সমালোচনার মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অধীন কর্মরত চিকিৎসকদের বছরে দুইবারের বেশি বিদেশে যেতে না পারার সিদ্ধান্ত বাতিল করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
সোমবার মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মোহম্মদ আব্দুল হাই স্বাক্ষরিত আরেক অফিস আদেশে এ কথা জানানো হয়েছে।
আদেশে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অধীন দপ্তর অথবা সংস্থায় কর্মরত চিকিৎসকদের বৈদেশিক সেমিনার, সভা, সিম্পোজিয়াম, প্রশিক্ষণ, কর্মশালা ইত্যাদিতে অংশগ্রহণের নীতিমালা বিষয়ে ২৪ নভেম্বরে জারি করা অফিস আদেশটি নির্দেশক্রমে বাতিল করা হলো।
২৪ ঘণ্টারও কম সময় আগে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অধীন কর্মরত চিকিৎসকরা বছরে দুইবারের বেশি বিদেশে যেতে পারবেন না জানিয়ে অফিস আদেশ জারি করে মন্ত্রণালয়। আগামী ১ জানুয়ারি থেকে সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হওয়ার কথা ছিল।
অফিস আদেশটি জারির পরপরই চিকিৎসকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম নেয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এর সমালোচনা করেন তারা। তারপরই সিদ্ধান্ত বাতিলের আদেশ আসে।
পাবনা মেডিকেল কলেজের নাক, কান ও গলা বিভাগের অধ্যাপক আহমদ তাউস প্রশ্ন রাখেন, যে অফিস আদেশ একদিন পর বাতিল করতে হয় সে আদেশ কেন জারি করা হয়। তিনি বলেন, “এসব ভুল আর অযৌক্তিক আদেশ মন্ত্রণালয়ের কাজকে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দেয়।”
যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদেরকে আইনের আওতায় আনা উচিত জানিয়ে তিনি বলেন, যারা এসব হাস্যকর আদেশ জারি করে, সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষা করতে হলে তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত।
দেশের চিকিৎসকরা বিদেশে কেবল শিখতে যান না, শেখাতেও যান জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের চিকিৎসকরা প্রশিক্ষক হিসাবে, রিসার্চ পেপার প্রেজেন্ট করতে, প্যানেল এক্সপার্ট হিসেবেও বিদেশে যান।”
আগের দিনে বিদেশ যেতে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে জারি করা অফিস আদেশে যেসব শর্তের কথা বলা হয়েছে, সেসবে চিকিৎসকদের অবিশ্বাস ও অসম্মান করা হয়েছে বলেই মনে করেন এই চিকিৎসক।
একদিকে রোগীদের বিদেশ যাওয়া ঠেকাতে চিকিৎসকদের দক্ষতা বাড়ানোর কথা বলা হবে, অন্যদিকে সেই দক্ষতা আর জ্ঞানার্জনে বাধার সৃষ্টি করা হবে। এটা দ্বিচারিতা বলেই মনে করেন আহমদ তাউস।
মন্ত্রণালয়ের জারি করা এই সিদ্ধান্ত নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাক, কান ও গলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক চিকিৎসক ডা. আরিফ মোর্শেদ খানও।
তিনি বলেন, ‘সিএমই’ বা ‘কন্টিনিউয়াস মেডিকেল এডুকেশন’ সারা বিশ্বে স্বীকৃত চিকিৎসা শিক্ষা ও উন্নয়ন নীতি! এটা তো শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা পৃথিবীতে একই সিস্টেম।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অফিস আদেশের মাধ্যমে নজিরবিহীন এক নীতিমালার নামে অবমাননাকর নিদের্শনা দিল কীভাবে, এমন প্রশ্নও তোলেন তিনি।
মন্ত্রণালয় কী বুঝে অফিস আদেশ দিয়ে পরদিন আবার প্রত্যাহার করলো সে বিষয়ে জানতে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমকে একাধিকবার মোবাইল ফোনে কল করা হলেও রিসিভ করেননি।