পর্যটকদের কল্যাণে গত কয়েক বছর ধরে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে কিশোরগঞ্জের ইটনা-মিঠামইন সড়ক। হাওরের বুক চিরে চলে যাওয়া দীর্ঘ সড়ক, বর্ষায় সেই সড়কের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া পানির দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কারণে বেশিরভাগ মানুষের কাছেই পরিচিত।
সড়কটি মূলত কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলের তিন উপজেলা ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রামের মানুষের বছরভর চলাচলের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সাব-মার্সিবল সড়কটির আরেক নাম অল ওয়েদার রোড।
২০২০ সালের ৮ অক্টোবর গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ইটনা-মিঠামইন সড়কের উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মূলত সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের ইচ্ছা অনুযায়ীই এই সড়কটি তৈরি করে আওয়ামী লীগ সরকার।
যদিও শুরু থেকেই পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা সড়কটির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছিলেন। সড়কটি নিয়ে উঠছিল নানা সমালোচনা। পরে এক সভা শেষে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে এমন অবকাঠামো আর নির্মাণ করা যাবে না।
২০২২ সালে সিলেটে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার পর অনেকেই ইটনা-মিঠামইন সড়কটিকে দায়ী করতে শুরু করেন। বলা হচ্ছিল, সড়কটির কারণে বন্যার পানি নামতে পারছে না, সুরমা নদীর পানি প্রবাহও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তা বন্যার ভয়াবহতা বাড়াচ্ছে।
সবশেষ চলতি বছরের জুনের বন্যার পরও আলোচনায় আসে সড়কটি।
এমন পরিস্থিতিতে সিলেটকে বন্যার কবল থেকে রক্ষা করতে ইটনা-মিঠামইন সড়কের বেশ কিছু অংশ ভেঙে পানি প্রবাহের রাস্তা করা হবে বলে জানালেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ফরিদা আক্তার।
শনিবার সকালে সিলেটের একটি কনভেনশন সেন্টারে ‘মৎস্য সম্পদ রক্ষায় স্টেকহোল্ডারস কনসাল্টেশন’ শীর্ষক কর্মশালায় একথা জানান তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, “সিলেটের নদনদীর অবাধ পানি প্রবাহ নিশ্চিত করতে ও সিলেটকে বন্যার কবল থেকে রক্ষা করতে প্রয়োজনে সড়কটির কিছু অংশ ভেঙে ফেলা হতে পারে। এজন্য আন্তঃমন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিয়ে উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হবে।”
নির্বিচারে হাওর ভরাটের মাধ্যমে, আধুনিকতার নামে হাওরে অপরিকল্পিতভাবে বাঁধ, রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হাওর ও মৎসসম্পদ। ব্যাহত হয়েছে পানিপ্রবাহ।
সিলেট মৎস্য অধিদপ্তর আয়োজিত কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এটিএম মোস্তফা কামাল। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার আবু আহমদ ছিদ্দীকী।
কর্মশালায় সিলেটের জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিভিন্ন জেলার মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা অংশ নেন।