Beta
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪
Beta
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

‘মিনিকেট রশিদ’কে গ্রেপ্তারের প্রভাব কি পড়বে চাল বাজারে

ss-miniket-rashid-17112024
[publishpress_authors_box]

চালের ঊর্ধ্বমুখী দাম নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে চেক প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন চালকল মালিকদের নেতা আবদুর রশিদ, যার বিরুদ্ধে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ রয়েছে।

বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি রশিদের বিরুদ্ধে ঋণখেলাপির অভিযোগে কয়েকটি ব্যাংকের মামলা আছে। দেশের বাজারে মিনিকেট চালের অন্যতম জোগানদাতা তার প্রতিষ্ঠান রশিদ এগ্রো ফুড প্রোডাক্টস।

তাই রশিদের গ্রেপ্তারের কারণে চালের বাজার অস্থিতিশীল হতে পারে বলে এক ধরনের গুঞ্জন চলছে। তবে ঢাকা এবং ঢাকার বাইরের কয়েকজন মিল মালিক ও আড়ৎদার সকাল সন্ধ্যাকে জানিয়েছেন, বাজারে অনেক ব্যবসায়ী আছেন। একজনের গ্রেপ্তারে বাজারে তেমন কোনও প্রভাব পড়বে না বলে মনে করছেন তারা।

পুলিশ বলছে, আবদুর রশিদের বিরুদ্ধে প্রতারণার একটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিল। সেই মামলাই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকার আমলে চালের দাম বাড়তে থাকায় ব্যাপক সমালোচনা হয়। সমালোচনার মুখে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, দেশে চালের সংকট নেই, অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে দাম বাড়ানো হচ্ছে। তখন কুষ্টিয়ার খাজানগরে রশিদের মিলে অভিযান চালিয়ে অতিরিক্ত মজুদের দায়ে বহু চাল জব্দ ও জরিমানা করে র‌্যাব।

স্থানীয়রা বলছেন, আবদুর রশিদ বিএনপি সমর্থক হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। তার ভাই সিদ্দিকুর রহমান ছিলেন কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির কোষাধ্যক্ষ। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা মাহবুব-উল-আলম হানিফের সঙ্গে সু-সম্পর্ক ছিল রশিদের। এ সম্পর্কের সূত্র ধরেই ২০১৭ সালে ভাই বিএনপি নেতা সিদ্দিকুরকে নিয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন তিনি। হানিফের সঙ্গে সুসম্পর্কের কথা রশিদ নিজেও বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন। 

রাজধানী ঢাকার বাজারে যে মিনিকেট চাল আসে, তার বড় অংশ আসে কুষ্টিয়ার ৩১টি স্বয়ংক্রিয় বা অটো রাইস মিল থেকে। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড়টির মালিক আবদুর রশিদ।

কুষ্টিয়া ও নাটোরে আবদুর রশিদের চারটি অটো রাইস মিল আছে। আছে ১৫টি গুদাম। গুদামগুলোর ধারণক্ষমতা ৩ লাখ ৫৮ হাজার বস্তা (প্রতি বস্তায় ৬৫ কেজি), যা প্রায় ২৫ হাজার টনের সমান।

এমন প্রেক্ষাপটে রশিদের গ্রেপ্তারে চালের বাজারে কতটা প্রভাব পড়তে পারে সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে সকাল সন্ধ্যা কথা বলেছে ঢাকা এবং ঢাকার বাইরের কয়েকজন মিল মালিক এবং আড়ৎদারের সঙ্গে।

তারা বলছেন, নতুন ধান উঠছে। আমদানি শুল্ক কমানো হয়েছে। বাজারে অনেক ব্যবসায়ী। একজনের গ্রেপ্তারে বাজারে তেমন কোনও প্রভাব পড়বে না।

সব ঠিক থাকলে চালের দাম কমতে পারেও বলে আশা করছেন তারা।

রশিদের গ্রেপ্তারে চালের বাজার অস্থিতিশীল হবে কি না জানতে চাইলে কুষ্টিয়ার মাইজভান্ডারী অটো রাইস মিলের মালিক মো. মাসুদ রানা সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “না, কিছু হবে না। এখন এমনি মার্কেট স্লো। নতুন ধান উঠতাছে। তার জন্য বাজারের চালের কোনও ঝামেলা হবে না।”

ঢাকা মহানগরীর বাদামতলী ও বাবুবাজার চাউল আড়ত সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. নিজামউদ্দিনও মনে করেন রশিদের গ্রেপ্তারের কোনও প্রভাব চালের বাজারে পড়বে না।

সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “আরে ভাই, মার্কেট অনেক বড়। এখানে অনেক ব্যবসায়ী। এক দুই জন না থাকলে বাজারে এর কোনও প্রভাব পড়বে না। উপর থেকে সরকার আমদানি শুল্ক কমায় দিছে। এখন যেসব চাল ঢুকতাছে আগামী মাসে বাজারে এসে যাবে। সাথে নতুন ধান সংগ্রহ চলতাছে। সব ঠিক থাকলে এবার চালের দাম কমবে।”

যে কারণে গ্রেপ্তার

পুলিশ জানিয়েছে, প্রতারণার একটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ধরেই আবদুর রশিদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

কুষ্টিয়া মডেল থানা সূত্র জানায়, রাজশাহীর পুঠিয়া এলাকার ইনাম ফিড মিলের মালিক আতিকুর রহমানের সঙ্গে চাল ব্যবসায়ী আবদুর রশিদের ব্যবসায়িক লেনদেন ছিল। পাবনার ঈশ্বরদীতে আবদুর রশিদের ‘রশিদ ওয়েল মিলস লিমিটেড’ নামের একটি তেলের কারখানা আছে। ওই কারখানা থেকে ফিড মিলের কাঁচামাল কিনতে আবদুর রশিদকে চেকের মাধ্যমে ১ কোটি ৩৩ লাখ ৬৪ হাজার ৮৬৭ টাকা অগ্রিম দেন আতিকুর রহমান। টাকা নেওয়ার পর দেড় বছর ধরে মালামাল ও টাকা কোনওটাই দিচ্ছিলেন না আবদুর রশিদ।

এসব অভিযোগ এনে ২০২৩ সালের ১৩ আগস্ট রাজশাহী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবদুর রশিদ ও তার প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক মেহেদী হাসানকে আসামি করে মামলা করেন আতিকুর রহমান। সেই মামলায় সমন জারির পর আবদুর রশিদ হাজির না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত