পরিবেশ সুরক্ষিত রাখতে বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে থাকা দ্বীপ সেন্ট মার্টিন ভ্রমণে বিধিনিষেধ জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার। বেধে দেওয়া হয় পর্যটক প্রবেশের সীমা, নিষেধাজ্ঞা আসে রাত্রিযাপনে।
গত ২২ অক্টোবরে জারি করা এসব নিষেধাজ্ঞার কারণে ভোগান্তিতে পড়ে সেখানকার সাড়ে ১০ হাজার বাসিন্দা। তাদেরও নিজের বাসভূমিতে ঢুকতে কিংবা সেখান থেকে জরুরি প্রয়োজনে মূল ভূখণ্ডে যেতে নিতে হয় অনুমতি।
এসব নিষেধাজ্ঞার বেড়াজালে শুধু পর্যটক বা বাসিন্দা নয় ভোগান্তিতে পড়েছে সেন্ট মার্টিনে বসবাসকারী প্রাণীরাও।
প্রায় ৪ হাজার কুকুরের বিচরণ সেন্ট মার্টিন দ্বীপ জুড়ে। পর্যটকদের উচ্ছিষ্ট খাবার খেয়েই বাঁচত এসব কুকুর। কিন্তু এবার পর্যটকের যাতায়াত না থাকায় খাবারের সংকটে পড়েছে তারা। এরই মধ্যে খাদ্যাভাবে মারা গেছে অনেক কুকুর।
খাদ্য সংকটে থাকা এসব কুকুরের কাছে খাদ্যপণ্য ও চিকিৎসা সরঞ্জাম পৌঁছে দেওয়ার কাজ চালাচ্ছে সম্মিলিত প্রাণি রক্ষা পরিষদ নামে বেসরকারি একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
প্রথম দফায় ঢাকা থেকে তারা কুকুরের জন্য খাবার নিয়ে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে পৌঁছেছেন। খাবার সহায়তার পাশাপাশি ২০০ কুকুরের জন্য চিকিৎসা সরঞ্জামাদিও পাঠানো হয়েছে সংগঠনের পক্ষ থেকে।
রবিবার দুপুরে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ জেটি ঘাট থেকে সংগঠনের ১১ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল এসব সহায়তা নিয়ে রওনা দেয়।
খেতে না পেরে সেন্ট মার্টিনে অনেক কুকুর মারা যাচ্ছে, এমন খবর পেয়ে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান দলনেতা আব্দুল কাইয়ুম। প্রথম দফায় কুকুরের জন্য ৩ হাজার কেজি ডগফুড, ৫ হাজার ডিম, মুরগির মাংস, চাল, ডাল এবং ২০০ কুকুরের চিকিৎসা সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এদিন বিকালে সেন্ট মার্টিন পৌঁছার পরপরই ক্ষুধার্ত কুকুরগুলোকে প্রথমদিনের মতো খাবার দেওয়া শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে দ্বীপের বাকি কুকুরকে খাবার সহায়তা দেওয়া হবে।
আব্দুল কাইয়ুম বলেন, “আমাদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দুইজন চিকিৎসক ও একজন ভেট অ্যাসিস্ট্যান্ট রয়েছেন। আমরা নিজেরাই রান্না করে কুকুরগুলোকে খাবার খাওয়াবো।”
প্রাণীকূলের প্রতি মমতাশীল সবাইকে একাজে এগিয়ে আসার আহ্বানও জানান তিনি।
দ্বীপে প্রায় ৪ হাজার কুকুরের বাস জানিয়ে সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, “প্রবাল দ্বীপে পর্যটক সীমিত করার সিদ্ধান্তে স্থানীয় বাসিন্দাদের মতো বিপাকে পড়েছে কুকুরগুলোও। দ্বীপে আসা পর্যটকদের উচ্ছিষ্ট খাবার খেয়েই জীবন ধারণ করত এসব কুকুর। কিন্তু চলতি মৌসুমে পর্যটক যাতায়ত শুরু না হওয়ায় কুকুরগুলো খাবার সংকটে। ক্ষুধার্ত কুকুরগুলো প্রায়ই অনেককে আক্রমণ করছে।”
এরই মধ্যে খাবারের অভাবে কিছু কুকুর মারা গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, স্থানীয়রা জানিয়েছেন, প্রতিদিনই দ্বীপের কোথাও না কোথাও ক্ষুধার্ত কুকুরের মৃতদেহ পাওয়া যাচ্ছে। এ পর্যন্ত দ্বীপের বিভিন্ন এলাকায় আনুমানিক শতাধিক কুকুরের মৃত্যু হয়েছে।
পর্যটক আসতে না পারায় অনেক কুকুর না খেয়ে মারা যাচ্ছে, এতে পরিবেশের খুব ক্ষতি হচ্ছে বলে মনে করেন সেন্ট মার্টিনের বাসিন্দা নূর মোহাম্মদ। তার মতে, দ্বীপে থেকে কিছু কুকুর অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে গেলে ভালো হবে।
তবে খাদ্য সংকটে থাকা এসব কুকুরের জন্য উপজেলা প্রশাসনের অনুমতিতে খাবার নিয়ে যাওয়া খুবই ভালো উদ্যোগ বলে মন্তব্য করেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ উল্লাহ নেজামী।
এর আগে ২০২২ সালে কুকুরের সংখ্যা কমাতে সেন্ট মার্টিন থেকে ২ হাজার কুকুরকে শাহপরীর দ্বীপের গোলারচরে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল উপজেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর। সেই অনুযায়ী, ২০২২ সালের মার্চে ৩৬টি কুকুর খাঁচায় বন্দি করে দেশের মূল ভূখণ্ডের সর্বশেষ অংশ শাহপরীর দ্বীপে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু কয়েকটি পরিবেশবাদী সংগঠন এর বিরোধিতা করে। এরপর তাদের দাবির মুখে কুকুর স্থানান্তরের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।