৮ দফা দাবি আদায়ে চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠে মহাসমাবেশ করেছে বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ। দাবি আদায় না হলে ভবিষ্যতে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে মহাসমাবেশ থেকে।
এ কর্মসূচির পালনে শুক্রবার দুপুর থেকেই লালদীঘি মাঠে জড়ো হতে থাকেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। চট্টগ্রাম এবং আশপাশের জেলা থেকে হিন্দুরা এতে অংশ নেন। একপর্যায়ে মাঠ উপচে আশপাশের এলাকা লোকারণ্য হয়ে পড়ে।
মহাসমাবেশে হিন্দু ধর্মালম্বীদের নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদ করার কড়া প্রতিবাদ জানান বক্তারা। এছাড়া বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শুধু হিন্দু ধর্মাবলম্বী হওয়ার কারণে শিক্ষকদের জোরপূর্বক পদত্যাগ এবং পুলিশের এসআই পদ থেকে বাতিলের ঘটনায়ও নিন্দা জানানো হয়।
৮ দফা দাবি আদায়ে মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়ে বক্তারা বলেন, আট দফা দাবি পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থেকে লড়াই চলবে। প্রয়োজনে প্রতিটি বিভাগে মহাসমাবেশ হবে, জেলায় জেলায় সমাবেশের পর প্রয়োজনে ঢাকা অভিমুখে ‘লং মার্চ’ করা হবে।
মহাসমাবেশে পুন্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস বলেন, “আমাদের যতবেশি নির্যাতন করা হবে, আমরা তত বেশ এক হবো। এই ঐক্য বাংলাদেশের স্বাধীনতা থেকে শুরু করে বাংলার কৃষ্টি কালচারের ঐক্য। এই ঐক্য কোনোভাবে খণ্ডিত করা যাবে না।”
৮ দফা দাবি আদায়ে এরই মধ্যে ১৯ সদস্যের সমন্বয়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস বলেন, “আমরা এই দেশের ভূমিপূত্র। আমাদেরকে উচ্ছেদ যারা করতে চায় তাদেরকে কোনও গণতন্ত্রকামী শক্তি প্রশ্রয় দিতে পারে না। আর উচ্ছেদ করে দেশে শান্তিতে থাকতে চাইলে এটা আফগানিস্তান-সিরিয়া হবে, গণতান্ত্রিক শক্তি থাকবে না, সাম্প্রদায়িকতার অভয়ারণ্য হবে।”
তিনি অভিযোগ করেন, সংখ্যালঘু পরিচয়ে ৯৩ জন হিন্দুকে পুলিশের চাকরি থেকে অব্যাহিত দেওয়া হয়েছে। ভেটেরিনারি, চবিতে হিন্দুদের শনাক্ত করা হচ্ছে।
অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস আরও বলেন, “যারা রাজনীতি করে না, মানবতার কথা বলছে, তাদেরকে মামলার আসামি করা হচ্ছে। সংখ্যানুপাতিক হারে হিন্দুদের সংসদে আসন বিন্যাস করতে হবে। প্রয়োজনে ভোট বর্জন করব, গণতন্ত্রের নামে প্রহসন চাই না।”
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ১৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের মধ্যে মাত্র ২০০ কোটির মতো টাকা সংখ্যালঘুদের জন্য কেন এমন প্রশ্নও তোলেন তিনি।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজায় ছুটি এবার এক দিন বাড়িয়ে দুই দিন করা হয়েছে।
মহাসমাবেশে বক্তারা এ প্রসঙ্গ টেনে বলেন, তারা চেয়েছেন পাঁচ দিনের ছুটি। সেখানে দুই দিন কেন?
“যে বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে এদেশের ছাত্র-জনতা প্রাণ দিয়েছে সেখানে আবার বৈষম্য হবে কেন”, বলেন এক বক্তা।
সনাতন জাগরণ মঞ্চের ৮ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে সংখ্যালঘু নির্যাতনে বিচারের জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দোষীদের দ্রুততম সময়ে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া, ক্ষতিগ্রস্তদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়া ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা।
অনতিবিলম্বে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রনয়ণ করা। সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন করা। হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে হিন্দু ফাউন্ডেশনে উন্নীত করা। পাশাপাশি বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকেও ফাউন্ডেশনে উন্নীত করা।
‘দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন এবং অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন’ যথাযথ বাস্তবায়ন।
প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংখ্যালঘুদের জন্য উপাসনালয় তৈরি এবং প্রতিটি হোস্টেলে প্রার্থনাঘর বরাদ্দ করা। সংস্কৃত ও পালি শিক্ষা বোর্ড আধুনিকায়ন করা। শারদীয় দুর্গাপূজায় পাঁচ দিন ছুটি দেওয়া।