আগামী তিন মাসের মধ্যে ঘুরে দাঁড়ানোর আশা করছে ন্যাশনাল ব্যাংক। এ লক্ষ্যে ব্যাংকটি থেকে নামে-বেনামে ঋণ বের করে নেওয়া গোষ্ঠীকে চিহ্নিত করা এবং তাদের কাছ থেকে ঋণের টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার ঢাকার বাংলামোটর ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ব্যাংকটির চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু।
তিনি বলেন, “আতঙ্ক এবং গুজবে ব্যাংক খাত থেকে আস্থা হারিয়েছেন আমানতকারীরা। এ খাতে অনিয়ম ছিল না- তা বলবো না। ব্যাংকিং খাতে বহুমাত্রিক ও বহু পাক্ষিক অনিয়ম হয়েছে। তবে ন্যাশনাল ব্যাংকে এখন আন্তর্জাতিক এবং দেশীয়সহ পাঁচটি অডিট ফার্ম কাজ করছে। তাদের প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে পরবর্তী করণীয় আমরা নির্ধারণ করব।
“আমি এতোটুকু নিশ্চিত করতে পারি এতদিন যত অনিয়ম হয়েছে, এখন তা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ। এখন আমরা অবলোপন করা ঋণ এবং মন্দ মানে খেলাপি হয়ে যাওয়া ঋণগুলো আদায়ের চেষ্টা করছি। পাশাপাশি বৈদেশিক বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং রেমিটেন্সের উপর জোর দিয়েছি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহায়তায় খুব দ্রুত ব্যাংকটি ঘুরে দাঁড়াবে।”
মিন্টু বলেন, “দেশের কঠিন সময়েও ন্যাশনাল ব্যাংক দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাত গার্মেন্টস শিল্প ও কারখানাগুলোর পাশে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। বিশেষত এলসি সুবিধা প্রদানসহ গার্মেন্টস কর্মীদের বেতন ভাতা সময়মতো পরিশোধ নিশ্চিত করায় ন্যাশনাল ব্যাংক সচেষ্ট রয়েছে।
“এর পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে বৈদেশিক লেনদেনের ক্ষেত্রেও ন্যাশনাল ব্যাংক সচেষ্ট। ন্যাশনাল ব্যাংক গত অক্টোবর পর্যন্ত ৯০০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ আদায় করেছে। চলতি বছরের মধ্যে আরও ৪০০ কোটি টাকা আদায়ের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।”
গত ২০ আগস্ট বেসরকারি ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বিলুপ্ত করে নতুন পর্ষদ গঠন করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ন্যাশনাল ব্যাংকের আগের পরিচালকদের অনেকেই চট্টগ্রামভিত্তিক ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের নামে-বেনামে থাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ছিলেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ন্যাশনাল ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ৪২ হাজার ২৭০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খাতা-কলমে খেলাপি হয়ে পড়েছিল ১২ হাজার ৩৬৫ কোটি, যা ব্যাংকটির বিতরণকৃত মোট ঋণের ২৯ শতাংশ।
প্রকৃতপক্ষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ আরও বেশি বলে অভিযোগ রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ বর্তমানে ১১ হাজার ৬৯৮ কোটি।
সংবাদ সম্মেলনে ব্যাংকটির পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, “যারা ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে, তাদের নামে, বেনামে, স্থাবর, অস্থাবর যেসব সম্পত্তি আছে- সেগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। এমন গ্রাহকও আছে গুলশানে তাদের ১ হাজার কোটি টাকার সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে।
“এগুলো সব ফেরত আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে ব্যাংকের পক্ষ থেকে। যারা এই ব্যাংক থেকে সবচেয়ে বেশি টাকা নিয়েছে তাদের আমরা ধরার কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।”