এমনিতেই ছন্দে নেই রিয়াল মাদ্রিদ। গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো শুরু হয়েছে ইনজুরির মিছিল। একের পর এক খেলোয়াড় পড়ছেন ইনজুরিতে। দানি কারভাহালের মৌসুম শেষ হয়ে গেছে আগেই। ওসাসুনা ম্যাচের পর ডান হাঁটুর লিগামেন্ট ছিঁড়ে যাওয়ায় মৌসুম শেষ এদের মিলিতাওয়েরও। এই বয়সে লম্বা সময় মাঠের বাইরে কাটানোর পর মিলিতাওয়ের ফেরাটাই হবে চ্যালেঞ্জের।
ওসাসুনার বিপক্ষে ম্যাচে চোট পেয়েছেন লুকাস ভাজকেজ আর উইঙ্গার রোদ্রিগো। তারা দুজনই খেলতে পারবেন না চ্যাম্পিয়নস লিগে লিভারপুলের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে।
লা লিগায় বার্সেলোনার চেয়ে ৬ পয়েন্টে পিছিয়ে পড়েছে রিয়াল। এল ক্লাসিকোয় নিজেদের মাঠেই হয়েছে বিধ্বস্ত। নতুন ফরম্যাটের চ্যাম্পিয়নস লিগে লিল ও এসি মিলানের কাছে হেরে রিয়াল এখন ১৮ নম্বরে!
মৌসুমের বাকি সময়টা এই দল নিয়ে কি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে রিয়াল? পোড় খাওয়া কোচ কার্লো আনচেলোত্তি কি পারবেন দুঃসময়টা পেছনে ফেলতে?
এজন্য সবার আগে সমাধান করতে হবে রক্ষণের সমস্যা। জানুয়ারির ট্রান্সফার উইন্ডোতে আল নাসরের আয়মেরিক লাপোর্তাকে কেনার চেষ্টা করবে তারা। নজরে আছে লাৎসিওর মারিও জিলা, নাপোলির রাফা মারিন, বেনফিকার আন্তোনিও সিলভা ও লাইপজিগের লুকেবা। ফিরতে পারেন সের্হিয়ো রামোসও। তাতে রক্ষণের শক্তি বাড়লে ঘুরে দাঁড়ানোটা সহজ হবে।
গত মৌসুমে লা লিগা ও চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের পথে ৫৫ ম্যাচে তারা জিতেছিল ৭৬ শতাংশ, হার কেবল ৪ শতাংশ, গোল করেছিল প্রতি ম্যাচে গড়ে ২.৪২টি আর গোল হজম করেছিল ০.৯৬টি। সেখানে এবার প্রথম ১৫ ম্যাচে তারা জিতেছে ৬৭ শতাংশ, হার ২০ শতাংশ, ম্যাচ প্রতি গোল ২.০৭ আর গোল হজমের হার ১.০৬।
এই অবনতির জন্য রক্ষণের দুর্বলতার পাশাপাশি আক্রমণে সমন্বয়হীনতা আর মাঝমাঠে টনি ক্রুসের মতো একজনের অভাবটা প্রকট হয়ে উঠে প্রায়। কিলিয়ান এমবাপ্পের প্রিয় পজিশন লেফট উইং। সেখানে রিয়ালে খেলেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। চাইলেই প্রিয় পজিশনে খেলার উপায় নেই এমবাপ্পের। আর তাকে একাদশ জায়গা দিতে জুড বেলিংহামকেও নামানো হচ্ছে একটু নিচে।
তাতেই এলোমেলো রিয়াল। গত মৌসুমে বেলিংহাম যেখানে গোল করেছিলেন ২৩টি আর অ্যাসিস্ট করেছিলেন ১৩টি, সেখানে এই মৌসুমে বেলিংহামের গোল কেবল ১টি। আর অ্যাসিস্ট ৩টি।
পিএসজিতে মৌসুমে ৪০টির বেশি গোল করে এসেছেন এমবাপ্পে। রিয়ালে প্রথম ১৫ ম্যাচে শুরুটা করেছেন ধীরে। গোল কেবল ৮টি। গত মৌসুমে ম্যাচ প্রতি যেখানে গোল করেছিলেন ১.০২টি সেখানে রিয়ালে প্রথম ১৫ ম্যাচে সেই গড় ০.৫৮। গত মৌসুমে ম্যাচ প্রতি ০.২৩ অ্যাসিস্ট করলেও এবার সেটা ০.১৫! এই এমবাপ্পেকে নিশ্চয়ই চায়নি রিয়াল।
এমবাপ্পের সঙ্গে নতুন মৌসুমে দলে এসেছেন ব্রাজিলিয়ান এনদ্রিক। আর ‘তুরস্কের মেসি’খ্যাত আদ্রা গুলের তো আছেনই। এসি মিলানের কাছে বিধ্বস্ত হওয়া পর্যন্ত সবশেষ পাঁচ ম্যাচে এই দুজন মিলে খেলেছিলেন কেবল ১৩ মিনিট! তাতে দলে যে সতেজতা আর সৃষ্টিশীলতা দরকার সেটা হচ্ছে না। আনচেলোত্তিকে কাজে লাগাতে হবে তাদেরও।
পাশাপাশি ফুরিয়ে যাওয়ার আগে বুড়িয়ে যাওয়া লুকা মদরিচকেও খেলাতে হবে হিসেব কষে। গত চ্যাম্পিয়নস লিগে কোয়ার্টার ফাইনালে স্টাম্পফোর্ড ব্রিজে মাঝমাঠের বাম দিকে মদরিচকে খেলান কোচ কার্লো আনচেলোত্তি। তার ঠিক পেছনে ছিলেন কামাভিঙ্গা। ফেদে ভালভের্দের সঙ্গে মদরিচের জায়গা বদলে বাম দিকের রক্ষণ রিয়াল উন্নতি করে নাটকীয়ভাবে।
ম্যাচটা রিয়াল জিতে দুই গোলের ব্যবধানে। তবে বয়সের কারণেই আগের মতো মাঠজুড়ে রাজত্ব কমছে মদরিচের। এসব নিশ্চয়ই অজানা নয় আনচেলোত্তির। এর সমাধান খুঁজে বের করতে হবে তাকেই। সেটা পারলে বার্সেলোনার সঙ্গে ছয় পয়েন্টের ব্যবধান (এক ম্যাচ কম খেলেছে রিয়াল) কমিয়ে কক্ষে ফিরতে সময় লাগার কথা নয় রিয়ালের। বিশেষ করে তাদের ডিনএতেই যেখানে আছে হারার আগে হেরে না যাওয়াটা।