যত চ্যালেঞ্জই আসুক না কেন সুষ্ঠু, সুন্দর, অবাধ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন উপহার দেওয়ার জন্য যা যা করার প্রয়োজন হবে তা-ই করবেন বলে জানিয়েছেন নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন।
নতুন সিইসি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর বৃহস্পতিবার সকাল সন্ধ্যাকে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেছেন, কর্মজীবনে হাজারো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই এ পর্যায়ে এসেছেন। তাই চ্যালেঞ্জ নিতে কোনও ভয় পান না তিনি।
বৃহস্পতিবার অবসরপ্রাপ্ত এই সচিবকে সিইসি হিসেবে নিয়োগ দিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন করে দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
এর মধ্য দিয়ে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন পদত্যাগ করার প্রায় আড়াই মাস পর নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হলো। পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্ব নবগঠিত এই নির্বাচন কমিশনের কাঁধেই থাকবে।
নিয়োগ পাওয়ার পর মোবাইল ফোনে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে নতুন সিইসি নাসির উদ্দীন সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “বাংলাদেশে একটি ফ্রি ফেয়ার ইলেকশন উপহার দেওয়াই আমার মূল উদ্দেশ্য।”
তিনি বলেন, “সুষ্ঠু, সুন্দর, অবাধ এবং বিশ্বাসযোগ্য একটি নির্বাচন উপহার দেওয়ায় আমার মূল লক্ষ্য এবং সেটা করতে গিয়ে আমার যা যা করা লাগবে তা-ই আমি করবে। সুন্দর ও অবাধ নির্বাচন করার সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে আমার।”
অবাধ নির্বাচন আয়োজনে কোনও চ্যালেঞ্জ দেখছেন কিনা জানতে চাইলে নতুন সিইসি বলেন, “জীবনে চ্যালেঞ্জ থাকবেই। আমার চাকরির জীবনটাই তো চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে গেছে। যে মন্ত্রণালয় চালাইছি- তথ্য মন্ত্রণালয়, জ্বালানি মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আমার তো হাজারো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই আগাইতে হইছে না? সুতরাং চ্যালেঞ্জকে আমি ভয় পাই না।”
তিনি বলেন, “এখন আপনারা যেসব চ্যালেঞ্জ দেখতেছেন, ভবিষ্যতে হয়ত তার চেয়ে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জ আসতে পারে। কিন্তু যতই চ্যালেঞ্জ আসবে আমরা মোকাবিলা করবো। সকল অংশীজনকে সঙ্গে নিয়ে সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই অভিষ্ট লক্ষ্যেই এগিয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ, এই বিশ্বাস আমার আছে।”
শপথ নেওয়ার পর অবাধ নির্বাচন আয়োজনের রূপরেখা তুলে ধরবেন বলেও সকাল সন্ধ্যাকে জানান এ এম এম নাসির উদ্দীন।
বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা পৃথক প্রজ্ঞাপনে পাঁচ সদস্যের কমিশন গঠনের কথা জানানো হয়।
অপর চার নির্বাচন কমিশনার হলেন- অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ আবদুর রহমানেল মাসুদ, অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব বেগম তহমিদা আহমদ ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।
ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে শূন্যতা পূরণে দেশে গঠন করা হয় অন্তর্বর্তী সরকার। গত ৮ আগস্ট নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সব দপ্তরের শীর্ষ পদে আসে পরিবর্তন। পাশাপাশি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারাও পদত্যাগ করে সরে দাঁড়ান।
এর ধারাবাহিকতায় গত ৫ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করে বিদায় নেয় কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশন।
নতুন সিইসি নাসির উদ্দীনের বাড়ি কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায়, জন্ম ১৯৫৩ সালের ১ জুলাই। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর করার পর ১৯৭৭ সালে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন শিক্ষক হিসেবে।
নাসির উদ্দীন দুই বছর পর বিসিএসের ৭৯ ব্যাচে যোগ দেন প্রশাসন ক্যাডারে। দীর্ঘ কর্মজীবনে তথ্য সচিব, জ্বালানি সচিব, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি অবসরে যান ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে।