অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইনে করা মামলার কার্যক্রম বাতিল চেয়ে আনা আবেদন খারিজের বিরুদ্ধে ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ গ্রামীণ টেলিকমের কর্মকর্তাদের আপিল করার অনুমতি দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
এ সংক্রান্ত ‘লিভ টু আপিল’ মঞ্জুর করে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপিল বিভাগ বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আপিলের সারসংক্ষেপ জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে শুনানির জন্য আগামী ১৯ নভেম্বর তারিখ ধার্য করে আদেশ দেয় সর্বোচ্চ আদালত।
আদালতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী আবদুল্লাহ-আল-মামুন। রাষ্ট্র পক্ষে শুনানি করেন এটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
এই মামলায় ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছাড়া অন্য ছয় আপিলকারী হলেন গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল ইসলাম, পরিচালক আশরাফুল হাসান, নাজনীন সুলতানা, শাহজাহান, নূরজাহান বেগম ও এস এম হাজ্জাতুল ইসলাম লতিফী।
ড. ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ-আল-মামুন সাংবাদিকদের বলেন, “মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে করা মামলার কার্যক্রম বাতিল (ডিসচার্জ) আবেদন করি বিচারিক আদালতে। আমাদের আবেদন নামঞ্জুর করে গত ১২ জুন চার্জ গঠন করে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর তারিখ ১৫ জুলাই ধার্য করা হয়। আমরা আমাদের ডিসচার্জ আবেদন খারিজের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করি।
“গত ২৪ জুলাই হাইকোর্ট এই মামলার কার্যক্রম বাতিল চেয়ে আনা আবেদন খারিজ করে দেন। সেই সাথে এক বছরের মধ্যে এই মামলার বিচার শেষ করতে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ –এর প্রতি নির্দেশ দেন। আমরা এ আদেশের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী সময়ের মধ্যে তিনটি গ্রাউন্ডে লিভ টু আপিল দায়ের করি।”
তিনি বলেন, “এক পর্যায়ে মামলাটি নিম্ন আদালতে ৫ আগস্ট সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য ছিল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার বিপ্লব ও গণঅভ্যুত্থানে ওইদিন বিগত সরকারের পতন হয়। ওইদিন বিচারিক আদালতের কার্যক্রম পরিচালিত হয়নি। পরদিন আমরা আদালতে যাই। আদালত ৫ সেপ্টেম্বর সাক্ষ্য নেওয়ার দিন ধার্য করেন। কিন্তু আমাদের না জানিয়ে দুদক মামলাটি প্রত্যাহারে আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেছে।
“মামলাটি প্রত্যাহার অবৈধ ও আইনসঙ্গত ভাবে হয়নি। তাছাড়া নোবেলজয়ী ড. ইউনূস অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, তাই এখানে প্রভাব খাটানো হতে পারে বলে মনে করা হতে পারে। আমরা আইন অনুযায়ী এ মামলাটি মোকাবেলা করব। এটা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার।”
“আপিল বিভাগ আজ (সোমবার) তিনটি গ্রাউন্ডে আমাদের লিভ টু আপিল মঞ্জুর করে আদেশ দেন” বলেন ব্যারিস্টার মামুন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে গত বছরের ৩০ মে মামলাটি করেন। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, আসামিরা ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। অবৈধভাবে অর্থ স্থানান্তর করা হয়েছে, যা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে অপরাধ।
গত ১২ জুন ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে এই মামলায় অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারক। সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ১৫ জুলাই দিন ধার্য রাখেন। এক পর্যায়ে অভিযোগ গঠনের আদেশ নিয়ে প্রশ্ন তুলে মামলার কার্যক্রম বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন ড. ইউনূসসহ গ্রামীণ টেলিকমের শীর্ষ সাত কর্মকর্তা। এই আবেদন গত ২৪ জুলাই খারিজ করে দেয় হাইকোর্ট।
তথ্যসূত্র : বাসস