বছর শেষ হতে এখনও বাকি প্রায় এক মাস। এরই মধ্যে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা ৫০০ ছাঁড়িয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা পৌঁছে গেছে লাখের কাছাকাছি।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) জানাল, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ৯৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৫৬টিতেই এইডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে আশঙ্কাজনক পরিমাণে।
ডেঙ্গুসহ বেশ কয়েকটি রোগের বাহক এই মশার লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপের সূচককে বলা হয় ‘ব্রুটো ইনডেক্স’। কোনও স্থানে এই ব্রুটো ইনডেক্স ২০ শতাংশের বেশি হলে সেখানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে বলে মনে করা হয়।
সে হিসেবে ঢাকার অধিকাংশ এলাকাই ডেঙ্গুর উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে।
আইইডিসিআরের জরিপ বলছে, ঢাকার দুই সিটির ৯৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৫৬টি ওয়ার্ডেই ব্রুটো ইনডেক্স ২০-এর বেশি। অর্থাৎ এসব এলাকার ১০০টির মধ্যে ২০টি স্থানেই মশার লার্ভা পাওয়া গেছে।
বুধবার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ‘মনসুন এইডিস সার্ভে-২০২৪’ এর ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব তথ্য তুলে ধরেন আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন।
৫৬টি ওয়ার্ডে ব্রুটো ইনডেক্স বেশি হলেও অতি ঝুঁকিপূর্ণ মোট ২০টির নাম জানিয়েছে আইইডিসিআর।
জরিপের ফলাফলে জানানো হয়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ঝুঁকিতে রয়েছে ৩৮, ৯, ৩০, ৭, ৮, ১৮, ২৫, ২৮, ৩৬, ৩৭, ১ ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ড। ঢাকা দক্ষিণ সিটির ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ডগুলো হলো ৪৭, ৫৩, ৬১, ৫০, ২, ১৬, ২৬, ৩৬।
উত্তরের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ড হলো ৩৮; মধ্যপাড়া, মোল্লাপাড়া, মোল্লাপাড়া আদর্শ নগর, উত্তরবাড্ডা পূর্বপাড়া, উত্তরবাড্ডা ময়নারটেক, বাওয়ালীপাড়া, উত্তরবাড্ডা পূর্বপাড়া (আব্দুল্লাহবাগ), উত্তরবাড্ডা মিছরী টোলা, উত্তরবাড্ডা হাজীপাড়া মিলে এই তৈরি হয়েছে এই ওয়ার্ডটি।
এই সিটির অন্য যে ওয়ার্ডগুলো ঝুঁকিতে আছে সেগুলো যে এলাকা নিয়ে গঠিত তার মধ্যে ৯ নম্বরে রয়েছে গোলারটেক, দিয়াবাড়ী, কোটবাড়ী, জাহানাবাদ, ঋষিপাড়া, গাবতলী বাস টার্মিনাল, গরুর হাট, সুইপার কলোনি, আমিন বাজার ও আশপাশের এলাকা। এই এলাকায় ব্রুটো ইনডেক্স ৩৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
১, ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ড হলো উত্তরার ১ থেকে ১০ নম্বর সেক্টর, আব্দুল্লাপুরের কিছু অংশ, বাউনিয়া ও দক্ষিণখানসহ আশপাশের এলকার কিছু অংশ; মিরপুর সেকশন-২ এর ব্লক-এ থেকে ব্লক জে, রূপনগর আবাসিক, সেকশন-৭, দুয়ারীপাড়া, সেকশন-১ এর ব্লক-এ থেকে এইচ, চিড়িয়াখানা আবাসিক, বোটানিক্যাল গার্ডেন, প্রিয়াংকা হাউজিংসহ সংশ্লিষ্ট এলাকা।
৩০ নম্বর ওয়ার্ড হলো মোহাম্মদপুরের আদাবর, শেখেরটেক ও মনসুরাবাদসহ আশপাশের এলাকায় গড়ে ওঠা বিভিন্ন হাউজিং প্রকল্প। ৩৬ নম্বরে মিরেরটেক, মধুবাগ, নয়াটোলার বিভিন্ন অংশ, মগবাজার ওয়্যারলেস কলোনি; ৩৭ নম্বরে বাড্ডা, সেকান্দারবাগ, মোল্লাপাড়াসহ আশপাশের এলাকা।
১৮ ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে পড়েছে বারিধারা আবাসিক এলাকা ব্লক- আই, কে, জে কালাচাঁদপুর, নর্দ্দা, শাহাজাদপুর এবং বনানী, গুলশান ১, ২, ও কড়াইল।
২৫ নম্বর ওয়ার্ড হলো নাখালপাড়া, আরজতপাড়া, সিভিল এভিয়েশন স্টাফ কোয়ার্টার এবং ২৮ নম্বর শ্যামলী বাগ, পশ্চিম আগারগাঁও, আগারগাঁও প্রশাসনিক এলাকা নিয়ে গঠিত।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ড হলো ৪৭, যেখানে ব্রুটো ইনডেক্স ৭০ শতাংশ। এই ওয়ার্ডটি গঠিত হয়েছে পুরান ঢাকার পোস্তাগোলা, গেন্ডারিয়া, লাল মোহন পোদ্দার লেইন, ফরিদাবাদ লেইন, বাংলাদেশ ব্যাংক কলোনিসহ আশপাশের এলাকা নিয়ে।
জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, উত্তর সিটির তুলনায় দক্ষিণ সিটির ব্রুটো ইনডেক্স অনেক বেশি।
এই সিটির ৫০ নম্বর ওয়ার্ড গঠিত হয়েছে যাত্রাবাড়ীর বিভিন্ন অংশ নিয়ে এবং ৫৩ নম্বর ওয়ার্ড পড়েছে পূর্ব জুরাইনে।
৬১ নম্বর ওয়ার্ডভুক্ত এলাকা হলো নূরবাগ, দনিয়ার বিভিন্ন অংশ, রসুলপুর, দাসপাড়াসহ সংশ্লিষ্ট এলাকা, ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে পড়েছে ইসলামপুর, শাঁখারীবাজার, জজকোর্ট, অশোক লেইন, রাধিকা মোহন বসাক লেইনসহ সংশ্লিষ্ট এলাকা।
২৬ নম্বর ওয়ার্ড গঠিত আজিমপুর, পলাশী, ইডেন কলেজ, লালবাগ, ঢাকেশ্বরী এলাকা মিলে, দুই নম্বর ওয়ার্ড পুরোটাই গোড়ান এবং ১৬ নম্বর ওয়ার্ড ধানমণ্ডির এবটি বড় অংশ যেমন ফ্রি স্কুল স্ট্রিট, গ্রিন রোড, সার্কুলার রোড, কাঁঠালবাগান, ক্রিসেন্ট রোড ও সংশ্লিষ্ট এলাকা।
তবে এর বাইরে থাকা ওয়ার্ডগুলোর ব্রুটো ইনডেস্ক কত তা জানায়নি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা সকাল সন্ধ্যাকে বলেছেন, কোথাও কোথাও ব্রুটো ইনডেক্সের পরিমাণ ৯০ শতাংশেরও বেশি পাওয়া গেছে।
যে এইডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু ছড়ায় সেটি জিকা, চিকুনগুনিয়ার মতো রোগেরও বাহক। এই রোগগুলোর লক্ষণ, পরীক্ষা পদ্ধতি এবং এর প্রতিরোধ নিয়ে সকাল সন্ধ্যার সঙ্গে কথা বলেছেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টারের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান সহকারী অধ্যাপক ডা. আরিফা আকরাম।
তিনি বলেন, “এই রোগগুলোর ভাইরাস মশার কামড়ের মাধ্যমে মানব শরীরে প্রবেশ করে। শুরুতে যেহেতু জ্বর হয়, তাই অনেকেই গুরুত্ব দেন না। তাই তখনই মানুষ হাসপাতারে আসে যখন রোগীর অবস্থা জটিল। এই জায়গা থেকে আমাদের সরে আসতে হবে।”
চিকুনগুনিয়া
চিকুনগুনিয়া নামটি তানজানিয়ার মাকুন্দি জনগোষ্ঠির কিমাকুন্দি ভাষা থেকে এসেছে। ওই ভাষায় এর অর্থ বাঁকা হয়ে যাওয়া।
ডা. আরিফা বলেন, “বাংলাদেশে ২০০৮ সালের দিকে বাংলাদেশের রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় প্রথম এই ভাইরাস ধরা পরে। পরবর্তী সময়ে ২০১১ সালে ঢাকার দোহারে এটি লক্ষ্য করা গেলেও এরপর তেমনভাবে এ ভাইরাসের কথা শোনা যায়নি।”
তবে ২০১৭ সালের প্রথমদিকে সারাদেশে ভাইরাসটি উল্লেখযোগ্যভাবে শনাক্ত হয় জানিয়ে তিনি বলেন, “চিকুনগুনিয়া উপসর্গবিহীন হতে পারে, তবে বেশিরভাগক্ষেত্রেই উপসর্গ দেখা দেয়। হঠাৎ করেই উচ্চমাত্রার জ্বর, শরীরের জয়েন্টে ব্যথা ও ফুসকুড়ি নিয়ে রোগটি শুরু হয়।”
অনেক সময় রোগ শুরু হওয়ার দুই থেকে তিন দিন পর জ্বর কমতে শুরু করলে ফুসকুড়ির আবির্ভাব হয় বলে জানান তিনি। এই রোগের অন্য উপসর্গের মধ্যে রয়েছে মাথাব্যথা, ক্লান্তি, পেটব্যথা, ফটোফোবিয়া বা আলোর দিকে তাকাতে সমস্যা, কনজাংটিভাইটিস। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তিন থেকে চার দিনের মধ্যে জ্বর সেরে যায়। তবে হাড় ও গিঁটের ব্যথার তীব্রতা হয় প্রচণ্ড।
অনেক রোগীই আছেন যারা এই গিঁটের ব্যথা নিয়ে বছরের পর বছর ভুগেছেন জানিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, “যার কারণে রোগীর স্বাভাবিক হাঁটাচলা, হাত দিয়ে কিছু ধরা এমনকি হাত মুঠো করতেও বেশ কষ্ট হয়। আর শরীর হয় প্রচণ্ড দুর্বল।”
জিকা ভাইরাস
১৯৪৭ সালে উগান্ডাতে প্রথম রেসাস বানরের শরীরে জিকা ভাইরাস আবিষ্কার হয় এবং পরবর্তীকালে ১৯৫২ সালে মানুষের শরীরে পাওয়া যায়। দেশে জিকা প্রথম শনাক্ত হয় ২০১৪ সালে সংরক্ষিত রক্তের নমুনা পরীক্ষায়।
জিকার ক্ষেত্রে ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে রোগের কোনও লক্ষণ দেখা যায় না, বাকি ২০ শতাংশ ক্ষেত্রে কিছু উপসর্গ দেখা দেয়, বলেন ভাইরোলজি বিভাগের এই প্রধান।
তিনি বলেন, “আক্রান্ত ব্যক্তির চামড়ায় লালচে দানার মতো দাগ বা র্যাশ দেখা দেয়। সঙ্গে মাথাব্যথা, চোখ লালচে হওয়া, মাংসপেশি ও গিঁটে ব্যথা থাকে।
“তবে আক্রান্ত হওয়ার তিন থেকে ১২ দিনের মধ্যে উপসর্গ দেখা দেয়, আর সেটা থাকে দুই থেকে সাতদিন।”
সাধারণত জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে মানুষ সুস্থ হয়ে যায়, তবে এটা জটিল হতে পারে গর্ভবতী আর বয়স্কদের ক্ষেত্রে।
ডা. আরিফা আকরাম বলেন, “গর্ভবতী জিকায় সংক্রমিত হলে গর্ভের সন্তানের ‘মাইক্রোসেফালি’র ঝুঁকি থাকে। অর্থাৎ মাথা ছোট হয়। বয়স্ক মানুষেরা আক্রান্ত হলে তার গুলেনবারি সিনড্রোমের (জিবিএস) আশঙ্কা থাকে এবং এর ফলে তিনি চলনশক্তি হারিয়ে ফেলেন।”
ডেঙ্গু
ডেঙ্গু নামটি কোথা থেকে এসেছে, তা স্পষ্ট নয়। ধারণা করা হয় আফ্রিকার সোয়াহিলি ভাষার প্রবাদ ‘কা-ডিঙ্গা পেপো’ থেকে এসেছে। চীনের চিকিৎসা সংক্রান্ত নথিপত্রে ডেঙ্গুর সন্ধান মেলে। সেখান থেকে জানা যায়, চীনে এই রোগটি ৯৯২ খ্রিস্টাব্দে শনাক্ত হয়েছিল।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, মহামারি আকারে প্রথম ডেঙ্গু শনাক্ত হয় ১৯৫০ সালের দিকে ফিলিপিন্স ও থাইল্যান্ডে। বাংলাদেশে ২০০০ সালে প্রথম ডেঙ্গু জ্বর শনাক্ত হয়। এরপর প্রতি বছরই ডেঙ্গুতে দেশে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে। দেশে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত ও মৃত্যু হয়েছে ২০২৩ সালে
ডা. আরিফা বলেন, ডেঙ্গুর চারটি টাইপ আছে, এগুলোকে বলে সেরোটাইপ। ডেন-১, ডেন-২, ডেন-৩ এবং ডেন-৪ নামে এরা পরিচিত। একজন মানুষের চারবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। কোনও মানুষ যখন একটি সেরোটাইপ দিয়ে আক্রান্ত হয়, পরে সে অন্য সেরোটাইপের মাধ্যমে আক্রান্ত হতে পারে।
আর এর কারণেই ভিন্ন ভিন্ন সেরোটাইপ দ্বারা সংক্রমণের ফলে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার এবং ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোমের মত জীবন-হুমকি পরিস্থিতি হয়, বলেন তিনি।
সাধারণত ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হলে উপসর্গবিহীন বা সাধারণত জ্বর হয়। তবে ডেঙ্গুর বৈশিষ্ট্য হলো হঠাৎ জ্বর হওয়া, মাথাব্যথা (সাধারণত দু’চোখের মাঝের জায়গায়), মাংসপেশি ও হাড়ের সংযোগস্থলে ব্যথা, র্যাশ, বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া (সাম্প্রতিক সময়ে এটা দেখা যাচ্ছে), হালকা বা অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ হয়।
ডেঙ্গু আক্রান্ত কারও তীব্র পেটে ব্যথা, ক্রমাগত বমি দিনে তিনবারের বেশি, শরীরে পানি জমা, মিউকোসাল রক্তপাত, অলসতা, অস্থিরতা, প্লাটিলেটের সংখ্যা দ্রুত কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হেমাটোক্রিট বৃদ্ধি (হেমাটোক্রিট বৃদ্ধির অর্থ রোগীর রক্তনালি থেকে রক্তরস বেরিয়ে যাওয়া এবং রক্তের ঘনত্ব বেড়ে যাওয়া। এ অবস্থা দ্রুত ঘটতে থাকলে রোগীর রক্তচাপ কমে শক সিনড্রোম হতে পারে। তখন রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। এ সময় রোগীকে শিরার মাধ্যমে পর্যাপ্ত স্যালাইন দিতে হয় ) এগুলো দেখা দিলে অবশ্যই রোগীকে হাসপাতালে নিতে হবে।
কারণ তার তখন চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকা প্রয়োজন, জানালেন ডা. আরিফা।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টারের ভাইরোলজি বিভাগের এই প্রধান বলেন, “ডেংগু, চিকুনগুনিয়া বা জিকা তিনটি ভাইরাস টেস্টের জন্যই আরটি-পিসিআর পদ্ধতি সবচেয়ে ‘স্পেসিফিক’, কিন্তু এটি ব্যয়বহুল এবং এর জন্য দক্ষ জনবল ও আধুনিক যন্ত্রপাতির প্রয়োজন, যা দেশের সব হাসপাতালে সহজলভ্য নয়।”
কিন্তু কোভিড মহামারির সময়ে দেশের অনেক স্থানে পিসিআর মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে যদি এই ভাইরাসগুলোর পিসিআর কিট সরবরাহ করা হয়, তাহলে পিসিআর করেও রোগ নির্ণয় করা সম্ভব, বলেন তিনি।
ডা. আরিফা বলেন, যেকোনো ভাইরাসের আইজিজি (IgG) যদি কারও পজিটিভ আসে তাহলে বুঝতে হবে তার আগে সেই ভাইরাস দিয়ে ইনফেকশন হয়েছিল। চিকুনগুনিয়া একবার হলে দ্বিতীয়বার হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই, কিন্তু ডেঙ্গু ও জিকাতে সেটা নয়।
তিনি বলেন, “ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টারের ভাইরোলজি বিভাগের করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, ডেঙ্গু দ্রুত শনাক্তকরণের জন্য এনএস১ এলিসা পদ্ধতিটি ৯৪ শতাংশ কার্যকর যেখানে এনএস১ পদ্ধতিটি ৫৬ শতাংশ ক্ষেত্রে কার্যকর।
“তবে এনএস১ এলিসা কিছুটা ব্যয়বহুল, তবে সেটাও নগণ্য। কিন্তু যে কোনও রোগের প্রাদুর্ভাব, রোগীর চিকিৎসা, ভবিষ্যত প্রতিরোধের জন্য বেশি কার্যকর ও নির্ভরযোগ্য পরীক্ষাই শ্রেয়।”
প্রতিকার
মশার কামড় থেকে সুরক্ষাই এইডিস মশা থেকে বাঁচার সবচেয়ে ভালো উপায় জানিয়ে ডা. আরিফা বলেন, জানালায় নেট লাগানো, প্রয়োজন ছাড়া দরজা জানালা খোলা না রাখা, ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করা, শরীরে মশা প্রতিরোধক ক্রিম ব্যবহার করার মাধ্যমে মশার কামড় থেকে বাঁচা যায়।
সেইসঙ্গে আবাসস্থল ও এর আশপাশে মশার প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস করতে হবে। বাসার আশপাশে ফেলে রাখা মাটির পাত্র, কলসী, বালতি, ড্রাম, ডাবের খোলা ইত্যাদি যেসব জায়গায় পানি জমতে পারে, সেখানে এইডিস মশা প্রজনন করতে পারে। এসব স্থানে যেন পানি জমতে না পারে সে ব্যাপারে লক্ষ্য রাখা এবং নিয়মিত বাড়ির আশপাশে পরিষ্কার করতে হবে।
নিজের সুরক্ষার জন্য কেবল সরকারের আশায় বসে না থেকে নিজেদেরও সচেতন হওয়ার পরামর্শ এই চিকিৎসকের।
শিশু,অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত বৃদ্ধ ও গর্ভবতী নারীর প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রাখার পরামর্শ দেন তিনি।
ডা. আরিফা আকরাম বলেন, “যেহেতু এ মশা আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত থেকে জীবাণু নিয়ে অন্য মানুষকে আক্রান্ত করে, কাজেই আক্রান্ত ব্যক্তিকে যাতে মশা কামড়াতে না পারে সে ব্যাপারেও ব্যবস্থা নিতে হবে।”