চট্টগ্রামে সহকারী সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার ঘটনায় ছয় জনকে গ্রেপ্তার করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)।
ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তাদের শনাক্ত করা হয় বলে বুধবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের ভেরিফায়েড ফেইসবুক পেইজে জানানো হয়েছে।
এছাড়া মঙ্গলবার চট্টগ্রামে আদালত এলাকায় সংঘর্ষ চলাকালে ভাঙচুর ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে ২১ জনকে এবং ককটেলসহ আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তারের কথাও জানানো হয়েছে।
ফেইসবুকে দেওয়া পোস্টে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় লিখেছে, “আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার ঘটনায় সন্দেহভাজন অন্তত ৬ জনকে আটক করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ। ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে এই ৬ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে।
“মঙ্গলবার সংঘর্ষ চলাকালে ভাঙচুর ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে ২১ জনকে আটক করেছে সিএমপি। বন্দরনগরীতে দেশীয় ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভসহ (ককটেল) আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”
সোমবার ঢাকায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের নেতা ও হাটহাজারীর পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ।
পরদিন তাকে চট্টগ্রামের ষষ্ঠ মহানগর হাকিম আদালতে তোলা হলে তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক কাজী শরীফুল ইসলাম।
এর প্রতিবাদে আদালত প্রাঙ্গণে আগে থেকে জড়ো হওয়া চিন্ময়ের অনুসারীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। তারা চিন্ময়কে কারাগারে নিতে চাওয়া প্রিজন ভ্যানের সামনে অবস্থান নিয়ে সেটি প্রায় তিন ঘণ্টা আটকে রাখেন।
তাদের ছত্রভঙ্গ করতে একপর্যায়ে কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেডে ছোড়ে পুলিশ ও বিজিবি। সেসময় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়ে চিন্ময়ের অনুসারীরা। সংঘর্ষ আদালত প্রাঙ্গণ পেরিয়ে আশপাশের এলাকায়ও ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে অংশ নেয় স্থানীয়রাও।
সংঘর্ষের পর সেবক কলোনি এলাকায় সাইফুল ইসলামের লাশ পাওয়া যায়। পরে তা উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা জানান, ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তার মৃত্যু হয়।
মঙ্গলবার রাতেই আইনজীবী সাইফুল ইসলাম হত্যার ঘটনার নিন্দা জানান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ঘটনা তদন্তের পাশাপাশি যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি।
একইসঙ্গে জনগণকে শান্ত থাকার ও অপ্রীতিকর কার্যকলাপে অংশ নেওয়া থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা।
এছাড়া, সাইফুল ইসলাম হত্যার ঘটনায় মঙ্গলবার রাতজুড়ে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে ৩০ জনকে গ্রেপ্তার করে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথবাহিনী।
অভিযান সম্পর্কে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) কাজী মো. তারেক আজিজ সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আইনজীবী খুনের ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে অভিযান চালিয়ে ৩০ জনকে আটক করেছে যৌথবাহিনী। তাদের সবার পরিচয় এখনই বলা যাচ্ছে না। যাচাই-বাছাই শেষে নিশ্চিত করে বলা যাবে।
“হত্যার ঘটনায় দুটি মামলা হতে পারে। একটি আইনজীবীকে হত্যা মামলা এবং আরেকটি পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার মামলা। আইনজীবী হত্যা মামলা তার পরিবার করবে বলে জেনেছি।”