ছন্দে ছিলেন না বিরাট কোহলি। টেস্টে সবশেষ সেঞ্চুরি ১৫ ইনিংস আগে। এবারের অস্ট্রেলিয়া সফরে ব্যর্থ হলে দল থেকে বাদ পড়ার শঙ্কাও ছিল তার। তবে এই কিংবদন্তি আরও একবার প্রমাণ করলেন নিজেকে। অস্ট্রেলিয়ায় যেখানে ধুঁকতে থাকেন উপমহাদেশের ব্যাটাররা সেখানেই করলেন রেকর্ড সপ্তম টেস্ট সেঞ্চুরি। ৩৬৯ দিন পর এটা প্রথম সেঞ্চুরি তার।
উপমহাদেশের ব্যাটারদের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ায় শচীন টেন্ডুলকারের সেঞ্চুরি ছিল ছয়টি। পার্থে তাকে ছাড়িয়ে কোহলির সেঞ্চুরি এখন সাতটি। শচীন অস্ট্রেলিয়ায় খেলেছিলেন ২০ টেস্ট আর কোহলি কেবল ১৪টি।
সব ফরম্যাট মিলিয়ে এটা অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে কোহলির ১০ম সেঞ্চুরি। সফরকারী দলের আর কেউ অস্ট্রেলিয়ায় পাননি এত বেশি সেঞ্চুরি। তাই অস্ট্রেলিয়াকে দ্বিতীয় বাড়ি বলতেই পারেন কোহলি!
টেস্টে এটা তার ৩০তম সেঞ্চুরি। তাতে পেছনে ফেলেছেন ডন ব্র্যাডম্যানের ২৯ টেস্ট সেঞ্চুুরির কীর্তি । আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবমিলিয়ে ৮১তম সেঞ্চুরি। দীর্ঘ সেঞ্চুরি খরা কাটানোর পর আবেগি হয়ে পড়েছিলেন কোহলি। লাবুশেনের তৃতীয় বলে ডিপ ফাইন লেগ দিয়ে বাউন্ডারি মেরে পৌঁছান তিন অঙ্কে।
তবে বলটা বাউন্ডারি হয়েছে কিনা নিশ্চিত ছিলেন না শুরুতে। নিশ্চিত হতেই আকাশে দুই হাত তুলে চুমু দেন ব্যাটে। গ্যালারিতে থাকা স্ত্রী আনুশকা শর্মার দিকে ছুড়ে দিচ্ছিলেন উড়ন্ত চুম্বন। জবাব দিচ্ছিলেন ভক্তদের অভিবাদনেরও।
প্রথম ইনিংসের বিপর্যয় কাটিয়ে ভারত দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করেছে ৬ উইকেটে ৪৮৭ রান। তাদের লিড ৫৩৩ রানের। কোহলির সেঞ্চুরির পরই ইনিংস ঘোষণা করেন জাসপ্রিত বুমরা। ১৪৩ বলে ৮ বাউন্ডারি ২ ছক্কায় ১০০ রানে অপরাজিত ছিলেন কোহলি।
জিততে হলে অস্ট্রেলিয়াকে করতে হবে ৫৩৪ রান। টেস্ট ইতিহাসে এত রান তাড়া করে জেতেনি কোন দল। ২০০৩ সালে অ্যান্টিগায় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সর্বোচ্চ ৪১৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জিতেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পার্থে তাদের জয়টা যে প্রায় অসম্ভব বোঝা গেছে তৃতীয় দিন শেষেই। ১২ রানে ৩ উইকেট হারিয়েছে তারা। দুই উইকেট জাসপ্রিত বুমরার অপরটি মোহাম্মদ সিরাজের। জয়ের জন্য এখনও ৫২২ রান দরকার প্যাট কামিন্সের দলের।
এর আগে ১৫০ ছড়ানো ইনিংস খেলে শচীন টেন্ডুলকারের আরেকটি রেকর্ডে ভাগ বসিয়েছেন যশস্বী জয়সওয়াল। ২২ বছর ৩৩২ দিন বয়সে টেস্ট ক্যারিয়ারে চতুর্থবার ১৫০ রানের বেশি ইনিংস খেললেন জয়সওয়াল।
বয়স ২৩ হওয়ার আগে ৪ বার ১৫০ বা বেশি রানের ইনিংস খেলেছেন শচীন টেন্ডুলকার, গ্রায়েম স্মিথ আর জাভেদ মিয়াঁদাদের। তবে ২৩ পূর্ণ হওয়ার আগে সবচেয়ে বেশি ৫ বার ১৫০ স্পর্শ করার বিশ্ব রেকর্ডটি ডন ব্র্যাডম্যানের।
জয়সওয়াল আউট হয়েছেন ২৯৭ বলে ১৫ বাউন্ডারি ৩ ছক্কায় ১৬১ রানে। টেস্টে এটা তার চতুর্থ সেঞ্চুরি আর অস্ট্রেলিয়া সফরে প্রথম টেস্টেই স্পর্শ করলেন তিন অঙ্ক। সেঞ্চুরি করেছিলেন আবার আপার কাটে ছক্কা মেরে। মিচেল স্টার্কের মতো বোলারকে স্লেজিং করে বলেছেন, ‘‘বল আস্তে আসছে তো, গতি বাড়াও!’’
উদ্বোধনী উইকেটে লোকেশ রাহুলের সঙ্গে ২০১ রানের জুটি গড়েছিলেন জয়সওয়াল। মিচেল স্টার্কের বলে রাহুল আউট হন ৭৭ রানে। আর মিচেল মার্শের অফ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারিটি কাট করতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে স্মিথের হাতে তুলে দেন জয়সওয়াল। নাথান লায়ন নিয়েছেন ২ উইকেট।