যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার নতুন প্রশাসনে মন্ত্রী হিসেবে যাদের মনোনয়ন দিয়েছেন, তাদের কয়েকজন বোমা হামলার হুমকি পেয়েছেন। পাশাপাশি হোয়াইট হাউসে বিভিন্ন পদে ট্রাম্প মনোনীত কয়েকজনও এই হুমকি পাওয়ার কথা জানিয়েছেন।
বিবিসি জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার রাত থেকে পরদিন পর্যন্ত বোমা হামলার হুমকি পান প্রতিরক্ষা, আবাসন, কৃষি ও শ্রম দপ্তরসহ অন্যান্য দপ্তরে ট্রাম্প মনোনীত মন্ত্রীরা।
এছাড়া জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের দূতসহ হোয়াইট হাউসে বিভিন্ন পদে ট্রাম্পের বাছাই করা ব্যক্তিদের কয়েকজন প্রাণনাশের হুমকি পান।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা (এফবিআই) জানিয়েছে, বেশ কয়েকটি বোমা হামলার হুমকি তাদের কানে এসেছে। এছাড়া পুলিশকেও ভুয়া কল করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে হুমকিদাতারা দেখতে চেয়েছে, যাদের সম্ভাব্য হামলার লক্ষ্য করা হয়েছে, তাদের বাড়ি গিয়ে পুলিশ কেমন প্রতিক্রিয়া দেখায়।
বোমা হামলার হুমকির বিষয়ে ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের প্রস্তুতিবিষয়ক দলের মুখপাত্র ক্যারোলিন লেভিট বলেন, “ট্রাম্পের মনোনীত ও তাদের সঙ্গে থাকা ব্যক্তিদের ভয়াবহ হুমকি দেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে।”
গত ৫ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ট্রাম্পকে হত্যাচেষ্টার ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমাদের সবার দৃষ্টান্ত। ভয়-ভীতি দেখানো ও হিংসাত্মক কর্মকাণ্ড আমাদের লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করতে পারবে না।”
এফবিআই বা লেভিট কেউই ট্রাম্প মনোনীতদের মধ্যে কারা জীবনের হুমকি পেয়েছেন, তা প্রকাশ করেননি।
নিউ ইয়র্কের রিপাবলিকান নেতা এলিস স্টেফানিকই প্রথম মঙ্গলবার রাতে বোমা হামলার হুমকি পান বলে জানিয়েছে বিবিসি। তাকে জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবে বাছাই করেন ট্রাম্প।
স্টেফানিকের কার্যালয় জানিয়েছে, থ্যাঙ্কসগিভিং উৎসব উদযাপনে স্বামী ও তিন বছরের ছেলেকে নিয়ে ওয়াশিংটন ডিসি থেকে নিউ ইয়র্কে যাওয়ার পথে বোমা হামলার হুমকি পান এই রিপাবলিকান নেতা।
এরপর প্রতিরক্ষা দপ্তরের মন্ত্রী পদে মনোনয়ন পাওয়া পিট হেগসেথ নিশ্চিত করেন, তিনিও লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছেন।
সোশাল মিডিয়া এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, “বুধবার সকালে এক পুলিশ কর্মকর্তা আমার বাড়ি আসেন। সেসময় আমার সাত ছেলেমেয়ে ভেতরে ঘুমাচ্ছিল।
“ওই পুলিশ কর্মকর্তা আমাকে জানান, আমার ওপর পাইপ বোমা হামলা হতে পারে- এমন হুমকি তারা পেয়েছে।”
তিনি এক্সে বলেন, “আমাকে কখনোই ভয় দেখিয়ে বা হুমকি দিয়ে থামানো যাবে না। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমাকে দেশের সেবা করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন এবং আমি সে আহ্বানে সাড়া দেবই।”
নভেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনের আগে দুই মাসের মধ্যে দুবার হত্যাচেষ্টার হাত থেকে বেঁচে যান ট্রাম্প।
প্রথমবার জুলাইয়ে পেনসিলভেনিয়ায় নির্বাচনী সভায় ভাষণ দেওয়ার সময় তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়, যা তার ডান কান ফুঁড়ে বের হয়ে যায়।
এরপর সেপ্টেম্বরে ফ্লোরিডার ওয়েস্ট পাম বিচ শহরে গল্ফ খেলার সময় ৩০০-৫০০ গজ দূর থেকে তাকে নিশানা করে গুলি ছোড়া হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের মন্ত্রিসভা ও হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের মনোনীত ব্যক্তিরা বোমা হামলার ভুয়া কল পেলেও ট্রাম্প সম্প্রতি সত্যিকারের জীবননাশের হুমকি পেয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের পুলিশ কর্মকর্তারা এ বিষয়ে বলেন, চলতি সপ্তাহের শুরুতে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে তারা। তিনি প্রায় প্রতিদিনই সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করা ভিডিওতে বলছিলেন, ট্রাম্প ও তার পরিবারকে হত্যা করবেন তিনি।