আওয়ামী লীগের আমলে থেকেই দুর্দশায় দেশের আর্থিক খাত। দুর্দশার মাত্রা কতটা? গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের ভাষায়, পাকিস্তানের চেয়েও খারাপ।
সেই দুর্দশা থেকে আর্থিক খাতকে উদ্ধারে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তবে অতীতের ভুল সংশোধন করতেই সময় যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন গভর্নর।
দেড় দশক ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের বক্তব্য ছিল, তারা দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে তুলে দিয়েছে।
কিন্তু ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সেই সরকারের পতনের পর বেরিয়ে আসছে উন্নয়নের আড়ালে দুর্নীতি এবং দেশ থেকে অর্থ পাচারের চিত্র।
গত অগাস্টে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে গঠনের পর গভর্নরের দায়িত্ব পাওয়া আহসান মনসুর সোমবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে সার্বিক অর্থনীতি এবং আর্থিক খাতের দুরবস্থার একটি চিত্র তুলে ধরেন।
নাজুক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার দাবি করে তিনি বলেন, “আমরা কি শ্রীলঙ্কা হয়ে গেছি? অবশ্যই না। আমাদের প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক হয়নি; অর্থনীতিও ধসে পড়েনি।
“হতে পারত, কিন্তু হয়নি। এ বিষয়ে একধরনের উপলব্ধি থাকতে হবে যে বাংলাদেশ মন্দা এড়াতে পেরেছে। সেজন্য প্রশংসাও থাকা দরকার।”
আর্থিক খাতে নাজুক অবস্থা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিকেও নিচে টানছিল জানিয়ে গভর্নর বলেন, “দেশের আর্থিক খাত সবচেয়ে দুর্বল, এমনকি পাকিস্তানের চেয়েও। আর্থিক খাতের এই দুর্বলতার ছাপ দেশের অর্থনীতিতে পড়েছে। তার জের টানতে হচ্ছে।”
এই অবস্থায় অন্তর্বর্তী সরকার ভবিষ্যৎমুখী কিছু করার সুযোগ এখনও পায়নি জানিয়ে তিনি বলেন, “অতীতের জের টানা ও সংশোধনমূলক কাজ করতে হচ্ছে আমাদের।”
সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জনের এই চেষ্টায় দেশে প্রবৃদ্ধির হার কিছুটা কমে যাবে বলে আভাস দেন আহসান মনসুর।
তিনি জানান, আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা আনতে ব্যাংক ও ব্যবসায়ীদের সংগঠনগুলোর সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দফায় দফায় আলোচনা করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ বদলানো হয়েছে। নতুন পর্ষদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। প্রতিদিনই বাংলাদেশ ব্যাংক এই ব্যাংকগুলোর নগদ অর্থপ্রবাহ পর্যবেক্ষণ করছে।
“একটি ব্যাংক থেকে ২৩ হাজার কোটি টাকা যদি এক পরিবার নিয়ে যায়, তাহলে সেই ব্যাংকের কী থাকে? এসব ক্ষেত্রে নতুন কিছু করতে হবে,” বলেন গভর্নর।
তিনি বলেন, ব্যাংকের টাকা যারা দেশের বাইরে নিয়ে গেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
বেক্সিমকো গ্রুপে রিসিভার নিয়োগের প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, কোনও কোম্পানিতে রিসিভার নিয়োগের মানে হলো নিয়ন্ত্রণে আনা, বন্ধ করা নয়। ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব বন্ধ করা হয়নি।
গত তিন মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক কোনও টাকা না ছাপিয়ে তারল্য সংকট সমাধানের চেষ্টা করছে বলেও জানান তিনি।
ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ নিয়ে গভর্নর বলেন, ব্যাংক রেজল্যুশন অ্যাক্ট করা হবে, যার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে সব ক্ষমতা চলে আসবে, আইনগতভাবেই তা হবে। ফলে ব্যাংক একীভূতকরণ, অধিগ্রহণসহ সবকিছুই করা সম্ভব হবে।
“কিছু ব্যাংকে পুঁজি সঞ্চার করা হবে, কিছু ব্যাংকে নতুন বিনিয়োগ নিয়ে আসতে হবে। এসব করার জন্য আইনি কাঠামো প্রয়োজন; সেই কাজ এখন করা হচ্ছে।”
সোনারগাঁও প্যান প্যাসিফিক হোটেলে তৃতীয় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্মেলন-২০২৪ এ যোগ দিয়েছিলেন আহসান মনসুর। ‘বৈষম্য, আর্থিক অপরাধ ও বাংলাদেশের অর্থনীতির নিরাময়’ শীর্ষক এ সম্মেলনের আয়োজন করে দৈনিক বণিক বার্তা।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, ইনস্টিটিউট অব ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইএনএম) নির্বাহী পরিচালক মুস্তাফা কে মুজেরী, ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জাভেদ আখতার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা।