কর ফাঁকি ও অবৈধ অস্ত্র রাখার মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়া নিজের ছেলে হান্টার বাইডেনকে ক্ষমা করে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এই দুই মামলায় এ মাসের ১২ ও ১৬ তারিখ তার দণ্ডিত হওয়ার কথা ছিল।
প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ছেলেকে ক্ষমা করে দেওয়ার অর্থ তাকে তার অপরাধের শাস্তি পেতে হবে না।
বাইডেনের ছেলেকে ক্ষমা করে দেওয়ার ঘটনায় এরই মধ্যে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট রিপাবলিকান পার্টির নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, এই ক্ষমার মধ্য দিয়ে বিচার ব্যবস্থার অবমাননা করা হয়েছে।
২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটল হিলে তাণ্ডবের ঘটনায় জেল খাটা নিজের সমর্থকদের প্রসঙ্গ টেনে ট্রাম্প বলেন, “৬ জানুয়ারির ঘটনায় যারা বছরের পর বছর ধরে কারাবন্দি, তাদেরকেও কি ছেলের মতো ক্ষমা করে দিচ্ছেন জো?”
বিবিসি জানিয়েছে, রবিবার সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে বাইডেন বলেছেন, “আজ আমি আমার ছেলে হান্টারকে ক্ষমা করে দেওয়ার আদেশে স্বাক্ষর করেছি।”
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট চাইলে অপরাধীকে ক্ষমা করে দিতে পারেন। সেই ক্ষমতা তার রয়েছে।
তবে ছেলেকে ক্ষমা করে দেওয়ার পক্ষে ছিলেন না ডেমোক্রেটিক পার্টির বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা বাইডেন। তিনি বলেছিলেন, হান্টারের জন্য কোনও নির্বাহী আদেশ তিনি দেবেন না। অর্থাৎ ছেলেকে অপরাধের জন্য তিনি ক্ষমা করবেন না বা তার সাজা কমাবেনও না।
এমনকি কয়েক মাস আগে সেপ্টেম্বরেও হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি কারিন জ্যঁ-পিয়ের বলেছিলেন, বাইডেনের ছেলেকে ক্ষমা করার সুযোগ নেই।
কিন্তু ট্রাম্পের কাছে ক্ষমতা ছাড়ার দেড় মাস আগে সেই অবস্থান থেকে সরে এসে রবিবার বাইডেন জানান, বিচার ব্যবস্থার প্রতি তার আস্থা থাকলেও রাজনৈতিক প্রভাব থেকে এটি মুক্ত নয়। সেক্ষেত্রে ন্যায়বিচার নিশ্চিতও দুরূহ হয়ে পড়ে।
তিনি বলেন, “যেদিন থেকে আমি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিয়েছি, বিচার ব্যবস্থার সিদ্ধান্ত গ্রহণে আমি কোনও ধরনের হস্তক্ষেপ করিনি। আমার ছেলের বিরুদ্ধে যখন অন্যায়ভাবে অভিযোগ আনা হয়েছে, তখনও আমি কিছু করিনি।
“আমি আশা করি, আমেরিকানরা বুঝবেন, কেন একজন বাবা ও প্রেসিডেন্ট এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়।”
হান্টারের বিরুদ্ধে অভিযোগ কী ছিল
২০২৩ সালের ডিসেম্বরে কর ফাঁকির অভিযোগে ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেসের এক আদালতে হান্টারের বিরুদ্ধে মামলা করে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০১৬-২০১৯ সালে বিলাসী জীবন যাপনের জন্য লাখ লাখ ডলার খরচ করেন বাইডেনপুত্র হান্টার। সেসময় তিনি ইচ্ছা করে ১ কোটি ৪০ লাখ ডলার কর পরিশোধ করেননি।
হান্টার সেসময় তার বিরুদ্ধে আনা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন। তবে এ বছরের সেপ্টেম্বরে তিনি দোষ স্বীকার করে নেন।
বাইডেন ক্ষমা না করলে কর ফাঁকির এই মামলায় হান্টারের সর্বোচ্চ ১৭ বছর কারাদণ্ড হতো।
এছাড়া গত বছর হান্টারের বিরুদ্ধে ডেলাওয়ার অঙ্গরাজ্যে অবৈধভাবে আগ্নেয়াস্ত্র রাখার মামলা করা হয়।
প্রসিকিউটরদের অভিযোগ, ২০১৮ সালে আগ্নেয়াস্ত্র কেনার আবেদনপত্রে মাদক সেবন করেন না বলে দাবি করেছিলেন হান্টার।
তার আইনজীবীদের ভাষ্য, প্রেসিডেন্টের ছেলে নিজেকে মাদকাসক্ত মনে করেন না। আর আগ্নেয়াস্ত্র কেনার সময় তিনি কোনও মাদকই নিতেন না।
হান্টারের আইনজীবীরা আদালতে আরও দাবি করেন, প্রায় ১১ দিন পয়েন্ট ৩৮ ক্যালিবার কোল্ট কোবরা স্পেশাল মডেলের বন্দুক নিজের কাছে রেখেছিলেন হান্টার। সেসময় তিনি সেটি থেকে কোনও গুলি ছোড়েননি।
সেই মামলায় এ বছরের জুনে দোষী সাব্যস্ত হন হান্টার। আগ্নেয়াস্ত্র কেনার সময় মাদক ব্যবহার নিয়ে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগে তাকে সর্বোচ্চ ২৫ বছর কারাদণ্ড দিতে পারত আদালত।
ক্ষমার ঘটনা এই প্রথম নয়
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে কোনও প্রেসিডেন্ট এই প্রথম তার পরিবারের সদস্যকে ক্ষমা করেছেন, তা নয়।
এর আগে ২০০১ সালে দেশটির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন তার সৎ ছোট ভাই রজার ক্লিনটনকে কোকেইন সংক্রান্ত মামলায় ক্ষমা করে দিয়েছিলেন।
ট্রাম্প নিজেও প্রথম মেয়াদে তার মেয়ে ইভাঙ্কা ট্রাম্পের শ্বশুর চার্লস কুশনারকে ক্ষমা করে দেন। মিথ্যা তথ্য দিয়ে আয়কর রিটার্ন তৈরির অপরাধে সেসময় দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন কুশনার।