বাংলাদেশ সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে গভীর উদ্বেগ ও শঙ্কা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ও ঢাকা মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি।
সোমবার বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে অবিলম্বে তার মুক্তির দাবিও জানানো হয়েছে।
রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর হিন্দুদের ওপর হামলার প্রতিবাদে কর্মসূচি নিয়ে নামা সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় ব্রহ্মচারীকে এদিন বিকাল ৪টার দিকে ঢাকার শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দর থেকে আটক করা হয়।
এ খবর ছড়িয়ে পড়লে চট্টগ্রাম নগরীর চেরাগি পাহাড় মোড়ে সন্ধ্যায় বিক্ষোভ সমাবেশ করে বিপুল সংখ্যক সনাতন ধর্মাবলম্বী। তার মুক্তির দাবিতে রাতে রাজধানী ঢাকার শাহবাগ মোড়ও অবরোধ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, চিন্ময় ব্রহ্মচারীকে ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর ও সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা এবং ঢাকা মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব ও সাধারণ সম্পাদক ড. তাপস পাল যুক্ত বিবৃতি দিয়েছেন।
বিবৃতিতে তারা বলেছেন, “চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গোয়েন্দা হেফাজতে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে সারাদেশ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষোভ ও উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সর্বসম্মত আট দফা দাবি নিয়ে আন্দোলন করছিলেন। তার এই আন্দোলন সরকারের বিরুদ্ধে নয়।
“বরং গত তিপ্পান্ন বছর ধরে সৃষ্ট বৈষম্য নিরসন করে বাংলাদেশকে এক পরিবার- এ পরিণত করার জন্যই আন্দোলন, যা মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা বারবার উচ্চারণ করেছেন। ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের আরও সচেতন করেছে অধিকারবোধে।”
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “এই আন্দোলন সরকারকে ইতিবাচক পথে পা বাড়াতে সহায়তা করবে, রাজনৈতিক দলগুলোতে সার্বজনীন চিন্তার বিকাশ ঘটাবে। চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর নেতৃত্বে সাধু সন্তদের আন্দোলন সার্বজনীন রাষ্ট্র গঠনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে নেতৃবৃন্দ বিশ্বাস করেন।
“দমনমূলক বা নেতিবাচক পদক্ষেপ নবচেতনার বাংলাদেশ নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিভ্রান্তি ছড়াবে, ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে পারে এবং সর্বোপরি ভুল বার্তা যাবে।”
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা হলে তার প্রতিবাদে গত ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রামের লালদিঘী মাঠে সমাবেশ করে সনাতন জাগরণ মঞ্চ। ওই সমাবেশের অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন চট্টগ্রাম পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় ব্রহ্মচারী।
সমাবেশের দিন চট্টগ্রাম নগরীর নিউ মার্কেট মোড়ে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার ওপরে ইসকনের গেরুয়া রঙের আরেকটি পতাকা ওড়ানোর অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ এনে ৩০ অক্টোবর কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন চট্টগ্রাম শহরের মোহরা ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ খান। তারপর অবশ্য তাকে পদচ্যুত করেছিল বিএনপি।
ওই ঘটনায় দুই সনাতন ধর্মাবলম্বী রাজেশ চৌধুরী ও হৃদয় দাশকে গ্রপ্তার করে পুলিশ। তার প্রতিবাদ জানিয়ে যাচ্ছে সনাতন জাগরণ মঞ্চ।
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে সোমবার ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ফেরার পথে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গোয়েন্দা পুলিশ তুলে নিয়ে যায় বলে জানিয়েছেন সনাতনী বিদ্যার্থী সংসদের প্রতিষ্ঠাতা কুশল বরণ চক্রবর্তী।
তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আমরা ঢাকা থেকে বিমানযোগে চট্টগ্রাম যাওয়ার উদ্দেশ্যে শাহজালাল বিমানবন্দরে এসেছিলাম। এখানে আসার পর এয়ারপোর্টের ডোমেস্টিক এরিয়ায় অপেক্ষার সময় বিকাল ৪টার দিকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে ডিবি পরিচয়ে কয়েকজন তুলে নিয়ে যায়।”
ছাই রঙের একটি মাইক্রোবাসে করে চিন্ময় ব্রহ্মচারীকে তুলে নেওয়া হয় বলে জানান তিনি। তবে তাকে কোথায় নেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে কোনও ধারণা দিতে তিনি পারেননি।
তার কাছে অভিযোগটি পেয়ে বিমানবন্দর থানায় যোগাযোগ করা হলে থানার পরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, তিনি এবিষয়ে কিছু জানেন না। এরপর যোগাযোগ করা হলে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার রেজাউল করিম মল্লিক বিষয়টি স্বীকার করেন।