বিক্ষোভ ও সহিংসতা মোকাবেলায় পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মুক্তি ও সরকারের পদত্যাগের দাবিতে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) সমর্থকরা ইসলামাবাদ ঘিরে রেখেছে।
সোমবার থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভে এ পর্যন্ত সাত জনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছে জিও নিউজ। এদের মধ্যে মঙ্গলবারই নিহত হয়েছেন পাঁচজন।
ইমরান খানের স্ত্রী বুশরা বিবির নেতৃত্বে সোমবার দেশটির বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লাখ লাখ মানুষ জড়ো হয়েছে রাজধানী ইসলামাবাদের চারদিকে।
ইমরান সমর্থকদের একটি অংশ ইসলামাবাদে প্রবেশ করলে তাদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষ শুরু হয়। পরিস্থিতি সামলাতে ইসলামাবাদে লকডাউন ও দুই মাসের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে দেশটির রাজধানী।
বিক্ষোভ ঠেকাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে পিটিআইয়ের কয়েকজন এমপিসহ হাজার হাজার মানুষকে।
পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মঙ্গলবার শ্রীনগর মহাসড়কে কিছু দুষ্কৃতকারী রেঞ্জার্স কর্মীদের ওপর গাড়ি উঠিয়ে দিয়েছে। এ ঘটনায় চারজন প্যারাট্রুপার ও একজন বেসামরিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও পাঁচ প্যারাট্রুপার ও দুই পুলিশ সদস্য।
পিটিআইয়ের বিক্ষোভ চলাকালে এর আগে সোমবার আরও দুই পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। আহত হয়েছেন শতাধিক পুলিশ। আহতদের বেশির ভাগের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এমন পরিস্থিতে সংবিধানের ২৪৫ ধারা সক্রিয় করে ইসলামাবাদে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের কঠোর হাতে দমনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ইসলামাবাদ হাই কোর্ট পিটিআই নেতৃত্বাধীন এই বিক্ষোভকে অবৈধ ঘোষণা করেছে।
ইসলামাবাদের আশেপাশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হচ্ছে। শহরজুড়ে কন্টেইনার দিয়ে ব্যারিকেড তৈরি করেও সহিংসতা থামানো যাচ্ছে না।
বুশরা বিবি বলেছেন, “ইমরান খান আমাদের মাঝে ফিরে না আসা পর্যন্ত এই আন্দোলন শেষ হবে না। আমি শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাব। আপনাদের আমাকে সমর্থন করতে হবে। এটা শুধু আমার স্বামীর বিষয় নয়, বরং দেশ ও নেতৃত্বের বিষয়।”
ইসলামাবাদ এখন স্থানীয়দের কাছে ‘কন্টেইনারিস্তান’ বা ‘কন্টেইনারের দেশ’ হিসেবে নতুন নাম পেয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পুলিশ রাস্তায় শিপিং কন্টেইনার দিয়ে ব্যারিকেড দেওয়ায়, এমন নাম দেওয়া হয়েছে।
বিবিসি জানিয়েছে, ইসলামাবাদকে এখন একটি দুর্গের মতো দেখাচ্ছে। পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনীর কড়া পাহারা এবং রাস্তায় রাস্তায় কন্টেইনার দিয়ে ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছে। ইমরান খানের সমর্থকদের রাজধানীতে প্রবেশ ঠেকাতেই এমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
তবে সব বাধা উপেক্ষা করে সোমবার রাজধানী ইসলামাবাদের উপকণ্ঠে পৌঁছে যায় পিটিআই নেতা-কর্মীদের গাড়িবহর। এরপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে দফায় দফায় তাদের সংঘর্ষ হয়। বিক্ষোভ ঠেকাতে গ্রেপ্তার করা হয় পিটিআইয়ের পাঁচ পার্লামেন্ট সদস্যসহ প্রায় পাঁচ হাজার কর্মী সমর্থককে।
ইমরান খান সোমবার এই বিক্ষোভকে ‘শেষ ডাক’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এতে তিনটি দাবি উত্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে তার কারামুক্তি এবং গত দুই বছরে আটক হওয়া শত শত দলীয় কর্মীদের মুক্তি ও সরকারের পদত্যাগ।
ইমরান খান, তার স্ত্রী বুশরা বিবি এবং পিটিআইয়ের জন্য এটি এখন ‘মরণ-বাঁচন’ পরিস্থিতি। প্রথমবারের মতো বুশরা বিবি নিজেই বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
ইমরান খানের বিরুদ্ধে বর্তমানে ১০০টির বেশি মামলা রয়েছে। তিনি দাবি করেন, এসব মামলার পেছনে সেনাবাহিনী ও রাজনৈতিক বিরোধীরা রয়েছে। বর্তমানে তার রাজনৈতিক বিরোধীরা জোট সরকার গড়ে পাকিস্তানের ক্ষমতায় রয়েছে। গত জুন মাসে ইমরান খানকে নির্বিচার আটকের বিষয়টি বেআইনি বলে ঘোষণা করে জাতিসংঘের একটি সংস্থা।