সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন ও সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠনসহ আট দফা দাবিতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আন্দোলন ১৫ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।
সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র চট্টগ্রামের পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃঞ্চ দাস ব্রম্মচারী বুধবার রাতে এক ভিডিওতে এই ঘোষণা দেন।
এমন সময়ে তিনি এ ঘোষণা দিলেন যখন এক মুসলিম ব্যবসায়ীর ইসকনের বিরুদ্ধে দেওয়া ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের হাজারি গলিতে হিন্দুদের মধ্যে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। এই ঘটনায় ৮০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে যৌথবাহিনী। অভিযানে হামলার অভিযোগে করা হয়েছে মামলা।
এর আগে গত ২৫ অক্টোবর নিউমার্কেট মোড়ে জাতীয় পতাকার ওপর ইসকনের পতাকা ওড়ানোর অভিযোগ এনে চিন্ময় কৃঞ্চ দাস ব্রম্মচারীসহ অনেককের বিরুদ্ধে মামলা করেন এক বিএনপি নেতা। সেই মামলা প্রত্যাহারের জন্য গত সোমবার পর্যন্ত আলটিমেটাম দিয়েছিল সনাতন জাগরণ মঞ্চ।
এছাড়া আটদফা দাবি আদায়ে দেশব্যাপি সমাবেশ, স্মারকলিপি এমনকি ঢাকামুখী লংমার্চের ঘোষণা এসেছিল সনাতন জাগরণ মঞ্চের মহাসমাবেশ থেকে।
অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃঞ্চ দাস ব্রম্মচারীরে ঘোষণার পর সব আন্দোলনই স্থগিত হলো।
আন্দোলন স্থগিতের কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আট দফা দাবি আদায়ে সম্মিলিত সংখ্যালঘু মোর্চা এবং সনাতন জাগরণ মঞ্চ যে আন্দোলন চালিয়ে আসছে তা নীতিগতভাবে স্থগিতের সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছি। দেশের রাষ্ট্র এবং সরকারকে সহযোগিতা করার জন্য এবং গণতান্ত্রিক বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলো আমাদের প্রতি যে অনুরোধ রেখেছেন তার ওপর সহযোগ রেখে আগামী ১৫ দিন সব আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করেছি। এই ১৫ দিন আমরা দেশে কোনও কর্মসূচি পালন করব না।”
স্থগিত কর্মসূচি দেশের সনাতনী সবগুলো গোষ্ঠী সমর্থন এবং সহযোগিতা করবে বলেও আশা করেন চিন্ময় কৃষ্ণ দাস।
তিনি বলেন, “রাষ্ট্র বিনির্মাণে আমরা সরকারকে সহেযাগিতা করতে চাই, রাজনৈতিক দলগুলোর অনুরোধকে মূল্যায়ন করতে চাই। কিন্তু এই প্রচেষ্টাকে দুর্বল ভাবলে চলবে না। দেশের তিন কোটি সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর আবেগ অনুরোধকে উপেক্ষা করে যদি কেউ কোন বৈরি পরিবেশ তৈরি করতে চায়, তাহলে তাতে অস্তিত্ব বাঁচাতে যদি এই মানুষেরা আন্দোলন করেন তবে সেই আন্দোলনে আমাদের সমর্থন দেওয়া ছাড়া কোনও উপায় থাকবে না।
আগামী ১৫ দিনের মধ্যে দাবি বাস্তবায়নের কথা স্মরণ করিয়ে চিন্ময় কৃঞ্চ দাস বলেন, “এই সময়ের মধ্যে দেশের সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত সনাতন জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়াবেন। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন। তারা যেন বিপদাপন্ন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
“তবে কোনও রাজনৈতিক দুর্বত্তকে আইনের আতায় আনতে আমরা কোনও হস্তক্ষেপ করবো না। কিন্তু এতে করে কোনও সনাতন ধর্মাবলম্বী যেন বিপদে না পড়েন সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।”
সংখ্যালঘু ঐক্যমোর্চার আট দফা দাবির মধ্যে রয়েছে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন ও সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠন, জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে সংসদে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা, দেবোত্তর সম্পত্তি আইন প্রণয়ন এবং পার্বত্য চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন।