কক্সবাজারের উখিয়ার নাফ নদী সীমান্ত থেকে মাছ ধরার সময় আরাকান আর্মির ধরে নিয়ে যাওয়া পাঁচ জেলের মধ্যে একজনের মরদেহ উদ্ধার হলেও হদিস নেই চারজনের। তাদেরকে নিয়ে পরিবারের সদস্যদের মাঝে উদ্বেগ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছে, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সীমান্ত সংলগ্ন উখিয়ার নাফ নদীর ওপারে কয়েকজনের মরদেহ ভাসতে দেখা গেছে। এমন খবরে নিখোঁজ চারজন জীবিত আছে, না কি হত্যার শিকার হয়েছে- তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। পরিবারের সদস্যরা আছেন উদ্বেগের মধ্যে।
গত ১৩ নভেম্বর বিকালে উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের পাঁচজন মিলে নাফ নদীতে মাছ ধরতে যায়। পরদিন ১৪ নভেম্বর সকালে ফেরার কথা থাকলেও তারা ফেরনি। এর মধ্যে জানা যায়, ১৪ নভেম্বর তাদের ধরে নিয়ে গেছে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সদস্যরা।
গতকাল শনিবার (১৬ নভেম্বর) সকালে নাফ নদীতে ভাসমান পাওয়া যায় পালংখালী ইউনিয়নের আঞ্জুমানপাড়ার মৃত মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে ছৈয়দুল বশরের মরদেহ।
এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বশরের সঙ্গে যাওয়া অপর চারজনের হদিস মেলেনি। এই চারজন হলেন পূর্ব ফারিরিবিল এলাকার মনজুর আলমের ছেলে মোহাম্মদ ইউসুফ, নুর মোহাম্মদের ছেলে লুৎফুর রহমান, জিয়াবিল হকের ছেলে সাইফুল ইসলাম ও মুহাম্মদ আবদুল্লাহর ছেলে ইউছুফ জালাল।
ইউসুফের বাবা মনজুর আলম রবিবার জানিয়েছেন, অভাবের সংসারে ইউসুফের লেখাপড়া হয়নি। তিনি (বাবা) দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। নাফ নদীতে মাছ ধরে পরিবার চালায় ছেলে ইউসুফ। ১৩ নভেম্বর বন্ধুদের সঙ্গে মাছ ধরতে যান ইউসুফ। ১৪ নভেম্বর ফেরার কথা থাকলেও আসেনি। পরে খবর আসে ইউসুফ মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির হাতে বন্দি।
মনজুর আলম জানান, চারদিন পার হতে চললেও খোঁজ না নেই ইউসুফের। এর মধ্যে তার সঙ্গে যাওয়া বশরের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। এখন অনেকেই বলছে নাফ নদীর ওপারে মরদেহ রয়েছে। তাই তারা চারজনও হত্যার শিকার কি না সে প্রশ্ন উঠেছে ।
এমন পরিস্থিতিতে জীবিত বা মৃত তাদেরকে ফেরত আনার দাবি জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।
স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, শনিবার সন্ধ্যার পর নাফ নদীর ওপারে কয়েকজনের মরদেহ ভাসতে দেখেছেন অনেকে। এমন অবস্থায় অপর চারজনকে কি হত্যা করা হয়েছে- এ প্রশ্ন উঠেছে। তাদের জীবিত ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানিয়েছেন, দ্রুত সময়ে অপর চারজনকে ফেরত আনতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। কয়েকজনের মরদেহ ভাসছে শোনা গেলেও তাদের মধ্যে এই চারজন রয়েছে কিনা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) যারীন তাসনিম তাসিন জানিয়েছেন, মাছ শিকারে গিয়ে দুদিন আগে পাঁচি বাংলাদেশি অপহৃত হয়। তাদের মধ্যে একজনের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। অপর চারজনের ব্যাপারে আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগে চেষ্টা চলছে।