Beta
বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
Beta
বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

আন্দোলনে শহীদ প্রত্যেক পরিবারের কাছে ক্ষমা চাইলেন আইজিপি

পুলিশ সদর দপ্তরে বৃহস্পতিবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আইজিপি বাহারুল আলম।
পুলিশ সদর দপ্তরে বৃহস্পতিবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আইজিপি বাহারুল আলম।
[publishpress_authors_box]

পুলিশের পক্ষ থেকে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ প্রত্যেকের পরিবারের কাছে আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়েছেন বাহিনীর নতুন প্রধান বাহারুল আলম।

বৃহস্পতিবার পুলিশ সদর দপ্তরের হল অব ইন্টেগ্রিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা এক নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে এ নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করতে হবে।”

ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়ে পুলিশের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সরিয়ে দেয়। পুলিশের তৎকালীন মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুন বর্তমানে কারাবন্দী।

পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গত ২০ নভেম্বর অবসরে যাওয়া উপপুলিশ মহাপরিদর্শক বাহারুল আলমকে নতুন পুলিশ প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরদিন ৬ আগস্ট রাতে মো. ময়নুল ইসলামকে পুলিশ প্রধান হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তখন দেশে কোনও সরকার ছিল না।

সংবাদ সম্মেলনে নতুন আইজিপি বাহারুল বলেন, “এ আন্দোলনে ছাত্র, শিশু-কিশোর, সাধারণ মানুষ শহীদ হয়েছেন। এছাড়া কর্তব্য পালন করতে গিয়ে অনেক পুলিশ সদস্য প্রাণ দিয়েছেন। আমি তাদের প্রত্যেকের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি । তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি জানাচ্ছি গভীর সমবেদনা। যারা আহত হয়েছেন তাদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।”

তিনি বলেন, “এই আন্দোলনের সময় ফ্যাসিবাদী সরকারের স্বার্থ রক্ষায়, তাদের নির্দেশে পুলিশের কতিপয় সদস্য বাড়াবাড়ি করেছে এবং আইন ভঙ্গ করেছে; এতে কোনও সন্দেহ নাই। তবে অনেক নিরাপরাধ পুলিশ সদস্যও নিহত হয়েছেন।

“প্রতিটি হত্যাকাণ্ডই নিন্দনীয়। আমি পুলিশ বাহিনীর পক্ষ থেকে প্রতিটি শহীদ পরিবারের কাছে আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছি এবং ক্ষমা প্রার্থনা করছি।”

বাহারুল আলম বলেন, “বাংলাদেশ পুলিশের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব সংবিধানে বিধৃত মৌলিক অধিকার অর্থাৎ বেঁচে থাকার অধিকার, সম্পত্তির অধিকার, সমাবেশের অধিকার ইত্যাদি রক্ষা করা। মাঠ পর্যায়ে আদালতের পক্ষে এই অধিকার রক্ষার কাজ পুলিশই করে থাকে।

“এ বাহিনীর সদস্যরা দেশের সকল সময় সর্বোচ্চ আন্তরিকতা, নিষ্ঠা ও পেশাদারত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করে আসছেন। আমরা আমাদের ওপর অর্পিত আইনি দায়িত্ব পালনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

তিনি বলেন, “৫ আগস্টের পর বাংলাদেশ পুলিশ এক বিশাল চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। পুলিশের জীবন ও সম্পত্তিরও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এখন ধীরে ধীরে বাংলাদেশ পুলিশের অপারেশনাল কার্যক্রমে গতিশীলতা নিয়ে আসাই আমাদের অগ্রাধিকার।

“এ কাজ ইতোমধ্যেই আমরা শুরু করেছি। এক্ষেত্রে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ, দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনী, বিজিবি, আনসার, কোস্ট গার্ড, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, আপনারা সাংবাদিকবৃন্দ, সুশীল সমাজ এবং দেশের সম্মানিত নাগরিকগণ আন্তরিক ভূমিকা পালন করছেন। সেজন্য তাদেরকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই।”

পুলিশে সদস্যের উদ্দেশে আহ্বান জানিয়ে বাহিনীর প্রধান বলেন, “একটি সুশৃঙ্খল বাহিনীর সদস্য হিসেবে যথাযথভাবে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত থাকুন। আপনাদের পেশাগত নিরাপত্তা ও সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করা আমাদের পবিত্র দায়িত্ব।

“আমার আরেকটি প্রধান দায়িত্ব হবে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন। সমাজকে একটি স্থিতাবস্থায় এনে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করা। এ লক্ষ্য অর্জনে আমি আপনাদের সকলের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি। উপরোক্ত দ্বিবিধ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য পুলিশ সদস্যদের মনোবল ফিরিয়ে এনে তাদের আত্মবিশ্বাস জাগ্রত করার লক্ষ্যে আমরা সর্বতোভাবে সচেষ্ট আছি।”

জনগণকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আইজিপি বলেন, “দেশের জনগণের সমর্থন ও সহযোগিতা ছাড়া পুলিশের একার পক্ষে বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ করা দুরুহ। অপরাধ দমন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আমি সবিনয়ে দেশের জনগণের আন্তরিক সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।”

কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে গত ১৭ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় গণতান্ত্রিক ছাত্র শক্তির আহ্বায়ক আখতার হোসেনকে জোর করে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে গত ১৭ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় গণতান্ত্রিক ছাত্র শক্তির আহ্বায়ক আখতার হোসেনকে জোর করে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

পুলিশ সদস্যদেরকে তাদের কার্যক্রমের মাধ্যমেই জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে মন্তব্য করে আইজিপি বলেন, “এজন্য জনগণের সাথে বিনয়ী আচরণ করতে হবে। পুলিশের কাছে আইনি সেবা নিতে আসা জনগণকে তাদের কাঙ্ক্ষিত সেবা প্রদানে আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করতে হবে।

“অপরাধ সংঘটিত হলে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে পুলিশের দায়িত্ব তল্লাশি করা, মালামাল জব্দ করা এবং অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা। বাংলাদেশ পুলিশের ওপর অর্পিত আইনি দায়িত্ব আমরা যথাযথভাবে পালনে সচেষ্ট থাকবো।”

নতুন সরকার পুলিশ সংস্কারের যে উদ্যোগ নিয়েছে সে প্রসঙ্গ টেনে বাহারুল আলম বলেন, “বর্তমান সরকার রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের পাশাপাশি পুলিশ সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রণিতব্য সুপারিশ বাস্তবায়নের ফলে আমাদের এ প্রতিষ্ঠান সত্যিকার অর্থে জনবান্ধব পুলিশ হিসেবে গড়ে উঠবে।

“পুলিশ বাহিনীর কোনও সদস্যের কোনও ধরনের দুর্নীতি, অসদাচরণ বা শৃঙ্খলা ভঙ্গের ঘটনার ক্ষেত্রে কোনও ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না। এ ধরনের অভিযোগ প্রমাণিত হলে দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে যথাযথ বিভাগীয় ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

আইজিপি বলেন, “ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ফলে দেশে ইতিবাচক পরিবর্তনের যে সুযোগ তৈরি হয়েছে তা কাজে লাগাতে আমরা সচেষ্ট থাকবো। পারস্পরিক সৌহার্দ, সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধে উজ্জ্বীবিত হয়ে আমরা সকলে মিলেমিশে একযোগে কাজ করে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো বলে আমাদের দৃঢ় প্রতীজ্ঞা।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত