Beta
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪
Beta
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪
মধ্যপ্রাচ্য কি যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলের সমীকরনের বাইরে চলে যাচ্ছে

ইরান-সৌদি আরব সম্পর্কে নতুন মোড়

Saudi_Iran_0
[publishpress_authors_box]

এক বছর আগে ইসরায়েলে হামাসের হামলা শুধু সৌদি-ইসরায়েল সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রক্রিয়াকেই থমকে দেয়নি বরং সৌদি আরবকে ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার দিকেও ঠেলে দিচ্ছে।

গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার আগে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল সৌদি আরব। আর এখন সৌদি সরকার তার পুরনো শত্রু ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করছে।

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল-সৌদি সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চুক্তি হলে তা হত এক যুগান্তকারী ঘটনা। ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পাশাপাশি এই চুক্তি সৌদি আরবকে আরও দৃঢ়ভাবে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল বলয়ে নিয়ে যেত।

কিন্তু এতে ফিলিস্তিন ইস্যুতে দেওয়া ইসরায়েলের প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন না হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হত। স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়টি আড়ালে চলে যেতে। সেই শঙ্কা থেকেই গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় হামাস।

এ ছাড়া ওই চুক্তি মধ্যপ্রাচ্যকে মৌলিকভাবে বদলে দিত এবং ইরান ও তার মিত্রদের আরো একঘরে করে ফেলতো। ইরানকে একঘরে করার এই প্রচেষ্টা যুক্তরাষ্ট্র শুরু করে ২০২০ সালের আব্রাহাম অ্যাকর্ডের মধ্য দিয়ে।

আব্রাহাম চুক্তির মাধ্যমে ইসরায়েলের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), বাহরাইন, মরক্কো ও সুদানের মধ্যে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করা হয়। সেসময় যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতায় ছিল রিপাবলিকান পার্টি আর প্রেসিডেন্ট ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

২০২১ সালে ক্ষমতায় আসা ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও আব্রাহাম চুক্তিকে শক্তিশালী করার জন্য বিনিয়োগ করেন এবং অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্কের পাশাপাশি সামরিক সম্পর্কও জোরদারের চেষ্টা করেন।

২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে ওয়াশিংটন ও তেল আবিব আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠে যে, তারা তাদের লক্ষ্য অর্জনের পথে রয়েছে এবং সৌদি আরবকেও সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে রাজি করানো যাবে।

এই পটভূমিতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে তার নতুন মধ্যপ্রাচ্য পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন।

ওই পরিকল্পনায় ‘নতুন মধ্যপ্রাচ্য’ শিরোনামের একটি মানচিত্র ছিল, যেখানে ইসরায়েলকে জর্ডান নদী থেকে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত চিত্রিত করা হয়েছে এবং ফিলিস্তিনের কোনও চিহ্নও রাখা হয়নি। মানচিত্রটিতে ইরান ও তার মিত্রদেরকে কালো কালিতে চিহ্নিত করে প্রধান শত্রু হিসাবে দেখানো হয়।

নেতানিয়াহু সেদিন আব্রাহাম চুক্তির অংশ হিসাবে ভারত-মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপ অর্থনৈতিক করিডোরের মানচিত্রও তুলে ধরেন। এটি মূলত চীনের বিআরআই প্রকল্পের পাল্টা একটি প্রকল্প হিসাবে বাস্তবায়ন করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়া সৌদি আরবের সঙ্গে ইসরায়েলের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনও এর লক্ষ্য।

নেতানিয়াহু সেদিন জোর গলায় বলেছিলেন, সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পথে ফিলিস্তিনের কোনও বাধা হিসাবে থাকা উচিৎ নয়। নতুন মধ্যপ্রাচ্যের ওই মানচিত্র দেখানোর দুই সপ্তাহের মধ্যেই ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায় হামাস।

হামাসের ওই হামলার জেরে গাজায় এক ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ শুরু করে ইসরায়েল। এক বছর ধরে গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর পর গত মাসে লেবাননেও আগ্রাসন চালায়। লক্ষ্য ইরান সমর্থিত লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহকে ধ্বংস করা।

কিন্তু হিজবুল্লাহর ওপর হামলার জেরে ইরানের সঙ্গেও সংঘাতের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। ফলে পুরো মধ্যপ্রাচ্যজুড়েই যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমন পরিপ্রেক্ষিতে সৌদি আরব তার নিজের এবং যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলেরও শত্রু ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার দিকে হাঁটছে।

সম্প্রতি নিউইয়র্ক টাইমসের এক বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদনে বলা হয়, এর ফলে সৌদি-ইসরায়েল সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চুক্তি এখন আরও দূরে সরে যাচ্ছে। এমনকি হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে হত্যার পর সেই চুক্তি এখন নিরাশার দোলাচলে। কারণ এর ফলে একটি শান্তি চুক্তির লক্ষ্যে দ্রুত আলোচনা শুরুর বিষয়টি সব মহলে গুরুত্ব পাচ্ছে।

অন্যদিকে সৌদি আরব তার পুরনো শত্রু ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পাশাপাশি জোরালো কন্ঠে বলছে, যে কোনো কূটনৈতিক চুক্তি তথা সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আগে ইসরায়েলকে অবশ্যই ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে মেনে নিতে হবে। সৌদি আরবের জন্য এটা একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন।

মধ্যপ্রাচ্যে এই মুহূর্তে বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে বৈরিতার অবসান ঘটছে। তবে নিশ্চিতভাবেই সেটা ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যেভাবে পরিকল্পনা করেছিলেন, সেভাবে ঘটছে না। তিনি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বরাবরই বলে আসছেন যে, সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে তার প্রশাসন রিয়াদের সঙ্গে চুক্তি করতে যাচ্ছে। কিন্তু তা এখনো অধরাই রয়ে গেছে।

চলতি মাসেই সৌদি আরবসহ উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা প্রথমবারের মতো ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এর আগে কখনো এমন বৈঠক হয়নি। এই উদ্যোগ এখনও নড়বড়ে এবং প্রাথমিক স্তরে রয়েছে। তবে এটি সফল হলে ইরানের সঙ্গে উপসাগরীয় দেশগুলোর ধর্মীয় বৈরিতা দূর এবং সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে বিগত কয়েক দশকে যে রক্তপাত হয়েছে তা বন্ধ করারও সুযোগ সৃষ্টি করবে।

সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান (ডানদিকে) গত ৯ অক্টোবর সৌদি আরবের রিয়াদে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচির সঙ্গে দেখা করেন। সৌদি ও ইরানের কর্মকর্তারা এক মাসে তিনবার বৈঠক করেছেন।

ওই বৈঠকের পর থেকেই তেহরানের কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। সৌদি আরব সফর করেছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি। সফর করেছেন ইরাক ও ওমানেও। যার লক্ষ্য ইরানের সঙ্গে দেশগুলোর উত্তেজনা কমানো। এ ছাড়াও তিনি, জর্ডান, মিশর ও তুরস্কও সফর করেছেন। ইরানি সংবাদ মাধ্যম ‘ইরনা’ জানিয়েছে, গত ১২ বছরের মধ্যে এই প্রথম কোনো ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিশর সফর করলেন।

সৌদি আরব প্রথমবারের মতো লোহিত সাগরে ইরানের সঙ্গে যৌথ সামরিক মহড়ার প্রস্তাবও দিয়েছে। এর মধ্যেই গত বুধবার টাইমস অব ইসরায়েল জানায়, সৌদি আরব ও ইরান সম্প্রতি ওমান সাগরে সফল একটি যৌথ নৌ-মহড়ায় অংশ নিয়েছে।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু যখন বারবার স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি অস্বীকার করছেন, তখন সৌদি কর্মকর্তারা গণমাধ্যম ও কূটনৈতিক ফোরামসহ সব জায়গাতেই দুই রাষ্ট্র সমাধানের বিষয়টি তুলছেন। আরব বিশ্বের নেতা হিসেবে পরিচিত সৌদি আরবের বক্তব্য স্পষ্ট। আর তা হলো, ইসরায়েল যদি সৌদিকে পাশে পেতে চায় তাহলে একমাত্র পথ হলো-স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং তাকে স্বীকৃতি দেওয়া।

গাজার ধ্বংসস্তূপের নিচে জীবন্ত চাপা পড়া শিশুদের ছবি, মৃত সন্তানের সামনে মায়েদের আহাজারি এবং ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের জন্য খাদ্য প্রবেশে ইসরায়েলের বাধাদানের চিত্র— এর সব কিছুই সৌদি আরবের নেতৃত্বকে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকে উপেক্ষা করা অসম্ভব করে তুলেছে।

সৌদি ব্যবসায়ী ও রাজ পরিবারের ঘনিষ্ঠ এবং নিওম প্রকল্পের উপদেষ্টা বোর্ডের সদস্য আলি শিহাবি বলেন, “গাজা যুদ্ধের ফলে এই অঞ্চলে ইসরায়েলের অঙ্গীভূত হওয়ার তথা স্বীকৃতির বিষয়টি পিছিয়ে গেল।”

তিনি আরও বলেন, “সৌদি আরব দেখছে যে, গাজা যুদ্ধের পর থেকে ইসরায়েলের সঙ্গে যে কোনও সম্পর্ক আরও বিষাক্ত হয়ে উঠেছে। ইসরায়েলিরা যদি তাদের অবস্থান পরিবর্তন না করে এবং একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সত্যিকারের প্রতিশ্রুতি না দেয়, তাহলে এই অবস্থা খুব একটা বদলাবে না।”

তবে সৌদি আরব ও এর উপসাগরীয় মিত্ররা ইরানের কূটনৈতিক পদক্ষেপের আন্তরিকতা নিয়ে এখনও সন্দিহান। কারণ, ইরান হামাস ও হিজবুল্লাহর পাশাপাশি ইয়েমেনের হুতিদেরও অস্ত্র সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে, যারা একসময় সৌদি আরবে হামলা করেছিল।

তবে আলি শিহাব মনে করছেন, এটা তেহরান ও রিয়াদের সম্পর্কে তেমন কোনও বড় বাধা হবে না। তিনি বলেন, “ইরানিরা রিয়াদের দিকে হাত বাড়ালে সৌদি নেতৃত্ব তা কখনও ফিরিয়ে দেবে না। আর ইরান যদি সত্যিই আন্তরিক হয়, সেটি হবে মধ্যপ্রাচ্যের সত্যিকারের পুনর্গঠন।”

সৌদি আরব ও ইরান দীর্ঘকাল ধরে মধ্যপ্রাচ্যে আধিপত্যের লড়াই করে চলেছে। সেই লড়াইয়ের অবসান ঘটলে তা হবে মধ্যপ্রাচ্যের সত্যিকার নতুনভাবে গড়ে ওঠা।

আলি শিহাবির মতো সৌদি রাজপরিবাবের ঘনিষ্ঠ অনেকেই মনে করেন, সৌদি আরবে গণতন্ত্র না থাকলেও যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান জনমতের ব্যাপারে খুবই স্পর্শকাতর। আর গত এক বছরে ইসরায়েলের প্রতি সৌদি আরবের জনমত অনেকটাই কঠোর হয়ে উঠেছে।

পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর জনসংখ্যার একটা বড় অংশই এখন তরুণ। এই অঞ্চলের দেশগুলোর তরুণরা প্রতিনিয়তই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের নির্মম চিত্র দেখতে পাচ্ছেন। এতে সৌদি-ইসরায়েল চুক্তির প্রতি তাদের মনে যে সামান্য ইতিবাচক মনোভাব ছিল তাও উবে গেছে।

গত বছরের ৭ অক্টোবরের আগের মাসগুলোতে সৌদি আরব ইসরায়েলের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষরের পরিকল্পনা করছিল। বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রিয়াদের একটি বড় প্রতিরক্ষা চুক্তি ও বেসামরিক পারমাণবিক সহায়তা চুক্তি হওয়ার কথা ছিল।

রিয়াদ দীর্ঘদিন ধরেই দ্বি-রাষ্ট্রিক সমাধানের ব্যাপারে সোচ্চার ছিল। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সৌদি আরবের পররাষ্ট্রনীতিতে বিষয়টি কম অগ্রাধিকার পেয়েছে। এই সময়ে ক্রাউন প্রিন্স তার ক্ষমতাকে দৃঢ় করেন এবং জাতির আঞ্চলিক ও দেশীয় নীতিগুলোকে নতুন আকার দেন।

জাতিসংঘের নেতানিয়াহুর নতুন মধ্যপ্রাচ্যের মানচিত্র প্রদর্শন।

সৌদি আরব ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা ভাবছিল মূলত নিজের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য। আর সৌদি যুবরাজের উচ্চাকাঙ্খী অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক জরুরি।

ফলে,গত বছর সৌদি আরব যখন ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়ে আলোচনা শুরু করে, তখন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়টি শর্ত হিসেবে তোলেনি।

তবে প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বাধীন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) ক্ষমতা বাড়াতে ইসরায়েলের কার্যকর পদক্ষেপের দাবি জানায় সৌদি আরব। আর দ্বি-রাষ্ট্রিক সমাধানের জন্য অন্তত আলোচনার দরজা খোলার দাবি করে।

কিন্তু গাজার পরিস্থিতি সৌদি আরবকে সেই দোটানা থেকে বের করে নিয়ে এসেছে। সম্প্রতি সৌদি যুবরাজ ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলেছেন। রিয়াদের নতুন এই দাবি নিয়ে তাকে বেশ সোচ্চার দেখা যায়।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর উপদেষ্টা পরিষদে দেয়া এক ভাষণে তিনি বলেন, “সৌদি আরব পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা বন্ধ করবে না। এবং আমরা নিশ্চিত করছি যে, সৌদি আরব ইসরায়েলের সঙ্গে এটি ছাড়া কোনও কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করবে না।’ একই ধরনের ভাষণ তিনি দিয়েছিলেন ইউএস স্টেট অব দ্য ইউনিয়নে।

গত মাসে ইরানের সঙ্গে উপসাগরীয় দেশগুলোর বৈঠক এমন এক সময় অনুষ্ঠিত হয়, যার মাত্র কয়েক দিন আগেই তেহরান ইসরায়েলে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিল। গত ১ অক্টোবরের ওই হামলায় ইরান প্রায় ১৮০টি ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের দিকে ছোঁড়ে।

গত ২৭ সেপ্টম্বর হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যা এবং তার আগে গত ৩১ জুলাই হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়াকে গুপ্তহত্যার জবাবে এই হামলা চালায় ইরান।

ওমান সাগরে সৌদি-ইরান সামিরক মহড়া।

পর্যবেক্ষকরা অবশ্য, গত এক মাসে হিজবুল্লাহর বেশিরভাগ শীর্ষ নেতৃত্ব নিহত হওয়ার কারণেই ইরান এখন উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক গলানোর জন্য বেশি আগ্রহী হয়েছে কিনা, তাও ভাবছেন।

কারণ হিজবুল্লাহ দীর্ঘকাল ধরে ইরানের সবচেয়ে শক্তিশালী মিত্র এবং মধ্যপ্রাচ্যে তার শক্তি প্রদর্শনের মূল উপায় ছিল যাদেরকে ইসরায়েলও ভয় পেত। হিজবুল্লাহর ওপর ইসরায়েলের ভয়াবহ হামলা ইরানের জন্য একটি বড় ধাক্কা। হিজবুল্লাহ ছাড়া তেহরান মধ্যপ্রাচ্যে অনেক দুর্বল হয়ে পড়বে।

গাজায় চলমান যুদ্ধ আব্রাহাম চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলোকেও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের জন্য কথা বলা শুরু করতে বাধ্য করেছে। কারণ, তারাও নিজ নিজ দেশের জনমত নিয়ে উদ্বিগ্ন। সংযুক্ত আরব আমিরাত গত কয়েক বছর ধরেই ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখেছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এই সম্পর্কও ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে পড়েছে।

এজন্যই গত মাসে গাজা যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর গাজার পুনর্নির্মাণে হাত লাগানোর জন্য ইসরায়েলের আহ্বানে আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ বিন জায়েদ বলেন, যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর গাজা পুনর্নির্মাণের ভার ইসরাইলের কাঁধেও বর্তাবে। তিনি বলেন, “সংযুক্ত আরব আমিরাত স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া গাজা যুদ্ধের পরবর্তী কাজে সহায়তা করতে প্রস্তুত নয়।”

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু রিয়াদের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরের কাজ এগিয়ে চলেছে বলে দাবি করলেও সৌদিরা বিষয়টি একপ্রকার স্থগিতই করে রেখেছেন। সৌদিরা এর জন্য দেশের জনমতের বিভাজনকে সামনে তুলে ধরছেন।

শিহাবি বলেন, “আব্রাহাম চুক্তি ছিল অনেকটা কসমেটিকসের মতো। একটি বাস্তব, স্থায়ী আঞ্চলিক শান্তি চুক্তির জন্য এর মধ্যে কোনও সারবত্তা বা উল্লেখযোগ্য কিছুই ছিল না। যেসব রাষ্ট্র চুক্তিটিতে স্বাক্ষর করেছে তারা তা করেছে কারণ তারা ইসরায়েলকে ওয়াশিংটনে প্রভাব বিস্তারের পথ হিসেবে দেখে।

“কিন্তু এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি যে ইসরায়েলের উপর যুক্তরাষ্ট্রের কোনও ক্ষমতা বা নিয়ন্ত্রণ নেই— অপমানজনক মাত্রায়। এবং ইসরায়েলিদের একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনেরও কোনও ইচ্ছা নেই।”

তথ্যসূত্র: নিউ ইয়র্ক টাইমস, এএফপি, সিএনএন

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত