Beta
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪
Beta
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪
ভয়েস অব আমেরিকার জরিপ

এক বছরের মধ্যে নির্বাচন চায় বেশিরভাগ মানুষ

দায়িত্ব গ্রহণের পর সাড়ে ৩ মাস পার হলেও নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় জানাতে পারেনি অন্তর্বর্তী সরকার। ফাইল ছবি
দায়িত্ব গ্রহণের পর সাড়ে ৩ মাস পার হলেও নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় জানাতে পারেনি অন্তর্বর্তী সরকার। ফাইল ছবি
[publishpress_authors_box]

আগামী এক বছরের মধ্যে দেশে পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়া উচিত বলে মনে করে বেশিরভাগ মানুষ। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকার এক জরিপে উঠে এসেছে এমন তথ্য।

প্রায় এক মাস আগে অক্টোবরের ১৩ থেকে ২৭ তারিখ পর্যন্ত ভয়েস অব আমেরিকা বাংলার এডিটোরিয়াল নির্দেশনা অনুযায়ী গবেষণা ও জরিপ প্রতিষ্ঠান ওআরজি-কোয়েস্ট রিসার্চ লিমিটেড এই জরিপ চালায়।

শনিবার ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা সংস্করণে প্রকাশ করা জরিপের ফলে দেখা গেছে, ৬১ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ মনে করে আগামী এক বছরের মধ্যে পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়া উচিত। অন্যদিকে, জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ মনে করে, পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়া উচিত ২ থেকে ৩ বছরের মধ্যে।

এছাড়া জরিপে অংশগ্রহণকারী ৮ দশমিক ৬ শতাংশ ১৮ মাসের মধ্যে এবং ৫ দশমিক ৮ শতাংশ ৪ বছর পর নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে মত দেন।

জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যারা এক বছরের মধ্যে নির্বাচন চান, তাদের মধ্যে নারীদের সংখ্যাই বেশি। ৬৫ শতাংশ নারীই এক বছরের মধ্যে ভোট চান, যেখানে পুরুষদের মধ্যে এই হার ৫৭ দশমিক ৩ শতাংশ।

অন্যদিকে, তরুণ জনগোষ্ঠী দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে মত দিয়েছেন। জরিপে অংশ নেওয়া ৬২ দশমিক ৪ শতাংশ তরুণই বলেছেন তারা এক বছরের মধ্যে ভোট চান, যাদের বয়স ১৮ থেকে ৩৪ বছরের মধ্যে। ৩৫ বছর বা তার বেশি বয়সী মানুষের ৫৯ দশমিক ৮ শতাংশ এক বছরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শূন্যতা পূরণে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয় গত ৮ আগস্ট।

এক বছরের মধ্যে নির্বাচন চাওয়া মানুষের মধ্যে শহরের ও গ্রামের বাসিন্দার সংখ্যা প্রায় সমান বলে উঠে এসেছে জরিপে। এতে দেখা গেছে, শহরের ৬০ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ এবং গ্রামের ৬১ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ এক বছরের মধ্যে ভোট চায়।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের আগেই ভেঙে দেওয়া হয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ। সংসদ ভেঙে দেওয়ার পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে সংবিধানে।

তবে দায়িত্ব গ্রহণের পর সাড়ে ৩ মাসের বেশি পেরিয়ে গেলেও অন্তর্বর্তী সরকার এখন পর্যন্ত নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় জানাতে পারেনি। তারা বলছে, প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করেই নির্বাচন আয়োজন করা হবে।

সম্প্রতি কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ চার বছর বা তার কম হতে পারে।

এমন পরিস্থিতিতে শনিবার ভয়েস অব আমেরিকা যে জরিপের ফল প্রকাশ করল, তাতে দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের পক্ষেই মানুষের মত উঠে এসেছে।

ভয়েস অব আমেরিকা বলছে, তাদের ঠিক করে দেওয়া সুনির্দিষ্ট প্রশ্নমালার ভিত্তিতে কম্পিউটারের সহায়তায় দেশের আটটি বিভাগে ১৮ বছর বা এর চেয়ে বেশি বয়সী এক হাজার মানুষের ওপর টেলিফোনভিত্তিক জরিপটি চালানো হয়।

জরিপটির উত্তরদাতারা প্রায় একমাস আগে তাদের মতামত জানিয়েছেন বিধায় এখন জরিপটি করলে এর ফলাফল অনেকক্ষেত্রেই ভিন্ন হতে পারেও মনে করে ভয়েস অব আমেরিকা।

সংস্কারের পরেই নির্বাচনের পক্ষে মানুষ

জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৬৫ দশমিক ৯ শতাংশ উত্তরদাতাই জানিয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার যা যা সংস্কার করা প্রয়োজন মনে করবে তার সবগুলো করার পরই নির্বাচন আয়োজন করা উচিত বলে তারা মনে করেন।

অন্যদিকে, শুধু নির্বাচন সংক্রান্ত জরুরি সংস্কারগুলো শেষ করে নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে মত দেন ৩১ দশমিক ৯ শতাংশ উত্তরদাতা।

সব সংস্কারের পর নির্বাচনে আয়োজনের পক্ষ মত দেওয়া উত্তরদাতাদের মধ্যে নারী ও পুরুষের সংখ্যা প্রায় সমান। ৬৬ দশমিক ৭ শতাং পুরুষ ও ৬৫ দশমিক ১ শতাংশ নারী এর পক্ষে মত দেন।

এছাড়া একই মত পোষণ করা তরুণ (১৮-৩৪ বছর) ও বয়স্কদের (৩৫ বছর বা তার বেশি) সংখ্যাও প্রায় সমান। তরুণ উত্তদাতাদের ৬৫ দশমিক ১ শতাংশ এবং বয়স্কদের ৬৬ দশমিক ৮ শতাংশ সব সংস্কারের পর নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে মত দিয়েছেন।

উত্তরদাতাদের মধ্যে যারা সব সংস্কার শেষে নির্বাচন চান তাদের বেশিরভাগই বিচার বিভাগ, সংবিধান, অর্থনৈতিক খাত, পুলিশ, ও নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত সংস্কারের পক্ষে মত দিয়েছেন।

জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৯৬ দশমিক ৫ শতাংশ নির্বাচন কমিশন সংস্কারের পক্ষে, ৯২ দশমিক ৩ শতাংশ পুলিশ সংস্কারের পক্ষে, ৯৫ দশমিক ৩ শতাংশ বিচার বিভাগ সংস্কারের পক্ষে, ৯৬ দশমিক ৪ শতাংশ অর্থনৈতিক খাত সংস্কারের পক্ষে এবং ৯২ দশমিক ৫ শতাংশ সংবিধান সংস্কারের পক্ষ মত দিয়েছেন।

আগেই ভালো ছিলাম না কি এখন ভালো আছি?

জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৫৮ দশমিক ৪ শতাংশ মনে করে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের তুলনায় অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনায় ভালো করছে।

অন্যদিকে ৪০ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষের মতে, অন্তর্বর্তী সরকার দেশ শাসনে আওয়ামী লীগের চেয়ে খারাপ করছে বা একই রকম পারফর্ম করছে। এদের মধ্যে ২০ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকার আগের সরকারের চেয়ে দেশ শাসনে খারাপ করছে এবং ২০ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ মনে করেন, পরিস্থিতিতে কোনও বদল আসেনি, অর্থাৎ আগের মতোই রয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগ সরকারের চেয়ে ভালো করছে বলে মত দিয়েছে জরিপে অংশগ্রহণকারী ৬৩ দশমিক ২ শতাংশ উত্তরদাতা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে খারাপ হয়েছে বলে মনে করে উত্তরদাতাদের ২১ দশমিক ৪ শতাংশ। আর ১৪ দশমিক ৫ শতাংশের মতে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের মতোই রয়েছে।

এদিকে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বেশি নিরাপদ বোধ করতেন না কি এই সরকারের আমলে বেশি বা একই রকম নিরাপদ বোধ করছেন– এমন প্রশ্নে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের প্রায় অর্ধেক (৪৯ দশমিক ৮ শতাংশ) উত্তরদাতাই জানিয়েছে, তারা আগের চেয়ে বেশি নিরাপদ বোধ করছেন।

অন্যদিকে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ২৩ শতাংশ বলছে, তারা আওয়ামী লীগের আমলে এখনকার বেশি নিরাপদ বোধ করতেন। আর ২৬ দশমিক ১ শতাংশ মনে করে, পরিস্থিতি আগের মতোই রয়েছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত