কবি নজরুল ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীদের হামলায় তিনজন নিহত হওয়ার দাবি মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ কর্তৃপক্ষ করলেও তা নাকচ করে দিয়েছে পুলিশ।
সোমবার সকাল থেকে হামলা-সংঘর্ষের পর দুপুরে মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ কর্তৃপক্ষ সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তিনজন নিহত হওয়ার দাবি করে।
এরপর বিকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নিহত হওয়ার খবরটি সঠিক নয়। এটি অপপ্রচার।
“সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উল্লিখিত ঘটনায় দুই জন নিহত হয়েছেন মর্মে অনেকেই অপপ্রচার চালাচ্ছেন, যা মোটেই সঠিক নয়। সংশ্লিষ্ট সকলকে এরূপ অপপ্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হলো।”
সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজ এবং ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধাওয়া ও পাল্টাধাওয়া এবং সংঘর্ষের জেরে প্রায় ২৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে বলে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনন্স বিভাগের পাঠানো ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
পুরান ঢাকার ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের এক শিক্ষার্থীর অবহেলায় মৃত্যুর অভিযোগ তুলে রবিবার ‘সুপার সানডে’ কর্মসূচি দেয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা।
মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আরও কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরাও যোগ দেয়। তারা ন্যাশনাল মেডিকেলে ভাংচুর শুরু করার পর পাশের সরকারি দুটি কলেজ সোহরাওয়ার্দী ও কবি নজরুলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাধে। তখন ওই দুটি কলেজে ব্যাপক ভাংচুর চালানো হয়।
তার প্রতিবাদে সোমবার ‘মেগা মানডে’ কর্মসূচি ঘোষণা করে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরের যাত্রাবাড়ীর মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে গিয়ে হামলা চালায় সোহরাওয়ার্দী ও কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীরা।
হামলা নিয়ে মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ কর্তৃপক্ষের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, “ডক্টর মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ গভীর শোক ও ক্ষোভের সঙ্গে জানাচ্ছে যে, আজ আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এক নৃশংস হামলা চালানো হয়েছে। তথাকথিত সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বহিরাগত একদল সন্ত্রাসী প্রবেশ করে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়।
“এ হামলায় তিন শিক্ষার্থী নির্মমভাবে প্রাণ হারায় এবং শতাধিক শিক্ষার্থী ও শিক্ষক আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা গুরুতর, যাদের মধ্যে কয়েকজনকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।”
তবে কলেজটির প্রতিষ্ঠাতা মাহবুবুর রহমান মোল্লা তখনই সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেন, “মারা যাওয়ার খবরটি আমি নিশ্চিত নই। তবে প্রচুর ছেলে কলেজে এসে হামলা ও ব্যাপক ভাংচুর চালায়। এ সময় বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রের সঙ্গে পিস্তল দিয়ে গুলিও চালায়।”
পুলিশের বিজ্ঞপ্তি আসার পর মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের অধ্যক্ষ ওবায়দুল্লাহ নয়ন আরেকটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠান, সেখানে নিহতের বিষয়ে কিছু নেই।
পুলিশের বর্ণনায় ঘটনার পূর্বাপর
পুলিশের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মোল্লা কলেজের ছাত্র অভিজিৎ হাওলাদার ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। গত ১৮ নভেম্বর তার মৃত্যু হলে পরিবার ও কলেজের কিছু শিক্ষার্থী ভুল চিকিৎসার অভিযোগ তুলে হাসপাতালে ভাংচুর চালায়।
এরপর ২০ নভেম্বর মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের ৫০০/৬০০ শিক্ষার্থী আবার ন্যাশনাল হাসপাতালে গিয়ে ভাংচুর চলায়। সেদিন হাসপাতালের পরিচালক ৪ জন চিকিৎসক ও দুজন শিক্ষার্থীকে নিয়ে অভিজিতের চিকিৎসার বিষয় যাচাই করতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা সেই কমিটি প্রত্যাখান করে।
পুলিশ জানায়, সেদিন সন্ধ্যার পর পাশের শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীরা মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করতে গিয়েছিল। কিন্তু মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের হাতাহাতি বাধে। তাতে সোহরাওয়ার্দী কলেজের দুই ছাত্র আহত হয়।
ঘটনার শেষ সেখানেই হয়নি। পাঁচ দিন পর রবিবার দুপুরে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা পুনরায় ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভাংচুর চালায়। এক পর্যায়ে তারা শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজেও ভাংচুর এবং লুটপাট চালায়।
তার জের ধরেই সোমবার সকালে সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজের প্রায় ১২/১৫ হাজার শিক্ষার্থী লাঠিসোঠাসহ জড়ো হয়ে মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের দিকে রওনা হয়।
পুলিশ শুরুতে একবার এবং যাত্রাবাড়ী থানায় দ্বিতীয় বার চেষ্টা চালিয়েও ওই শিক্ষার্থীদের আটকাতে পারেনি বলে দাবি করা হয় ডিএমপির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।
“তারা বাধা অতিক্রম করে উক্ত কলেজে পৌঁছে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য সোমবার সকাল ৭টা থেকে রাজধানীর সূত্রাপুর ও ডেমরা এলাকায় পর্যাপ্ত জনবল মোতায়েন করা হয়। মোতায়েনকৃত পুলিশ সদস্যরা অত্যন্ত ধৈর্যের সাথে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে। পুলিশ যেকোনও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানোর জন্য অতিরিক্ত বল প্রয়োগ থেকে বিরত থাকে।”
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, ঢাকার ৩৫টি বিভিন্ন কলেজ শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে ইউনাইটেড কলেজ অব বাংলাদেশ (ইউসিবি) নামে একটি ফোরাম সক্রিয় এখন। অন্যপক্ষে রাজধানীর ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা কলেজ, মিরপুর বাংলা কলেজ ও সরকারি কবি নজরুল কলেজ মিলে সাত কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের একটি জোট রয়েছে। দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা পরস্পরের প্রতি ঘৃণার মনোভাব সৃষ্টি করছে।