Beta
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪
Beta
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

অর্থনীতিতে মন্দার আশঙ্কা করছেন ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ

শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
[publishpress_authors_box]

দেশে নতুন বিনিয়োগ না বাড়লে অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।

বর্তমান অস্থির পরিস্থিতিতে হতাশা প্রকাশ করে প্রবীণ এই অর্থনীতিবিদ বলেছেন, “রাজনৈতিক ও শ্রমিক অস্থিরতা, ব্যাংক ঋণের সুদের হার বৃদ্ধির কারণে নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে না। সব মিলিয়ে সময়টা ভালো ঠেকছে না। এই পরিস্থিতিতে সরকারি উন্নয়ন ব্যয় বাড়াতে না পারলে দেশে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিতে পারে।”

সোমবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা।

ঢাকার শেরে বাংলা নগরে পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলনকক্ষে একনেক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, “রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে, বিশৃঙ্খলার কারণে বেসরকারি খাতে উৎপাদন যা আছে, সেখানে স্থবিরতা দেখা যাচ্ছে। গার্মেন্ট খাতে স্থবিরতা আছে। বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ নাইই। তার ওপর সুদের হার অনেক বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

“তাতে করে উদ্যোক্তারা উৎসাহিত হচ্ছেন না নতুন বিনিয়োগের ব্যাপারে। সেক্ষেত্রে বেসরকারি খাতে নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে না, অন্য দিকে সরকারি উন্নয়ন ব্যয়ও যদি না বাড়ে তাহলে তো অর্থনীতির মন্দা অবস্থা তৈরি হবে।”

এই পরিস্থিতিতে সরকার কী করবে—এ প্রশ্নের উত্তরে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, এর জন্য নতুন ‘উদ্ভাবনী ও মানব সম্পদের উন্নয়নের জন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন প্রকল্প তৈরি’র কথা চিন্তা করছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলে সব উপদেষ্টাকে চিঠি দেবেন বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, “প্রকল্প বাস্তবায়নের ধীরগতি কাটিয়ে বাস্তবায়ন বাড়ানোতে তাগিদ দেওয়া হবে।”

প্রকল্পকে দুর্নীতিমুক্ত রাখতে চেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলেও প্রতিশ্রুতি দেন উপদেষ্টা।

বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ না হলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কী হবে—এমন প্রশ্নে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, “এক বছর বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ না হলেও অনেক প্রবৃদ্ধি হতে পারে।”

পরিকল্পনা উপদেষ্টা আরও বলেন, ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথমে এসে যাচাই–বাছাই করে প্রকল্প পাসের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে প্রকল্পপ্রবাহ কমেছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে একধরনের ধীরগতি আছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) মাত্র ৮ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে।

“এখন সিদ্ধান্ত হয়েছে, অগ্রাধিকারমূলক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প যত দ্রুত সম্ভব বাস্তবায়ন করা যায়, সেই উদ্যোগ নেওয়া হবে। সে অনুসারে সংশোধিত এডিপিতে ওই সব প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হবে।”

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, “অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা স্থবিরতা আছে। মূল্যস্ফীতির হার বেশি। জিনিসপত্রের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষের জীবনকে ব্যাহত করছে। গ্রামগঞ্জের দোকানপাটে বেচাকেনা কম হচ্ছে। মানুষের আয়-ব্যয় সংকুচিত হয়েছে।”

প্রকল্প খরচ সম্পর্কে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, প্রথম দিকে যাচাই–বাছাই করে প্রকল্প পাস করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। অতিমূল্যায়িত প্রকল্প, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নেওয়া প্রকল্প—এসব দেখা হচ্ছে। এসব করতে গিয়ে উন্নয়ন ব্যয় কম হচ্ছে।

আগামী বাজেটে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়বে বলে জানান ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, শিক্ষা খাতে বরাদ্দ শুধু অবকাঠামো খাতে নয়; শিক্ষা সরঞ্জামাদি ও গবেষণায় বরাদ্দ বাড়ানো হবে।

“প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিশ্ববিদ্যালয় ভালো করা যাবে বলে আমি মনে করি না। অতিরিক্ত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় করা হয়েছে।”

শিক্ষার্থীরা নানা দাবিতে আন্দোলন করছেন—এমন প্রসঙ্গে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, “শিক্ষার্থীদের দাবি ন্যায্য হলে তা পূরণ করা হবে। ইতোমধ্যে এমন অনেক আন্দোলন থেমে গেছে। অন্যায্য দাবি হলে মানা হবে না।”

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাশপাশি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছেন ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।

মাতারবাড়ী প্রকল্পের পরিচালক পালিয়েছেন

পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, মাতারবাড়ী প্রকল্পের পরিচালক রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পালিয়ে গেছেন। যাওয়ার আগে তিনি প্রকল্পের অনেক সরকারি জিনিসপত্র বিক্রি করে দেন।

“তাই আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, প্রকল্প পরিচালক দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।”

সরকার পরিবর্তনের পর অনেক প্রকল্প পরিচালককে পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানান তিনি।

একনেকে পাঁচ প্রকল্প অনুমোদন

সোমবারের একনেক সভায় পাঁচটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ৫ হাজার ৯১৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ১ হাজার ৯৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। বৈদেশিক উৎস থেকে আসবে ৪ হাজার ৭৮৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। সরকারি বিভিন্ন সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে খরচ করা হবে ৩২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।

অনুমোদিন প্রকল্পগুলো হচ্ছে—পূর্বাঞ্চলীয় গ্রিড নেটওয়ার্কের পরিবর্ধন এবং ক্ষমতাবর্ধন, ক্যাপাসিটি বিল্ডিং অব ইউনিভার্সিটিজ ইন বাংলাদেশ টু প্রমোট ইয়ুথ এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ, মোংলা বন্দরে আধুনিক বর্জ্য ও নিঃসৃত তেল অপসারণ ব্যবস্থাপনা, চট্টগ্রাম পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্প এবং ইমার্জেন্সি মাল্টিসেক্টর রোহিঙ্গা ক্রাইসিস রেসপন্স প্রকল্প।

অন্তর্বর্তী সরকারের শপথের পর এটি তৃতীয় একনেক বৈঠক।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত