কলেজ শিক্ষার্থীরা সংঘর্ষে, রিকশাচালকরা অবরোধে, পোশাক শ্রমিকরা বিক্ষোভে- সব মিলিয়ে অস্থিরতা চলছে নানা ক্ষেত্রে; আর এসবের পেছনে উসকানি দেখছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।
সেই উসকানি কারা দিচ্ছে? তিনি চিহ্নিত করেছেন ডান ও বামদের কাউকে কাউকে; এটা স্বীকার করে নিয়েই যে এরা অভ্যুত্থানের সহযোগী শক্তিই ছিল।
“অনেক মিত্রই আজ হঠকারীর ভূমিকায়,” ফেইসবুকে এক পোস্টে লিখেছেন মাহফুজ, যিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটির প্রধান থেকে এখন উপদেষ্টার ভূমিকায়।
সোমবার সন্ধ্যায় তিনি এই পোস্ট দেওয়ার আগে দিনভর আলোচনায় ছিল মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে পুরান ঢাকার কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীদের হামলা।
বিক্ষুব্ধ ব্যাটারি রিকশার চালকরা আগের কয়েকদিনের মতো এদিন দুপুরে আগারগাঁওয়ে সড়ক অবরোধ করে। গাজীপুরে বিক্ষোভে নামে পোশাক শ্রমিকরা।
সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতার সমালোচনার প্রেক্ষাপটে উপদেষ্টা মাহফুজ েফইসবুকে লিখেছেন, “বাম এবং ডান মানসিকতার কতিপয় নেতৃত্ব বা ব্যক্তি গণ অভ্যুত্থানে, এবং পরবর্তীতে সরকারে নিজেদের শরিকানা নিশ্চিত না করতে পেরে উন্মত্ত হয়ে গেছেন। তাদের উন্মত্ততা, বিপ্লবী জোশ এবং উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড দেশটাকে অস্থির করে রেখেছে।”
মিত্রদের ‘হঠকারী’ ভূমিকার সমালোচনা করলেও তাদের নাম উল্লেখ করেননি মাহফুজ। তবে সম্প্রতি ডান ও বাম উভয় শিবির থেকেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সমালোচনা ওঠে।
উপদেষ্টা হিসাবে চলচ্চিত্রকার মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে নেওয়ার পর ইসলামী দলগুলোর বিভিন্ন েনতা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে হুঁশিয়ার করে।
আবার ব্যাটারি রিকশার বন্ধের প্রতিবাদে রবিবার ঢাকায় এক সমাবেশে প্রবীণ বাম নেতা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উদ্দেশে বলেন, রিকশা চালকদের দাবি না মানলে গদি থাকবে না।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের তিন দিন পর গত ৮ আগস্ট ড. ইউনূসের নেতৃত্বে এই সরকার গঠিত হয়। তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার করে নির্বাচন আয়োজনের কথা বলেছে।
এই সময়ে আন্দোলনের মূল শক্তি শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করে ‘অভ্যুত্থানের শক্তিকে প্রতিক্রিয়াশীল’ করে তোলার উসকানি দেওয়া হচ্ছে বলে হুঁশিয়ার করেন মাহফুজ।
তিনি বলেন, “ছাত্রদের আজ সংঘাতের মুখে ঠেলে দিয়ে হত্যার মাধ্যমে ছাত্রদের বৈধতার সঙ্কট হলে, যারা যারা লাভবান হবে, তারা সবাই এ উসকানি এবং প্রশাসনিক ব্যর্থতার সাথে জড়িত। ধীরে ধীরে আমরা সবই বলব। অথবা, আপনারা চোখ খুললেই দেখতে পাবেন।”
সরকার পরিচালনায় নিজেদের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে নিয়েই মাহফুজ বলেন, “আমরা শিখেছি এবং ব্যর্থতা কাটানোর চেষ্টাও করছি। আমরা আরও চেষ্টা করব সবাইকে নিয়ে এগোনোর।
“হঠকারিতা এবং ছাত্রদের অন্যায্যতার চেষ্টা এ জাতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। হঠকারিতা, উসকানি, ছাত্র-তরুণদের মধ্যে বিভেদ ও বিরোধ তৈরি, অভ্যুত্থানের শক্তিকে প্রতিক্রিয়াশীল করে তোলার অপচেষ্টা- সবই ব্যর্থ করে দেওয়া হবে।”
“আমরা ৫ই আগস্টের সকালের মতন ঐক্যবদ্ধ হওয়ার দিকে অগ্রসর হচ্ছি। এবারের সাংগঠনিকভাবে গড়ে ওঠা ঐক্য দীর্ঘস্থায়ী মুক্তির সুযোগ তৈরি করবে,” বলেন তিনি।