মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সামরিক বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির চলমান যুদ্ধের মধ্যে এবার গুলি এসে পড়েছে বাংলাদেশে।
শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের দমদমিয়ার বাসিন্দা আব্দুর রহিমের বাড়ির আঙিনায় গুলিটি উড়ে এলেও তাতে কেউ আহত হয়নি। যদিও সীমান্ত পেরিয়ে গুলি প্রবেশের ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন স্থানীয়রা।
বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সীমান্ত এলাকার মানুষের তথ্য অনুযায়ী, রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরে জান্তা বাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির মধ্যে যুদ্ধের তীব্রতা বেড়েছে। দু’পক্ষই একে অন্যকে লক্ষ্য করে টানা গুলি ছুড়ছে। এছাড়া ছোড়া হচ্ছে মর্টার শেল ও গ্রেনেড।
মিয়ানমারের ভেতরের এই সংঘর্ষের রেশ লাগছে সীমান্তবর্তী বাংলাদেশেও। যুদ্ধের তীব্রতা বাড়লেই বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে কেঁপে উঠছে সীমান্ত লাগোয়া গ্রামগুলো। এর আগেও মিয়ানমারে যুদ্ধের রেশ হিসেবে বাংলাদেশে এসেছে মর্টার শেল ও গুলি। ফলে ওপারে যুদ্ধের তীব্রতা বাড়লে এপারে বাড়ে আতঙ্ক।
গত কয়েক মাস ধরে এই পরিস্থিতির সঙ্গে লড়ছেন কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত এলাকার মানুষ। স্থানীয়রা বলছে, শুক্রবার রাতেও থেমে থেমে বিকট শব্দ ভেসে আসে ওপার থেকে, যা টানা শনিবার দুপুর পর্যন্ত চলে।
এর মধ্যে শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হ্নীলা ইউনিয়নের একটি বাড়ির আঙিনায় একটি গুলি এসে পড়ে। এতে কোনও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছেন হ্নীলার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মোহাম্মদ আলী।
কাতার থেকে সাত মাস পর টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপে নিজের বাড়ি এসেছেন ড. হাবিবুর রহমান। তিনি কাতারের রাজপ্রাসাদে গবেষক ও ইতিহাস বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেন। শনিবার ভোরে বোমার শব্দে কেঁপে ওঠে তার বাড়িও।
তিনি বলেন, “প্রায় সাত মাস পর জন্মভূমিতে এসেছি। ভোররাতে বোমার বিকট বিস্ফোরণের শব্দে আমার বাড়ি কেঁপে ওঠে। সমস্যা মিয়ানমারের হলেও টেকনাফের বাসিন্দাদের নানা ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
“স্থানীয়রা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ বিষয়ে সরকারিভাবে ব্যবস্থা নেওয়া খুবই জরুরি।”
মিয়ানমার থেকে আসা বিস্ফোরণের শব্দের বিষয়ে শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা আলী আহমদ বলেন, “থেমে থেমে ভারি গোলার শব্দ এপারে শোনা যাচ্ছে। এ কারণে সীমান্ত এলাকায় অযথা না যাওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।”
শুক্রবার রাতে বিস্ফোরণের শব্দে বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে জানিয়ে টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোহাম্মদ শরিফ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “সীমান্ত এলাকার মানুষ আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। এভাবে আর কতদিন চলবে?”
সীমান্তে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আবারও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে বলে মনে করছেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ উল্লাহ নেজামী।
তিনি বলেন, “মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যার সুযোগে যাতে ফের রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ না ঘটে, সেজন্য সীমান্তে বিজিবি ও কোস্টগার্ডের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।”