উপদেষ্টা হিসাবে ব্রিটিশ আইনজীবী টবি ক্যাডম্যানকে পেয়ে উচ্ছ্বসিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম।
আওয়ামী লীগ সরকার আমলে এই ট্রাইব্যুনালে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারের সময় তাদের অবস্থান ছিল আসামিদের পক্ষে; রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর দুজনই এখন চলে এলেন ভিন্ন পাশে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচারে ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করে গত সেপ্টেম্বর মাসে তাজুলকে প্রধান প্রসিকিউটর পদে নিয়োগ দেয়।
বৃহস্পতিবার ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয় থেকে আসা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টবি ক্যাডম্যানকে বিশেষ প্রসিকিউটরিয়াল অ্যাডভাইজার হিসাবে নিয়োগের তথ্য জানানো হয়।
আওয়ামী লীগ আমলে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হলে বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে বারবারই প্রশ্ন তুলে আলোচিত ছিলেন টবি ক্যাডম্যান।
ওই বিচারের জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের দণ্ড হয়। ট্রাইব্যুনালে জামায়াত নেতাদের আইনজীবী ছিলেন তাজুল।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার দলের শীর্ষনেতাদের বিচার এই ট্রাইব্যুনালেই করার উদ্যোগ নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। জুলাইয়ে গণহত্যার অভিযোগে তাদের কয়েকজনকে এরই মধ্যে ট্রাইব্যুনালে হাজিরও করা হয়েছে।
এই বিচার প্রক্রিয়ায় টবি ক্যাডম্যানের সহযোগিতা পাওয়াকে তাজুল ন্যায়বিচার নিশ্চিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চলমান প্রচেষ্টার একটি উল্লেখযোগ্য ‘মাইলফলক’ অভিহিত করেছেন বলে বাসস জানিয়েছে।
তাজুল বলেন, “ক্যাডম্যানের এ নিয়োগ আন্তর্জাতিক নিয়ম এবং অনুশীলনসমূহ মেনে চলার পাশাপাশি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে ট্রাইব্যুনালের যে নিষ্ঠা আছে, তার পরিচয় বহন করে। ভুক্তভোগীদের ব্যাপারে সঠিকভাবে জানতে, তাদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারের জটিল সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তার অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা ট্রাইব্যুনালের জন্য অত্যন্ত সহায়ক হবে।”
আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন এবং মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ হিসাবে ক্যাডম্যানের পরামর্শ ট্রাইব্যুনালের কাজ গতিশীল করতে ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদী তাজুল।
তিনি বলেন, “কেস ম্যানেজমেন্ট, তদন্ত এবং বিচার কৌশলে তার দক্ষতা নিঃসন্দেহে ট্রাইব্যুনালের কার্যাদেশ কার্যকর ও স্বচ্ছভাবে পালনের ক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করবে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক আইনি কাঠামো সম্পর্কে তার অভিজ্ঞতা ট্রাইব্যুনালের ন্যায়বিচার, জবাবদিহি ও মানবাধিকার সুরক্ষার বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত মানগুলিকে সমুন্নত রাখবে।
“ক্যাডম্যানের সম্পৃক্ততা ট্রাইব্যুনালের ফলাফলের প্রতি জনগণের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াবে এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দায়মুক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বৈশ্বিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের অবস্থানকে শক্তিশালী করবে।”
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারের সময় টবি ক্যাডম্যানকে জামায়াতে ইসলামীর লবিস্ট হিসাবে দেখাতেন আওয়ামী লীগের নেতারা। তারা দাবি করতেন, ক্যাডম্যান যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নিয়ে ট্রাইব্যুনালকে প্রশ্নবিদ্ধ করার প্রয়াস চালাচ্ছিলেন।