সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি লেবাননে হিজবুল্লাহর ব্যবহৃত শত শত পেজার ও ওয়াকিটকিতে বিস্ফোরণের পেছনে তাদের হাত ছিল বলে স্বীকার করেছে ইসরায়েল।
রবিবার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তার মন্ত্রিসভাকে বলেছেন, “নিরাপত্তা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এবং তাদের দায়িত্বে থাকা রাজনৈতিক নেতাদের বিরোধিতা সত্ত্বেও অভিযান চালানো এবং (হিজবুল্লাহ নেতা হাসান) নাসরুল্লাহকে নির্মূল করা হয়েছিল।”
একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা সিএনএনকে নেতানিয়াহু সত্যিই এমন কথা বলেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন। এর মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো ইসরায়েল লেবাননে ডিভাইস হামলায় তার ভূমিকা স্বীকার করেছে।
নিরাপত্তা সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে নেতানিয়াহুর বক্তব্য সম্পর্কে ইসরায়েলের গণমাধ্যমকে জানানোর সিদ্ধান্ত এবং ইসরায়েল এই অপারেশনের পেছনে ছিল তা স্বীকার করা সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েলে চলমান অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক কৌশলগুলোর আরেকটি অধ্যায় বলে মনে হচ্ছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম নেতানিয়াহুর এই মন্তব্যকে ইসরায়েলের সামরিক নেতৃত্ব ও গোয়েন্দা সংস্থার পাশাপাশি তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্তের সমালোচনা হিসাবে ব্যাখ্যা করেছে। ইয়োভ গ্যালান্তকে নেতানিয়াহু গত মঙ্গলবার বরখাস্ত করেছেন।
ইসরায়েল সরকার আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে মিথ্যা গোয়েন্দা প্রতিবেদন ফাঁস করার অভিযোগসহ একাধিক অপরাধমূলক তদন্তের মুখোমুখি হচ্ছে।
তবে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এসব অভিযোগ অস্বীকার করে।
গত ১৬ ও ১৭ সেপ্টেম্বর লেবাননে হিজবুল্লাহ সদস্যদের ব্যবহৃত হাজার হাজার পেজার ও ওয়াকিটকিতে বিস্ফোরণ ঘটে। লেবাননের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের তথ্য মতে, ওই বিস্ফোরণে বেশ কয়েকজন শিশুসহ অন্তত ৩৭ জন নিহত এবং প্রায় ৩ হাজার জন আহত হয়, যাদের মধ্যে অনেকেই বেসামরিক পথচারী।
লেবাননজুড়ে পেজার বিস্ফোরণের পরদিন গ্যালান্ত পরোক্ষে ওই হামলার পেছনে তার দেশের ভূমিকা স্বীকার করে নেন বলেও মনে হয়েছিল।
১৮ সেপ্টেম্বর উত্তর ইসরায়েলের রামাত-ডেভিড বিমান বাহিনী ঘাঁটি পরিদর্শনের সময় তিনি বলেছিলেন, “শিন বেত ও মোসাদসহ আইডিএফ একটি চমৎকার সাফল্য এনেছে।”
ডিভাইস হামলার এক সপ্তাহ পরই ইসরায়েল লেবাননে বিমান হামলা এবং আরও এক সপ্তাহ পর স্থল হামলাও শুরু করে।
ট্রাম্পের সঙ্গে ‘খুব ভালো’ কথা হয়েছে
পেজার হামলার এই স্বীকৃতি এমন এক সময়ে এসেছে যখন নেতানিয়াহু বলেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার তিনবার কথা হয়েছে।
রবিবার মন্ত্রিসভার বৈঠকের আগে নেতানিয়াহু বলেন, “এগুলো খুব ভালো এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কথোপকথন ছিল, যার লক্ষ্য ছিল ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে জোটবদ্ধতাকে আরও শক্তিশালী করা।”
নেতানিয়াহু বলেন, “আমরা ইরানের হুমকির সমস্ত দিক এবং এটি যে বিপদ ডেকে আনছে তার ওপর নজর রাখছি। শান্তি ও সম্প্রসারণ এবং অন্যান্য ক্ষেত্রেও আমরা ইসরায়েলের সামনে বড় সুযোগ দেখতে পাচ্ছি।”
নেতানিয়াহু গত সপ্তাহে নেদারল্যান্ডসের ঘটনারও উল্লেখ করেছেন, যখন ইসরায়েলি ফুটবল ভক্তরা ইহুদিবিদ্বেষী নির্যাতন এবং সহিংসতার শিকার হয়েছিল।
তিনি বলেন, “আমরা কখনোই ইতিহাসের ভয়াবহতার পুনরাবৃত্তি হতে দেব না। আমরা কখনোই ইহুদিবিদ্বেষ বা সন্ত্রাসবাদের কাছে আত্মসমর্পণ করব না।”
নেতানিয়াহু বলেন, “নেদারল্যান্ডসে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক দুটি ইহুদিবিদ্বেষী হামলার মধ্যে স্পষ্ট সংযোগ রয়েছে— হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইসরায়েল রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক আইনি আক্রমণ এবং আমস্টারডামের রাস্তায় ইসরায়েলি নাগরিকদের বিরুদ্ধে সহিংস অপরাধমূলক আক্রমণ।”
মে মাসে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রধান প্রসিকিউটর নেতানিয়াহু এবং তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্তের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার জন্য আবেদন করেছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছিল।
নেতানিয়াহু আরও বলেন, “ইরানের হুমকিকে সামনে রেখে আমরা আমাদের দেশ এবং আমাদের নাগরিকদের সকল ফ্রন্টে প্রতিটি হুমকির বিরুদ্ধে রক্ষা করতে থাকব।”
আমস্টারডামের হামলার পর রবিবার ইসরায়েল দেশের বাইরে তার নাগরিকদের খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগদান এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে।
ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ (এনএসসি) সতর্ক করেছে, বেলজিয়াম, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সেও এমন পরিকল্পিত হামলা হতে পারে। এনএসসি ইসরায়েলিদের বিশেষ করে আগামী বৃহস্পতিবার প্যারিসে অনুষ্ঠেয় ফ্রান্স-ইসরায়েল ফুটবল ম্যাচ এড়াতে বলেছে।”
এনএসসি নাগরিকদের ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ ও সমাবেশ থেকেও দূরে থাকার জন্য এবং ‘ইসরায়েলি/ইহুদি প্রতীক’ গোপন রাখার জন্য পরামর্শ দিয়েছে।