শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণ দেখিয়ে সারদা পুলিশ একাডেমিতে প্রশিক্ষণরত ৪০তম এসআই ক্যাডেট ব্যাচের আরও ৫৮ প্রশিক্ষণার্থীকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
সোমবার দুপুরে তাদের অব্যাহতিপত্র দেওয়া হয়েছে বলে সকাল সন্ধ্যাকে নিশ্চিত করেছেন অব্যাহতি পাওয়া একজন প্রশিক্ষণার্থী।
পরে পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগরও সকাল সন্ধ্যাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নাশতা না খেয়ে হইচই করে মাঠের মধ্যে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টির কারণ দেখিয়ে সারদা পুলিশ একাডেমিতে প্রশিক্ষণরত ২৫২ ক্যাডেট এসআইকে গত ২১ অক্টোবর অব্যাহতি দেওয়া হয়।
এরপর ২১ ও ২৪ অক্টোবর দুই দফায় ৫৯ জনকে শোকজ লেটার দেওয়ার কথা জানায় সারদা পুলিশ একাডেমি।
তবে সোমবার অব্যাহতিপত্র পাওয়া প্রশিক্ষণার্থীরা জানিয়েছেন, ৫৯ জন নয়, ৫৮ জনকে শোকজ লেটার দেওয়া হয়েছিল। একজনের নাম দুবার আসায় ৫৯ জন বলা হয়েছিল। প্রকৃত সংখ্যাটি ৫৮ হবে।
সেই ৫৮ জনকেই সোমবার অব্যাহতিপত্র দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।
অব্যাহতিপত্রে বলা হয়েছে, “আপনি বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি সারদা, রাজশাহীতে ৪০তম ক্যাডেট এসআই/২০২৩ ব্যাচে গত ৫/১১/২০২৩ খ্রিঃ হতে এক বছর মেয়াদি মৌলিক প্রশিক্ষণরত আছেন।
“গত ১৬ অক্টোবর জিমনেসিয়ামে সন্ধ্যাকালীন ক্লাসে ক্যাডেট এসআইদের “Experience Sharing in Order to face Political Aimed” বিষয়ে অতিথি বক্তা হিসাবে বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির সাবেক প্রিন্সিপাল মো. নাজিবুর রহমান, এনডিসি মহোদয়ের ক্লাস ছিল। উক্ত ক্লাসে ক্যাডেট এসআই প্রশিক্ষণার্থীদের শৃঙ্খলা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অতিথি বক্তার সহযোগী প্রশিক্ষক হিসেবে পুলিশ পরিদর্শক শিশির কুমার চক্রবর্তী, মো. আব্দুল বারী, মো. মাহাবুব উল্লাহ ও রাজিব কুমার কুন্ডু উপস্থিত ছিলেন।
“অতিথি বক্তা ক্লাসে উপস্থিত হওয়ার পূর্বে সিটে বসার সময় আপনি শৃঙ্খলার সাথে না বসে এলোমেলোভাবে বসে হৈ চৈ করতঃ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন।
“এসময় পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) শিশির কুমার চক্রবর্তীসহ তার সঙ্গীয় অন্যান্য ইন্সপেক্টরগণ বারংবার শৃঙ্খলার সাথে বসার কথা বললেও আপনি উপস্থিত সহযোগী প্রশিক্ষকদের নির্দেশ অমান্য ও কর্ণপাত না করে বসা নিয়ে হৈ চৈ ও বিশৃঙ্খলা করতে থাকেন।”
অব্যাহতিপত্রে আরও বলা হয়, “ক্লাস চলাকালীন অতিথি বক্তার পাঠদানে আপনার কোন মনোযোগ ছিল না এবং পাশাপাশি বসে কথাবার্তা বলতে থাকেন। ক্লাসে আপনার এই ধরনের শৃঙ্খলা বিরোধী আচরণ বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির নিয়ম শৃঙ্খলার পরিপন্থী মর্মে জনাব শিশির কুমার চক্রবর্তী (বিপি-৮০০৮১২০৩২৫) পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ), প্রিন্সিপাল (অতিরিক্ত আইজিপি), বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি সারদা, রাজশাহী বরাবরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য লিখিত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
“উপরোক্ত অভিযোগের কারণে বিপিএ স্মারক নং- বিপিএ/বেসিক ট্রেনিং-২/ক্যাডেট এসআই-৪০/শৃংঙ্খলা/৫৪৩ তারিখ- ২১/১০/২০২৪ খ্রিঃ মূলে মাননীয় প্রিন্সিপাল মহোদয়ের পথে পুলিশ সুপার (অ্যাডমিন অ্যান্ড লজিস্টিকস) ০৩ (তিন) দিনের মধ্যে কৈফিয়তের জবাব দাখিল করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন।
“বর্ণিত নির্দেশনার প্রেক্ষিতে আপনি নির্ধারিত ০৩ (তিন) দিন সময়ের মধ্যে কৈফিয়তের জবাব দাখিল করেন। আপনার দাখিলকৃত কৈফিয়তের জবাব পর্যালোচনান্তে সন্তোষজনক নয় মর্মে প্রতিয়মান হয়।
বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি সারদার প্রিন্সিপাল (অ্যাডিশনাল আইজিপি) মো. মাসুদুর রহমান ভূঞা স্বাক্ষরিত অব্যাহতিপত্রে আরও বলা হয়েছে, “একজন প্রশিক্ষণার্থী হিসেবে আপনার এ ধরনের আচরণ চরম শৃঙ্খলা পরিপন্থী ও অসদাচরণের সামিল। আপনার উপরোক্ত শৃঙ্খলা বিরোধী কর্মকাণ্ড বাংলাদেশ পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ ও দায়িত্বশীল পদ হিসেবে বিবেচিত সাব-ইন্সপেক্টর পদে কাজ করার পথে বড় ধরনের অন্তরায় ও অযোগ্যতার সামিল।”
“এমতাবস্থায় প্রশিক্ষণরত ক্যাডেট এসআই (অব্যাহতি পাওয়া ক্যাডেটের নাম) এর এহেন শৃঙ্খলা বিরোধী কার্যক্রমের কারণে PRB-1943 এর বিধি 741-11] উপবিধি ৮ (111) মোতাবেক চলমান মৌলিক প্রশিক্ষণ হতে অদ্য ০৩/১১/২০২৪ খ্রিঃ অপরাহ্নে ডিসচার্জ (Discharge) করা হলো।”
তবে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে প্রশিক্ষণরত ৫৮ ক্যাডেট এসআইকে অব্যাহতি দেওয়া হলেও গত ২১ অক্টোবর এদের মধ্যে যে ১০ জনকে শোকজ করা হয়েছিল, তাদের প্রশিক্ষক পুলিশ একাডেমির সাবেক প্রিন্সিপাল মো. নাজিবুর রহমান সকাল সন্ধ্যার কাছে দাবি করেছেন, তার ক্লাসে বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটেনি।