ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধ বা বিধিনিষেধ আরোপে হাই কোর্টের দেওয়া আদেশের ওপর স্থিতাবস্থা দিয়েছে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। এতে এ ধরনের রিকশা চলায় আইনগত বাধা আপাতত কাটল।
গত ১৯ নভেম্বর ঢাকা মহানগর এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল তিন দিনের মধ্যে বন্ধের নির্দেশ এবং একইসঙ্গে এ ধরনের যান চলাচল বন্ধে কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি হবে না, তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করে হাই কোর্ট।
এ আদেশের পরদিন থেকেই ঢাকায় টানা বিক্ষোভ-অবরোধ করছেন ব্যাটারিচালিত রিকশার চালকরা; বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গেও তাদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
হাই কোর্টের ওই আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানি নিয়ে সোমবার আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতের বিচারপতি মো. রেজাউল হক সেক্ষত্রে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার আদেশ দেন। পাশাপাশি এ বিষয়ে হাই কোর্টের দেওয়া রুল এক মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। অপরদিকে রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার সানজিদ সিদ্দিকী এবং নাগরিক সমাজের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
চেম্বার আদালতের আদেশের বিষয়ে ব্যারিস্টার সানজিদ সিদ্দিকী সাংবাদিকদের বলেন, “চেম্বার আদালত হাই কোর্টের আদেশ স্থগিত করেননি, স্থিতাবস্থা বজায় রাখার আদেশ দিয়েছেন। যার অর্থ হচ্ছে, ঢাকা শহরে যেসব ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করছে, সেগুলো চলাচলে আইনগত কোনও বাধা নেই।”
ব্যাটারিচালিত রিকশার সঙ্গে লাখ লাখ মানুষের জীবিকা জড়িত—এ বিষয়টি অনুধাবন করে আদালত এ আদেশ দিয়েছে বলে জানান ব্যারিস্টার সানজিদ।
এই আইনজীবী বলেন, “এ বিষয়ে হাই কোর্টের দেওয়া রুল এক মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দিয়েছেন চেম্বার আদালত।”
আদালতে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, হাই কোর্টের আদেশ বজায় থাকলে যারা ব্যাটারিচালিত রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন, তাদের পরিবার-পরিজনসহ এর সঙ্গে লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা জড়িত। এসব মানুষ একটি কঠিন অস্থার মধ্যে পড়ে যাবে। যেখানে লাখ লাখ মানুষের জীবিকার প্রশ্ন, তা বিবেচনা করে হাই কোর্টের আদেশ স্থগিত করার আর্জি জানানো হয়েছে।
ব্যাটারিচালিত রিকশার বিষয়ে একটি বিধিমালা কিংবা আইনি কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসা যায় কি না—তা নিয়ে সরকারে সঙ্গে আলাপ করার কথাও আদালতকে জানান অ্যাটর্নি জেনারেল।
ব্যারিস্টার সানজিদ সিদ্দিকী বলেন, “ব্যাটারি রিকশা যদি আইনি কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসা হয়, তাতে আমাদেরও কোনও প্রশ্ন বা আপত্তি থাকবে না।”
এর আগে গত ১৯ নভেম্বর ঢাকা মহানগর এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল তিন দিনের মধ্যে বন্ধের নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট। প্যাডেলচালিত রিকশা মালিকদের তিনটি সংগঠনের ঐক্য জোটের নেতাদের এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেয় বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি মাহমুদুর রাজীর হাই কোর্ট বেঞ্চ।
স্বরাষ্ট্র সচিব, স্থানীয় সরকার সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের এ আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়।
একইসঙ্গে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধে কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি হবে না, সেই রুলও দেয় হাই কোর্ট।
আদালতের এ আদেশের পরদিন থেকেই ঢাকায় টানা বিক্ষোভ-অবরোধ করে আসছেন ব্যাটারি রিকশার চালকরা। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে আসছে তারা। এতে করে গত কয়েক দিন ধরে ঢাকায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গেও তাদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
এ পরিস্থিতিতে রবিবার (২৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ফরেন সার্ভিস একাডেমি মিলনায়তনে নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানান, ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধে হাই কোর্টের দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
এরপর সোমবার সকালে হাই কোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে চেম্বার আদালতে আবেদন জানায় রাষ্ট্রপক্ষ। সেই আবেদনের শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত ওই আদেশের ওপর স্থিতাবস্থা রাখতে বলায় কাটল ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলের বাধা।