ক্রিপ্টোকারেন্সি বিটকয়েনের দাম বাড়তে বাড়তে রেকর্ডের পর্যায়ে পৌঁছেছে। আর কিছু দাম বাড়লেই বিটকয়েন প্রতি এক লাখ ডলারের মাইলফলক ছুয়ে ফেলবে।
রয়টার্স বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেন আরও সহজ হবে, এমন প্রত্যাশা থেকেই বিটকয়েনের মূল্য বাড়ছে।
মোটের উপর এ বছর বিটকয়েনের মূল্য দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। ৫ নভেম্বর ট্রাম্পের জয়ের পর প্রায় ৪৫ শতাংশ মূল্য বাড়ে।
উর্দ্ধগতির মধ্যেই শুক্রবার বিটকয়েনের মূল্যবৃদ্ধি কিছুটা ধীরগতির ছিল। শুরুতে এটি ৯৯ হাজার ৮০০ ডলার পর্যন্ত ওঠে। পরে সামান্য কমে ৯৯ হাজার ৩৮৩ ডলারে এসে স্থিতিশীল হয়। সেদিন বিটকয়েনের মূল্য বাড়ে ১ দশমিক ৩৩ শতাংশ।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, বিটকয়েন টানা তিন সপ্তাহ ধরে ১০ শতাংশের বেশি মুনাফায় রয়েছে। বলা হচ্ছে, আসছে ফেব্রুয়ারির পর এটি আরও বাড়বে।
ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতিতে মুনাফার মুখোমুখি হওয়া সম্পদের মধ্যে বিটকয়েনের অবস্থান এখন শীর্ষে। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে ১৬ বছর আগে তৈরি হওয়া ক্রিপ্টোকারেন্সি বিটকয়েন এখন মূলধারার লেনদেনে গ্রহণযোগ্যতার দুয়ারে দাড়িয়ে।
এএমপি সিডনির প্রধান অর্থনীতিবিদ শেইন অলিভার বলেন, “বিটকয়েন যত বেশি সময় ধরে বাজারে থাকবে, ততই এর গুরুত্ব বাড়বে। একজন অর্থনীতিবিদ ও বিনিয়োগকারী হিসেবে এটা আমার এক ধরনের অনুমান। কারণ এটি নিয়ে মূল্যায়ন করা কঠিন। তবে এর যে গতি, তা উর্দ্ধমুখী।”
অলিভারের কথা আসলেই সত্যি। এ বছর বিটকয়েনের মূল্য প্রায় ১৩০ শতাংশ বেড়েছে।
ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচারে ডিজিটাল সম্পদকে সমর্থন দেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘পৃথিবীর ক্রিপ্টো রাজধানী’ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এছাড়া বিটকয়েনকে জাতীয় পর্যায়ে মজুত করার কথাও তিনি বলেছেন। অথচ ট্রাম্প ২০১৬ সালের দিকে ছিলেন ক্রিপ্টোকারেন্সি বিরোধী।
ক্রিপ্টো বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, ট্রাম্পের কল্যাণে ক্রিপ্টোকারেন্সির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) বাড়তি নজরদারির অবসান হবে। গত বৃহস্পতিবার সংস্থাটির চেয়ারম্যান গ্যারি গেন্সলার জানান, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর তিনি পদত্যাগ করবেন।
গেন্সলারের অধীনে কয়েনবেইস, ক্র্যাকেন, বাইন্যান্সসহ কয়েকটি ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জের বিরুদ্ধে মামলা করে এসইসি। এতে বলা হয়, এসব প্রতিষ্ঠান এসইসিতে নিবন্ধন না করে কমিশনের নিয়ম ভঙ্গ করেছে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
তবে, এই বছর জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে বিটকয়েনের এক্সচেঞ্জ-ট্রেডেড ফান্ড (ইটিএফ) অনুমোদিত হওয়ায় বাজারে সুবিধা হয়েছে।
ইটিএফ হলো এমন একটি ধরনের আর্থিক পণ্য, যা শেয়ারের মতো স্টক এক্সচেঞ্জে কেনা-বেচা করা হয়। এটি বিভিন্ন ধরনের সম্পদ (যেমন স্টক, বন্ড, বা কমোডিটি) একত্রে সংগ্রহ করে একটি পুল তৈরি করে। বিনিয়োগকারীরা সেই পুলের অংশ কিনতে পারেন।
বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষার কথা ভেবে এসইসি অনেকদিন ধরে বিটকয়েনের উপর ভিত্তি করে ইটিএফ অনুমোদন বন্ধ করতে চেষ্টা করেছিল।
নির্বাচনের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে তালিকাভুক্ত বিটকয়েন এক্সচেঞ্জ-ট্রেডেড ফান্ডে ৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ এসেছে।
তথ্যসূত্র : রয়টার্স।