হামলায় তছনছ ঢাকার যাত্রাবাড়ীর ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ কর্তৃপক্ষে চোখে উসকানিদাতা ‘ইউসিবি’। হামলাকারী কলেজের শিক্ষার্থীরাও দোষ দিচ্ছে এই ফেইসবুক গ্রুপটিকে। তবে এই গ্রুপ পরিচালনাকারীরা তা প্রত্যাখ্যান করছে।
মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের অভিজিৎ হাওলাদার নামে এক শিক্ষার্থী ডেঙ্গু নিয়ে পুরান ঢাকার ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালে মারা যাওয়ার পর কলেজে কলেজে মারামারির সূত্রপাত ঘটে।
ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগ তুলে মোল্লা কলেজের ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা গত রবিবার ন্যাশনাল মেডিকেলের পাশাপাশি পুরান ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজেও ব্যাপক ভাংচুর চালায়।
তার প্রতিক্রিয়ায় সোমবার ওই দুটি কলেজের শিক্ষার্থীরা মিলে হামলা চালায় যাত্রাবাড়ীর মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে। সেই হামলায় প্রায় ৭০ কোটি টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে বলে বেসরকারি কলেজটির অধ্যক্ষ ওবায়দুল্লাহ নয়ন দাবি করছে।
সোমবার হামলার পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এই ঘটনার জন্য ন্যাশনাল মেডিকেল কর্তৃপক্ষের গাফিলতির পাশাপাশি ইউসিবি নামের একটি গ্রুপ থেকে হামলার উসকানি ও ষড়যন্ত্র করা হয়েছে।
“শিক্ষার্থীরা এমন করতে পারে, আমরা ভাবিনি। আমাদের সব ধবংস করে দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের পুঁজি করে কুচক্রী মহল কাজ করছে। এটা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে দেশ অন্যদিকে চলে যাবে।”
হামলা ঠেকাতে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও যথাযথ ভূমিকা রাখেনি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
“সকাল থেকেই পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু হামলার সময় তারা দূরে থেকে পরিস্থিতি দেখেছেন। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেননি।”
চেষ্টা চালিয়েও হামলা ঠেকানো যায়নি বলে দাবি করছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। এই হামলা নিয়ে তাদের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও ইউনাইটেড কলেজ অব বাংলাদেশ-ইউসিবির বিষয়টি এসেছে।
ডিএমপির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকার ৩৫টি বিভিন্ন কলেজ শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে ইউনাইটেড কলেজ অব বাংলাদেশ (ইউসিবি) নামে একটি ফোরাম সক্রিয় এখন। অন্যপক্ষে রাজধানীর ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা কলেজ, মিরপুর বাংলা কলেজ ও সরকারি কবি নজরুল কলেজ মিলে সাত কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের একটি জোট।
দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা পরস্পরের প্রতি ঘৃণার মনোভাব সৃষ্টি করছে, বলা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
কবি নজরুল কলেজের এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আমি কবি নজরুলের ছাত্র হয়েও অভিজিতের জন্য আন্দোলনে প্রথম থেকে সাপোর্ট দিয়ে এসেছি। ন্যাশনাল কলেজ ছাত্রদলকে ভাড়া করে প্রথমে হামলা করে আন্দোলনকারীদের ওপর।
“পরে ইউসিবি থেকে পরিকল্পিতভাবে সেই দোষটা আমাদের ওপরে দিয়ে সবাইকে উসকায়, পরে নিজেরাই নেতৃত্ব দিয়ে আমাদের কলেজে ভাংচুর, লুটপাট চালায়। আমাদের মেয়ে শিক্ষার্থীদের ব্যাড টাচও করে। এর প্রতিবাদে আমরা আমাদের কর্মসূচি পালন করেছি।”
সোহরাওয়ার্দী ও কবি নজরুলের শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করেও ইউসিবির বিরুদ্ধে তাদের ক্যাম্পাসে হামলা-লুটপাটের অভিযোগ তুলেছে। এই গ্রুপের বিরুদ্ধে সরকারি সাত কলেজের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালানোর অভিযোগ তুলে ইউসিবিকে নিষিদ্ধ করার দাবিও জানায় তারা।
ইউসিবি বা ‘United Colleges Of Bangladesh – UCB’ বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীদের একটি ফেইসবুক গ্রুপ। বেসরকারি মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরাও এই গ্রুপে যুক্ত।
গ্রুপের ইন্ট্রোতে রেখা আছে- “উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের একত্র করার জন্য তৈরী একটি অরাজনৈতিক ও সমাজকল্যান মুলক প্লাটফর্ম। দশের হয়ে, দেশের জন্য। We roar, we conquer.”
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউসিবি পরিচালনাকারীদের একজন নাফিস মোল্লা সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “প্রকৃত দোষীদের আড়াল করতেই আমাদের মতো একটি অরাজনৈতিক ও সমাজকল্যাণমূলক সংগঠনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হচ্ছে।”
মাহাবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের (ডিএমআরসি) শিক্ষার্থী অভিজিৎ হাওলাদারের মৃত্যুর পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে নৈতিক সমর্থন দিয়ে ফেইসবুকে শুধু স্ট্যাটাস দেওয়া হয়েছিল জানান তিনি।
“আমরা কেবল সহমর্মিতা জানিয়েছি। এর বাইরে কোনও ইন্ধন, উসকানির মধ্যে ইউসিবি ছিল না,” দাবি করেন তিনি।