ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে হামলার শিকার সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর পরিদর্শন করেছে জাতীয় নাগরিক কমিটির প্রতিনিধি দল। দলের সদস্যরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখেন এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন।
শনিবার মংলারগাঁও গ্রামে যায় প্রতিনিধি দলটি। দলে ছিলেন জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য মানজুর আল মতিন, প্রীতম দাশ, তাজনুভা জাবিন ও স্থানীয় নেতারা।
পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মানজুর আল মতিন।
তিনি বলেন, “যারা হিন্দু ভাইদের বাড়িঘরে হামলায় জড়িত, তাদের বিচার হওয়ার দরকার, তাদের আইনের আওতায় আনা জরুরি। যারা হামলা করেছেন, তারা গোটা দেশের ঐক্য ও সম্প্রীতি রক্ষার যে চেষ্টা, সেটাকে বাধাগ্রস্ত করছেন। তাদের চিহ্নিত করতে হবে।”
জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য এই আইনজীবী আরও বলেন, “মানুষের বাড়িতে হামলা, মানুষকে অনিরাপদ করা, তাদের শিশুসহ পালিয়ে যাওয়া এটা আমাদের প্রিয় বাংলাদেশে হতে পারে না। কারা এই ঘটনার পেছনে ইন্ধন দিচ্ছে, সেটা খুঁজে বের করা জরুরি। এটার পেছনে আরও শক্তি রয়েছে। কারা এই মানুষগুলোকে উত্তেজিত করেছে, এক জায়গায় জড়ো করছে, কারা জড়ো করে নিয়ে আসছে, এরা কারা?
সুনামগঞ্জে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে হিন্দুদের বাড়ি ভাংচুর
“কারা বাংলাদেশে অশান্তি সৃষ্টি করতে চাচ্ছে, কারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে চাচ্ছে, তাদের চিহ্নিত করা প্রয়োজন।”
স্থানীয় হিন্দুদের সঙ্গে কথার বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ক্ষুব্ধ জনতার হাত থেকে বাড়িঘর রক্ষায় এসেছিলেন এলাকার ইমামসহ অন্যরা।
মানজুর বলেন, “এই উদাহরণগুলো সারা বাংলাদেশে সৃষ্টি করতে হবে। ভাই হয়ে ভাইয়ের পাশে সব সময় দাঁড়াতে হবে। মনে রাখতে হবে, একজন ব্যক্তি ঘটনার জন্য দায়ী। তাকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। আমরা মনে করি তার বিচার হবে। একজনের জন্য সব হিন্দু দায়ী নন।”
বর্তমান বাংলাদেশকে ঐক্যের দেশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “হিন্দু-মুসলমান সবার বাংলাদেশ। এই গ্রামের ঘটনা নিয়ে ভারতীয় অনেক গণমাধ্যম মিথ্যা ও গুজব চড়াচ্ছে। এই মিথ্যা প্রতিরোধে সত্যই হোক হাতিয়ার।”
গত মঙ্গলবার ফেইসবুকে এক যুবকের একটি মন্তব্যকে কেন্দ্র করে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ উঠলে স্থানীয়দের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে পুলিশ এই যুবককে সেদিন সন্ধ্যায় থানা হেফাজতে নেয়।
তবে এরপরেও রাতে মিছিল নিয়ে ক্ষুব্ধ জনতা মংলারগাঁও গ্রামে হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। এসময় দোয়ারাবাজার সদরের লোকনাথ মন্দিরসহ বেশ কিছু দোকানপাট ভাঙ্গচুর ও বাড়িঘরে হামাল চালানো হয় ।
সুনামগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিমল বণিক সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “পরেরদিনই আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। মংলারগাঁও ও দোয়ারাবাজার সদরে প্রায় শতাধিক বাড়িঘর আক্রান্ত হয়েছে। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও মন্দির ভাঙচুর করা হয়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারসহ পরিস্থিতি শান্ত রাখার জন্য প্রশাসনকে আমরা অনুরোধ জানিয়েছি।”
দোয়ারাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.জাহিদুল হক জানান, যার ফেইসবুক পোস্ট নিয়ে এ ঘটনা ঘটেছে তার বাড়িতেও গিয়েছিল উত্তেজিত জনতা। তখনই তাকে হেফাজতে নেয় পুলিশ।
পরে অভিযুক্ত আকাশ দাশের (২০) বিরুদ্ধে সাইবার সিকিউরিটি আইনে মামলা করা হয়। আকাশ বর্তমানে সুনামগঞ্জ জেলা কারাগারে রয়েছে বলেও জানান ওসি।
এলাকার বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ওসি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “ঘটনার দিন রাতেই সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। এখন পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। মানুষের মধ্যে আতংক কমেছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্থানীয় রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতাসহ এলাকাবাসীর সঙ্গে মতবিনিময় সভা করা হয়েছে। কোনও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যাতে আর না ঘটে সেজন্য আমরা সতর্ক রয়েছি।”