কুমার শানু ও মিতালী মুখার্জীর কণ্ঠে জনপ্রিয় একটি গানের প্রথম চরণে আফসোস ঝরে পড়ে, ‘ভালোবাসা যত বড় জীবন তত বড় নয়’। এরপরেই আসে আকাঙ্ক্ষার কথা, ‘তোমায় নিয়ে হাজার বছর বাঁচতে বড় ইচ্ছে হয়’।
বাস্তবে হাজার বছর বেঁচে থাকা অসম্ভব হলেও আমরা চাই সুস্থভাবে দীর্ঘ জীবন কাটাতে।
সিএনবিসির প্রতিবেদন বলছে, জীবনচর্যায় পাঁচ নিয়ম নিষ্ঠার সঙ্গে মেনে চললে অন্তত ১০০ বছর বেঁচে থাকা ভালোভাবেই সম্ভব।
পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস
দীর্ঘ আয়ু গোপন রহস্যে শুরুতেই আসে খাদ্যাভ্যাস। বিশেষজ্ঞরা সাধারণত ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্য অর্থাৎ মেডিটেরিনিয়ান ডায়েট চর্চা করতেই পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
এ ধরনের খাদ্যাভ্যাসে শিম দানা, বাদাম, দানাদার শস্য যেমন ওটস, বেশি পরিমাণে সবজি – বিশেষ করে শাকপাতা থাকে। লাল মাংস একেবারেই এড়িয়ে চলা হয় মেডিটেরিনিয়ান খাদ্যাভ্যাসে।
লাইফস্টাইল এক্সপার্ট লংগো বলেন, “আমি ১২ ঘণ্টা না খেয়ে থাকার কথা বলি সবাইকে। যেমন, আপনি সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টার মধ্যে খেলেন। অথবা সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে খেলেন।”
আরেক বিশেষজ্ঞ ড্যান বুয়েটনার জানালেন, তিনিও ১০ থেকে ১২ ঘণ্টার একটি সময়সীমার মধ্যে খাওয়ার পর্ব সেরে নেন।
চলাফেরায় চলবে শরীর
দীর্ঘায়ু বিশেষজ্ঞদের অনেকে প্রতিদিন ব্যায়াম করতে বলেন। আবার অনেকে বলেন, হালকা চলাফেরার মধ্যে দিয়ে শরীরকে সচল রাখতে হবে।
পেশীশক্তি বাড়াতে সপ্তাহে দুইদিন প্রশিক্ষণ নেয়া যায়। আর সপ্তাহে তিন দিন অ্যারোবিক এক্সারসাইজ করা ভালো। এমনকি দিনে ১০ মিনিটের জন্য হলেও এই অভ্যাস ধরে রাখলে ৯০ বছর বয়স পর্যন্ত বেঁচে থাকা যাবে অনায়াসে। এমন তথ্য দিয়ে আশ্বস্ত করছে নিউ ইংল্যান্ড ক্যানটেনারিয়ান স্টাডি।
ব্লু জোনের বাসিন্দারা ৮০ বছর বয়সেও কর্মঠ থাকে। গ্রিসের ইকারিয়া দ্বীপ, ইতালির সার্ডিনিয়ার ওগলিয়াস্ট্রা, জাপানের দক্ষিণ-পশ্চিমের ওকিনাওয়া, , দক্ষিণ আমেরিকার কোস্টারিকার নিকোয়া উপদ্বীপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার লোমা লিন্ডা মিলে বলা হয় ব্লু জোন। এসব অঞ্চলের মানুষের গড় আয়ু পৃথিবীর সাধারণ মানুষের গড় আয়ুর তুলনায় বেশি হয়; সাধারণত ৯০ থেকে ১০০ বছর বয়সেও বেঁচে থাকে তারা।
ব্লু জোনের বাসিন্দারা শারীরিক পরিশ্রম ও কাজের মধ্যে দিয়ে নিজেকে সচল রাখে সব সময়। এদের মধ্যে হাঁটার অভ্যাস প্রবল দেখা যায়। তারা নিজের প্রয়োজনীয় অনেক জিনিসপত্র নিজেরাই বানিয়ে নিতে পারদর্শী। বাগানের কাজে সময় কাটাতে অভ্যস্ত হয় ব্লু জোনের লোকেরা।
বিশ্বাস ধরে রাখতে হবে
যারা বিশ্বাসী এবং জীবন দর্শনে ভরসা রাখে তারা সুখী হয় বাকি যে কারো চেয়ে।
এক অনুষ্ঠানে বুয়েটনার বলেছিলেন, “যারা গির্জা, মন্দির অথবা মসজিদে যায় তারা ধর্মচর্চাহীনদের চেয়ে চার থেকে ১৪ বছর বেশি বাঁচে।”
সুস্থ সম্পর্ক
একটি মধুর সম্পর্কে নিজেকে বেঁধে রাখা হলো জরুরি তালিকার এক নম্বরে থাকা বিষয়। জীবনে সঠিক বন্ধু বেছে নিতে হবে। ব্লু জোনের বাসিন্দারাও তাই করে। এতে করে জীবনে অনেক ভুল সিদ্ধান্ত থেকে নিজেকে দূরে রাখা সহজ হয়।
জীবনের লক্ষ্য উপলব্ধি করা
দীর্ঘ জীবনের জন্য বুয়েটনার বলছেন, “যারা জানে ভবিষ্যতে তারা কী কাজ করতে চায় তারা অন্তত আট বছর বেশি বাঁচে উদ্দেশ্যহীন মানুষের চেয়ে।”
বিষণ্ন মুখে বৃদ্ধজীবন কাটানোর চেয়ে প্রসন্ন ও প্রশান্তির আলো চোখেমুখে খেলে যাওয়ার মতো করে বাঁচার কথা বলছে গবেষণাও।
২০০১ সালে হার্ভাড গ্যাজেটে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ড. জর্জ ই ভেইল্যান্ট বলেছিলেন, “বয়স বেড়ে যাওয়ার মুহূর্তে ব্যথা-বেদনায় ভরা না থেকে আনন্দিত থাকা এবং ভালো থাকাটাই আসল কথা।”