আগামী মাস ডিসেম্বরের মধ্যেই বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বাংলাদেশকে ১১০ কোটি (১.১ বিলিয়ন) ডলারের বাজেট সহায়তা দিতে পারে।
আগামী মার্চ মাসের মধ্যে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থা (জাইকা), এশীয় অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যাংক (এআইআইবি) এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে হতে পারে ৭০ কোটি (৭০০ মিলিয়ন) ডলারের চুক্তি।
এরপর আগামী জুনের মধ্যে এডিবি দ্বিতীয় ধাপে দিতে পারে আরও ৪০ কোটি ডলার।
এভাবে ক্রমান্বয়ে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মধ্যে বিশ্বের অর্থায়ন সংস্থাগুলো বাংলাদেশকে মোট ২২০ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তা দিতে পারে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা মঙ্গলবার সকাল সন্ধ্যাকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “আগামী (ডিসেম্বর) মাসের মধ্যে এডিবি ৬০ কোটি এবং বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ৫০ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তা চুক্তি হতে পারে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মধ্যে আরও কয়েকটি দাতাসংস্থা মিলে মোট ২২০ ডলারের বাজেট সহায়তা পেতে পারে।”
আগামী মার্চের মধ্যে জাইকা ৩০ কোটি ডলার ও এআইআইবির সঙ্গে ৩০ কোটি ডলারের চুক্তি হতে পারে বলে জানান ইআরডির ওই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, এরপর আগামী জুনের মধ্যে এডিবির চলতি অর্থবছরের জন্য দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও ৪০ কোটি ডলার এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে হতে পারে ১০ কোটি ডলারের চুক্তি। সব মিলে চলতি অর্থবছরের মধ্যে এই দাতাসংস্থাগুলো বাংলাদেশকে ২২০ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তা দিতে চূড়ান্ত চুক্তি করতে পারে। এই বাজেট সাপোর্টের চুক্তি ও ছাড় হলে দেশের চাপে থাকা রিজার্ভ কিছুটা হলেও শক্তিশালী হবে।
ইআরডির ওই কর্মকর্তা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা পাচার হওয়ায় বিশেষ চাপে পড়ে গিয়েছিল দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। কিন্তু রিজার্ভের পরিমাণ আতঙ্ক ছড়ানোর পর্যায়ে যাওয়া ঠেকাতে এলএনজি, আমদানিকৃত বিদ্যুৎ ও বিভিন্ন আমদানির বিল পরিশোধ দীর্ঘায়িত বা সময় বাড়িয়ে পরিশোধের কৌশল নিয়েছিল। গত সরকারের ওই কৌশল রিজার্ভকে আরও চাপে ফেলে দিয়ে বিল পরিশোধের চাপ আরও বাড়িয়ে দেয়।
এমন পরিস্থিতিতে বর্তমান সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর নতুন গভর্নর কোনও অপকৌশলে না গিয়ে পাওনার ওপর সুদ না বাড়িয়ে দ্রুত পরিশোধ শুরু করেন। এখন রিজার্ভের পরিমাণ কিছুটা কম দেখা গেলেও (এরিয়া) বিভিন্ন মেয়াদে পাওনা কমে এসেছে।
এর ফলে নতুন করে বাজেট সহায়তার অর্থ যুক্ত হলে দেশের রিজার্ভ শক্তিশালী হয়ে উঠবে বলে মনে করেন ইআরডির ওই কর্মকর্তা।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ নিয়ে যে উদ্বেগ রয়েছে, তা এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দেনা পরিশোধের পর আরও বেড়েছে। রিজার্ভের প্রধান দুই উৎস- প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয় বাড়ার পরও অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচকের পতন থামছে না।
আকুর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মেয়াদের ১ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল হয়েছিল। তা মিটিয়ে দেওয়ার পর মঙ্গলবার বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলার, যা ছয় মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘গ্রস’ হিসাবে রিজার্ভ এখন ২৪ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলার।
গত ১২ মে আকুর মার্চ-এপ্রিল মেয়াদের ১ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছিল ১৮ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে নেমেছিল ২৩ দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলারে।