মুখের অবাঞ্ছিত লোম তুলে ফেলা হলে মেকআপ মসৃণভাবে বসে। অনেক নারীর ঠোঁটের কোণে মোচের মতো কমবেশি লোম দেখা যায়। যারা নিয়মিত পারলারে নিজের যত্ন নেন, তারা সাধারণত ভ্রু প্ল্যাক করার সময় কপালের এবং ঠোঁটের কোণের অবাঞ্ছিত লোম তুলে ফেলেন।
কিছুদিন পর পর পার্লারে দৌড়ানোর বদলে আজকাল আবার একটু খরচা করে লেজার দিয়েও মুখের অবাঞ্ছিত লোম দীর্ঘমেয়াদের জন্য তুলে ফেলছেন অনেকে।
বাড়িতে বেসন বা মসুরের ডাল বাটা মেখে পরে আঙুল দিয়ে হালকা ডলে মুখ ধুয়ে ফেলার এই রূপচর্চাতেও ত্বকের একেবারে ছোট ছোট লোম সামলে নেয়া যায়। স্ক্রাবার দিয়েও এমন এক্সফোলিয়েশন করা যায়। এতে করে ত্বকের রোমকূপে জমে থাকা ময়লা, তেল, মেকআপ উঠে আসে। ত্বকের উপরিতলে জমে থাকা মৃত কোষ দূর হয়। ফলে ত্বক দেখায় উজ্জ্বল এবং টানটান।
এসব পুরনো ও নতুন তরিকা সবাই জানেন। তবে হালে সোশ্যাল মিডিয়াতে মুখের লোম তোলার আরেক টোটকা নিয়ে আলাপ চলছে।
আটার সঙ্গে হলুদ, ঘি মিশিয়ে খামির বানিয়ে ওই দলা মুখে উপর-নিচ করে ডলে অবাঞ্ছিত লোম তুলে আনার এক ভিডিও ইনস্টাগ্রামে দিয়েছেন ইশিতা শর্মা। তার ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেলে রূপচর্চার নানা টোটকা দেখা যায় নিয়মিতই।
ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদন প্রশ্ন তুলেছে, এই তরিকা কি আসলেই মুখের লোম তুলে ফেলতে কাজে দেয়?
অবাঞ্ছিত লোম তুলে ফেলার এই ‘হ্যাক’ বেশ মজার বলে মন্তব্য করেছেন ব্যাঙ্গালুরুতে গ্লেনেগ্লেস হাসপাতালের কনসালটেন্ট অ্যাসথেটিক ফিজিশিয়ান ড. রুবি সাচদেব।
এতে ত্বকের কিছু উপকারও হবে বলে মনে করছেন তিনি। তবে নিয়মিত মুখে ব্যবহার করতে এই খামির বানানোর উপকরণের দিকে নজর দিতে হবে।
খামিরে যা যা আছে
আটা, হলুদ গুঁড়া, তরল দুধ এবং ঘি দিয়ে বানানো হয় এই খামির। আটা ত্বকের মৃত কোষ পরিষ্কার করতে পারে। হলুদ ত্বকে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল হিসাবে কাজ করে। দুধ ত্বকে আর্দ্রতা ধরে রাখে। ঘি ত্বক রাখে মসৃণ।
এই সব উপকরণই যুগ যুগ ধরে রূপচর্চায় ব্যবহার হয়ে আসছে, বললেন ভারতের এনসিআর এলাকায় যশোদা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডার্মাটলোজিস্ট ড. সারিতা সাংকে।
“যে কোনও ধরনের ত্বকের জন্য এসবের উপকারিতা আছে। এরপরও পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া নিয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।”
যেমন আটা প্রাকৃতিক হলেও নিয়মিত মুখের লোম তুলে ফেলতে ব্যবহার হলে তাতে অনেকের ত্বকের জন্য তা ভালো নাও হতে পারে।
হলুদে কারকুমিনইডস এবং ফ্ল্যাভোনইডস আছে। এছাড়াও আছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এসব ত্বকের বলিরেখা দূর করে। কিন্তু হলুদে অনেকের ত্বকে জ্বালাপোড়া হতে পারে; দেখা দিতে পারে অ্যালার্জি।
ত্বকের মসৃণতায় ঘি খুব ভালো কাজে দেয়। কিন্তু মুখের লোমকূপ এতে বন্ধ হয়ে যেতে পারে; বিশেষ করে যাদের ব্রণের সমস্যা আছে। আবার নিয়মিত দুধ ব্যবহারের কারণে মুখ খসখসে হয়ে যেতে পারে অনেকের।
সব উপকরণ মেশানো আটার খামিরে মুখে চেপে চেপে গড়িয়ে নিলে বাড়তি লোম উঠে আসে ঠিকই, কিন্তু এতে করে ত্বক ফেটে যেতে পারে ধীরে ধীরে; লাল হয়ে যেতে পারে। এভাবে লোম টেনে উঠে আসার কারণে কারও কারও ত্বকে জ্বালাপোড়া দেখা দিতে পারে।
ইন্ডিয়া টুডেকে এসব জানালেন এনসিআর এলাকায় ডার্মালিংকস প্রতিষ্ঠানের ডার্মাটলোজিস্ট ড. বিদূষী জৈন।
আর এ কারণে ড. সাচদেবের পরামর্শ হলো, “মাঝে মাঝে এই খামির দিয়ে মুখের লোম তুলে ফেলা যেতে পারে; তবে নিয়মিত নয়। নিয়মিত হলে ত্বকের ক্ষতি হবে। ”
পার্লারে গিয়ে মুখের লোম তুলে ফেলতে ওয়াক্সিং, থ্রেডিং করানোর পাশাপাশি বাজারে হেয়ার রিমুভাল ক্রিম পাওয়া যায়; সেসব ব্যবহার করেও আরামে দূর করা যাবে মুখের অবাঞ্ছিত লোম।