নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক নাট্যনির্দেশক ও শিক্ষক সৈয়দ জামিল আহমেদ আবারও সংস্কৃতি খাতে সরকারের অপ্রতুল বাজেট নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
প্রতিবছর দেশের অর্থনীতিতে বাজেটের পরিমাণ বাড়লেও বরাবরই অবহেলিত সংস্কৃতিখাত। বছরের পর বছর সংস্কৃতিকর্মীরা এ খাতে বাজেট এর পরিমান পর্যাপ্ত পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য অতীতের সরকারগুলোর কাছে আবেদন করেও ফল পায়নি। শিল্পকলা প্রধানের দায়িত্বে যোগ দেয়ার পর প্রায় প্রতিটি সভা-সেমিনারেই এই বাজেট বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছেন সৈয়দ জামিল আহমেদ।
সাম্প্রতিক গণভ্যুত্থান পরবর্তী দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের ব্যবস্থাপনায় শুরু হয়েছে ‘যাত্রা উৎসব ২০২৪’।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৬ টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্ত মঞ্চে শুরু হয় ৭ দিনব্যাপী উৎসবের প্রথম দিনের আয়োজন।
উদ্বোধনী আয়োজনে সভাপতির বক্তব্যে সৈয়দ জামিল বলেন, “জাতীয় বাজেট যেখানে প্রায় ৮ লাখ কোটি টাকা সেখানে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ কেবল ৭৭৮ কোটি টাকা। সংস্কৃতি খাতে এতো স্বল্প বাজেট কেন?”
এর আগে গত ১৭ অক্টোবর তিনদিনব্যাপী লালন স্মরণোৎসবেও নিজের বক্তৃতায় তিনি বলেন, “শিল্পকলা যেন সংস্কৃতি চর্চার কেন্দ্রীয় জায়গায় মূল ভূমিকা পালন করতে পারে, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। এর জন্য সরকারের জাতীয় বাজেটের ৩ ভাগ যেন সংস্কৃতি খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়।”
অনুষ্ঠানে আলোচনা পর্বের শুরুতে বক্তব্য দেন নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের পরিচালক ফয়েজ জহির। উপস্থিত বিপুল দর্শককে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, “সকলের সহযোগিতায় এই উৱসব আমরা সারাদেশে যেন ছড়িয়ে দিতে পারি। যাত্রাশিল্পসহ শিল্পকলার সকল মাধ্যমকে প্রবাহিতভাবে বেগবান করার সময় এসেছে।”
প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী ইসরাফিল মজুমদার।
বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন বিশিষ্ট যাত্রা শিল্পী অনিমা দে। এছাড়াও বক্তব্য দেন যাত্রাশিল্পী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম এ মান্নান।
অনুষ্ঠানে সৈয়দ জামিল আহমেদ আরও বলেন, “শিল্পকলা একাডেমি মনে করে, শিল্পচর্চা জনজীবনের কেন্দ্রে অবস্থিত। শিল্পচর্চার অন্যতম মাধ্যম হিসেবে এবং গ্রামীণ জনসাধারণের বিনোদনের ঐতিহ্য বিবেচনায় আমরা এই যাত্রাপালার আয়োজন করেছি। আমরা চাই, আপনারা সবাই যাত্রা শিল্পীদের পাশে থাকুন।”
এদিকে, সাতদিনব্যাপী যাত্রা উৎসবের প্রথমদিন হাজারো মানুষের উপস্থিতি ছিল।
আলোচনা পর্বের পর শুরু হয় প্রথম দিনের যাত্রাপালা ‘নিহত গোলাপ’ এর পরিবেশনা। যাত্রাদল সুরুভী অপেরা-র পালায় নির্দেশনা দিয়েছেন কবির খান, পালাকার ছিলেন আগন্তক।
উদ্বোধনী আয়োজনে পরিবারসহ যাত্রাপালা উপভোগ করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
পরবর্তী আয়োজনে শনিবার নিউ শামীম নাট্য সংস্থার ‘আনারকলি’, রোববার বঙ্গবাণী অপেরার ‘মেঘে ঢাকা তারা’, সোমবার নর-নারায়ণ অপেরার ‘লালন ফকির’, মঙ্গলবার বন্ধু অপেরার ‘আপন দুলাল’; বুধবার শারমিন অপেরার ‘ফুলন দেবী’ এবং বৃহস্পতিবার যাত্রাবন্ধু অপেরার ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ পালাগুলো অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত পালা পরিবেশিত হবে।