প্রতিপক্ষ যদি হয় লিভারপুল, তাহলে আর চিন্তা নেই রিয়াল মাদ্রিদের। জয়ই হবে তাদের চূড়ান্ত গন্তব্য। সাম্প্রতিক সময়ের পরিসংখ্যান সেই সাক্ষীই দিচ্ছে। লিভারপুলের মুখোমুখি হলে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি গর্জে ওঠে রিয়াল। লস ব্লাঙ্কোদের লিভারপুল ‘ঘাতক’ বললেও ভুল হবে না। আবারও যখন চ্যাম্পিয়নস লিগ তাদের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে, তখন অতীত ইতিহাসে চোখ রেখে তৃপ্তির ঢেকুর তোলার কথা মাদ্রিদের অভিজাতদের। তবে এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। সময়ের হিসাবে আশঙ্কার মেঘ জমাট বাঁধছে রিয়ালের আকাশে।
বাংলাদেশ সময় বুধবার (২৭ নভেম্বর) দিবাগত রাত ২টায় অ্যানফিল্ডে লিভারপুল-রিয়ালের মহারণ। চ্যাম্পিয়নস লিগের ঈর্ষণীয় পারফরম্যান্স এগিয়ে রাখার কথা বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের। কিন্তু চলতি মৌসুমের পথচলা রিয়ালের পক্ষে কথা বলছে না। তাছাড়া লিভারপুলের বিপক্ষে তাদের যে দাপুটে পারফরম্যন্স, তার নেপথ্যের কারিগর ভিনিসিয়ুস জুনিয়রকেও পাচ্ছে না স্পেনের রাজধানীর ক্লাবটি। দুয়ে মিলিয়ে অন্তত এবারের লড়াইয়ের আগে লিভারপুলের পাল্লা কিছুটা হলেও ভারি থাকার কথা।
২০০৮-০৯ মৌসুমে লিভারপুলের কাছে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত হয়েছিল রিয়াল। ওই বিপর্যয়ের পর কেবলই বসন্ত বাতাস বয়ে গেছে লস ব্লাঙ্কোস সমর্থকদের মনে। এরপর খেলা ৮ ম্যাচের ৭টিতেই জিতেছে রিয়াল। অন্যটি হয়েছে ড্র। এর মধ্যে রয়েছে দুটি চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালের জয়। গ্যারেথ বেলের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে ২০১৮ সালের চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে অলরেডদের হারিয়েছিল ৩-১ গোলে। আর ২০২২ সালের ফাইনালে ভিনিসিয়ুসের ছোঁয়ায় ১-০ গোলের জয়ে আরেকবার ইউরোপসেরার মুকুট জেতে রিয়াল।
এবার ভিনিসিয়ুস নেই
লিভারপুর ম্যাচ রিয়ালের যতটা না, তার চেয়ে বেশি সুখকর সম্ভবত ভিনিসিয়ুসের জন্য। সাম্প্রতিক সময়ে ইংলিশ ক্লাবের বড় ‘ঘাতক’ এই ব্রাজিলিয়ান। কিন্তু অ্যানফিল্ডের ম্যাচে এই ফরোয়ার্ডকে পাচ্ছে না মাদ্রিদের ক্লাবটি। হ্যামস্ট্রিং চোটে এই ম্যাচ তো বটেই, স্প্যানিশ সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী তিন সপ্তাহের জন্য ছিটকে গেছেন ভিনিসিয়ুস।
তার না থাকাটা লিভারপুলের জন্য নিশ্চিতভাবেই স্বস্তির। কারণ এই ব্রাজিলিয়ানের বারুদে পারফরম্যান্সে বারবার হৃদয় ভেঙেছে অলরেডদের। প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবটির বিপক্ষে খেলা ৫ ম্যাচে ৫ গোল ভিনির। তার চ্যাম্পিয়নস লিগ ক্যারিয়ারের ২৫ গোলের ২০ শতাংশ এসেছে এই ক্লাবের বিপক্ষে। ইউরোপের অন্য কোনও ক্লাব ভিনির প্রভাব এতটা টের পায়নি, যতটা পেয়েছে লিভারপুল।
লিভারপুলের বিপক্ষে ভিনির স্বপ্নের পথচলা শুরু হয়েছে ২০২১ সালে চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে। সেবার মাদ্রিদের এস্তাদিও আলফ্রেদো দি স্তেফানো স্টেডিয়ামের প্রথম লেগে রিয়ালের ৩-১ গোলে জয়ের পথে দুইবার জাল খুঁজে পেয়েছিলেন ভিনিসিয়ুস। ২০২২ সালে প্যারিসের চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে লিভারপুলকে ১-০ গোলে হারিয়েছিল রিয়াল। শিরোপা নির্ধারণ করে দেওয়া গোলটি এসেছিল ভিনিসিয়ুসের পা থেকে।
তবে লিভারপুলের বিপক্ষে ভিনির আগের সব পারফরম্যান্স ছাপিয়ে যায় ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে। অ্যানফিল্ডে চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলোর ম্যাচে ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়েছিল রিয়াল। ওই জায়গা থেকে অবিশ্বাস্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে লস ব্লাঙ্কোসের পাওয়া ৫-২ গোলের জয়ের নায়ক ছিলেন এই ভিনিসিয়ুস। সেদিন জোড়া গোল করেছিলেন এই ব্রাজিলিয়ান।
চ্যাম্পিয়নস লিগে ভালো নেই রিয়াল
ভিনিসিয়ুসের না থাকাটা রিয়ালের জন্য কত বড় ধাক্কার সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রতিপক্ষ লিভারপুল বলেই নয়, এই ফরোয়ার্ড এখন মাদ্রিদের ক্লাবটির প্রাণভোমরা। তার না থাকার সঙ্গে যোগ হয়েছে দলটির চ্যাম্পিয়নস লিগের বাজে ফর্ম।
ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতাটির বর্তমান চ্যাম্পিয়ন রিয়াল। তবে নতুন ফরম্যাটের চ্যাম্পিয়নস লিগে ভালো নেই তারা। লিগ পদ্ধতির প্রথম পর্বে ৪ ম্যাচে ২ জয় ও ২ হারে ৬ পয়েন্ট নিয়ে রয়েছে তালিকার ২১ নম্বরে। সরাসরি শেষ ষোলোতে খেলার জায়গা থেকে অনেক দূরে। অন্যদিকে লিভারপুল ছুটছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে। ৪ ম্যাচের সবক’টি জিতে পয়েন্ট টেবিলের তৃতীয় স্থানে তারা। রিয়ালকে হারালেই শীর্ষস্থান পুনরুদ্ধার করবে।
এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগে লিলের বিপক্ষে অঘটনের পর আগের ম্যাচে ঘরের মাঠেই এসি মিলানের কাছে বিধ্বস্ত হয়েছে রিয়াল। ওই ধাক্কা কাটিয়ে জয়ের পথে ফেরার মিশনে বড় পরীক্ষা অপেক্ষা করছে লিভারপুলের বিপক্ষে।