে স্বৈরাচার বিরোধী প্রগতিশীল-গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তিনি আমাদের কাছে ছিলেন সেই অগ্নিস্ফুলিঙ্গের ন্যায়, যেখানে ‘একটি স্ফুলিঙ্গই দাবানল সৃষ্টি করতে পারে।’
লেখক: মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষক।
ইমেইল: [email protected]