আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে (কপ২৯) বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোকে বছরে কমপক্ষে ৩০০ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিতে রাজি হয়েছে ধনী দেশগুলো।
উদ্দেশ্য, এর মধ্য দিয়ে দরিদ্র দেশগুলো তাদের অর্থনীতি আরও পরিবেশবান্ধব করবে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুতি নেবে।
জলবায়ু সম্মেলনে ধনী দেশগুলোর এই ৩০০ বিলিয়ন ডলারের অর্থসহায়তা নিয়ে অবশ্য অসন্তোষ প্রকাশ করেছে ১৩৪টি উন্নয়নশীল দেশ। অর্থসহায়তা সংক্রান্ত আলোচনা থেকে কয়েকটি দেশের প্রতিনিধি ওয়াক আউটও করে।
তারা বলছে, এই অর্থসহায়তা আগের ১০০ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতির চেয়ে বেশি হলেও ধনী দেশগুলোর কাছে ১৩৪টি উন্নয়নশীল দেশের দাবি করা সহায়তার চেয়ে বেশ কম।
খরা, বন্যা, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ও অতিমাত্রায় উষ্ণতা মোকাবেলায় ১ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলার সহায়তা চেয়েছিল উন্নয়নশীল দেশগুলো।
জলবায়ু পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে চরম আবহাওয়ার কারণে তাদের যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ করা এবং পৃথিবীর উষ্ণায়নে ভূমিকা রাখা জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বাড়ানোর অংশ হিসেবে এই পরিমাণ অর্থসহায়তা চেয়েছিল তারা।
২০১৫ সালে করা প্যারিস জলবায়ু চুক্তি অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে অর্থসহায়তা দিতে বাধ্য ধনী দেশগুলো। কারণ ধনীর দেশগুলোর মাত্রাতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণই তাদের ঝুঁকিতে ফেলেছে।
বাকুতে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলন থেকে দরিদ্র দেশগুলো আশা করেছিল, তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী অর্থসহায়তা দেবে ধনী দেশগুলো। তা না হওয়ায় সম্মেলনে যোগ দেওয়া দরিদ্র দেশগুলোর প্রতিনিধিরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে।
ভারতের প্রতিনিধি লীনা নন্দন চুক্তিটিকে ‘বিভ্রম’ হিসেবে অভিহিত করে আল জাজিরাকে বলেছেন, “প্রস্তাবিত সহায়তা অত্যন্ত নগণ্য। জলবায়ু মোকাবেলায় ৩০০ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা খুবই অপ্রতুল।
“এই চুক্তি দৃষ্টিভ্রম ছাড়া আর কিছুই নয়। জলবায়ু পরিবর্তন ঘিরে আমরা সবাই যে বিশাল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, তা এই অর্থসহায়তা দিয়ে মোকাবেলা করা সম্ভব বলে মনে করি না।”
বাকুতে শনিবার জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় দরিদ্র দেশগুলোকে কী পরিমাণ অর্থসহায়তা দেওয়া যেতে পারে, এনিয়ে আলোচনায় বসে ধনী, দরিদ্র থেকে শুরু করে স্বল্পোন্নত দেশগুলো।
আলোচনার একপর্যায়ে সেখান থেকে উঠে চলে যায় ছোট দ্বীপ রাষ্ট্র ও স্বল্পোন্নত বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা। পরে তারা সংবাদমাধ্যমকে জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাদের যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন, তা আলোচনায় গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছিল না। এ কারণেই তাদের ওয়াক আউট।
এ বিষয়ে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিতে হুমকিতে থাকা দেশগুলোর জোট অ্যালায়েন্স অব স্মল আইল্যান্ড স্টেটসের চেয়ারম্যান সেড্রিক শুস্টার বলেন, “আমরা আলোচনা থেকে ওয়াক আউট করেছি। আমরা এই কপ২৯ সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলাম ন্যায্য চুক্তির আশায়। কিন্তু আমাদের মনে হয়েছে, সম্মেলনে আমাদের কথা শোনা হচ্ছে না।”
একই কথা বলেন স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) চেয়ারম্যান ইভান্স নজেওয়া। তিনি বলেন, “৩০০ বিলিয়ন ডলারের এই চুক্তি আমরা গ্রহণ করছি না। অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর সঙ্গে কথা বলে করণীয় সম্পর্কে আমাদের সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার।”
কপ২৯ সম্মেলনে দরিদ্র দেশগুলোকে ধনী দেশগুলোর দিতে চাওয়া অর্থসহায়তা সংক্রান্ত আলোচনা থেকে উঠে আসা এক ধরনের প্রতিবাদ ছিল কি না, এ প্রশ্ন রাখা হয় কলম্বিয়ার পরিবেশমন্ত্রী সুসানা মোহামেদের কাছে।
জবাবে তিনি বার্তা সংস্থা এপিকে বলেন, “আলোচনার মাঝপথ থেকে চলে আসাকে আমি অসন্তোষ হিসেবে দেখছি। চুক্তি নিয়ে আমরা খুবই অসন্তুষ্ট।”
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, চুক্তি সংক্রান্ত আলোচনা শেষে যুক্তরাষ্ট্রের জলবায়ু দূত জন পোডেস্টা আলোচনা কক্ষ থেকে বের হয়ে এলে তাকে ঘিরে ধরে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করে জলবায়ুকর্মীরা।
তারা সেসময় অভিযোগ করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র তাদের ন্যায্য হিস্যা দিচ্ছে না।
আলোচনা থেকে দরিদ্র দেশগুলোর ওয়াক আউটের পর কপের প্রেসিডেন্ট মুখতার বাবায়েভ শনিবার রাতে বলেন, “আমি জানি, আমাদের কেউই সুফল ছাড়া বাকু ছাড়তে চাইবে না।”
এসময় সব দেশকে নিজেদের মধ্যকার দূরত্ব কমানোর আহ্বান জানান কপের প্রেসিডেন্ট বাবায়েভ।