Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪

নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে পর্যটকে মুখর হচ্ছে রাঙ্গামাটি

পর্যটকদের পদচারণায় মুখর রাঙ্গামাটির ঝুলন্ত সেতু। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
পর্যটকদের পদচারণায় মুখর রাঙ্গামাটির ঝুলন্ত সেতু। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
[publishpress_authors_box]

শীত মৌসুম এখনও শুরু হয়নি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় শেষ হয়নি বার্ষিক পরীক্ষা। তবু পর্যটন মৌসুম শুরু হয়ে গেছে দেশের পাহাড়ি জেলা রাঙ্গামাটিতে।

খাতসংশ্লিষ্টরা তাই আশাবাদী, নানা কারণে সংকটের মুখে পড়া পর্যটন শিল্প চাঙ্গা হওয়ার বিষয়ে।

শনিবার বিকালে রাঙ্গামাটি পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সের ‘সিম্বল অব রাঙ্গামাটি’ খ্যাত ঝুলন্ত সেতু ঘুরে দেখা গেল, গোটা এলাকা পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত। কেউ এসেছেন বন্ধুদের সঙ্গে, কেউবা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে। কাউকে দখো গেল সেলফি তুলতে, কেউ আবার অন্যদের অনুরোধ করে তুলে নিচ্ছেন গ্রুপ ছবি।

নৌকা ভাড়া করে লেকের পানিতে বেড়াচ্ছেনও অনেকে।

ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেই আসছেন পর্যটকরা। বিশেষ করে গত কয়েকদিন আবহাওয়া ভ্রমণের অনুকূল থাকায় বেড়েছে পর্যটকের সংখ্যা, বলছেন পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা।

কেবল ঝুলন্ত সেতুই নয়, সুবলং ঝর্ণা, ডিসি বাংলো, পলওয়েল পার্ক, রাজবাড়ি, কাপ্তাই হ্রদ, আসামবস্তি-কাপ্তাই সড়কসহ ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে ওঠা নীলাঞ্জনা রিসোর্ট, বেরান্ন্য লেক, ইজোর, রাইন্যাটুগুন ইকো রিসোর্টসহ দৃষ্টিনন্দন ও মনোমুগ্ধকর পর্যটনস্পটগুলোয় প্রতিদিনই ভিড় বাড়ছে। বিশেষ করে সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় রীতিমতো পর্যটকের মেলা বসে এসব স্থানে।

কথা হয় ঢাকা থেকে আসা পর্যটক নাঈমের সঙ্গে। প্রথবারের মতো পার্বত্য এই জেলায় এসেছেন তিনি।

নাঈম বলেন, “এই প্রথম পাহাড় দেখলাম, হ্রদ-পাহাড়ের মিতালী যে এত মনোমুগ্ধকর তা আমার জানা ছিল না। প্রকৃতি যে কতটা সুন্দর ও স্নিগ্ধ হতে পারে, তা এখানে না এলে কেউ বুঝতে পারবে না।”

ফেনী থেকে বন্ধুদের সঙ্গে এসেছেন হাসান। তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “বন্ধুরা মিলে বছরের শেষে শীতের শুরুতে রাঙ্গামাটি বেড়াতে এসেছি। রাঙ্গামাটির সৌন্দর্য দেখে খুব ভালো লাগছে।

“কিছুদিন আগে সহিংসতার কারণে প্রশাসন পর্যটকদের ভ্রমণ বন্ধ করে দিয়েছিল। এবার যেহেতু পরিস্থিতি স্বাভাবিক তাই আমরাও ভালোভাবে ঘুরতে পারছি। পাহাড়ঘেরা প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে পেরে সবারই খুব ভালো লাগছে।”

কেবল পর্যটকরাই নন, নিষেধাজ্ঞার উঠে যাওয়ায় খুশি পর্যটনের সঙ্গে জড়িতরাও।

পর্যটন নৌ-যান ঘাটের লাইনম্যান মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, “প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা থাকায় পর্যটকরা আসতে না পারায় বোটচালক ও মালিকরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এবারে যেহেতু কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই, শীতের মৌসুমও শুরু হয়েছে তাই আমরা বেশ আশাবাদী। পর্যটকের এই ঢল অব্যাহত থাকলে সামনের দিনগুলো আমাদের ব্যস্ত কাটবে, ব্যবসার মন্দাভাবও কাটিয়ে ওঠা যাবে।”

রাঙ্গামাটি পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক অলোক বিকাশ চাকমা বলেন, “মৌসুম শুরু হতেই পর্যটকরা আসতে শুরু করেছেন। বর্তমানে আমাদের ৬০ শতাংশ বুকিং রয়েছে। যেভাবে পর্যটক আসছে, সেই ধারাবাহিকতা যদি বজায় থাকে তাহলে এ বছর ভালো পরিমাণে রাজস্ব আয় হবে বলে আশা করছি।”

অন্যদিকে, মেঘের রাজ্য খ্যাত রাঙ্গামাটির সাজেক ভ্যালি উপত্যকাও এখন পর্যটকদের ভারে মুখরিত। মেঘ পাহাড়ের মিতালি, সৌন্দর্য দেখতে সাজেকে ছুটছেন পর্যটকরা।

সাজেক কটেজ মালিক সমিতির সহকারী সাধারণ সম্পাদক মতিজয় ত্রিপুরাও জানালেন পর্যটকমুখর পরিস্থিতির কথা।

তিনি বলেন, “আগের চাইতে পরিবেশ পরিস্থিতি ভালো থাকায় পর্যটকদের আগমন বাড়ছে। সাজেকের বেশির ভাগ কটেজ, রিসোর্ট এখন প্রায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ বুকিং রয়েছে। অন্যান্য দিনের চাইতে বিশেষ করে বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবারে সাজেকে পর্যটকের চাপ বেশি থাকে। সামনের দিনগুলো পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে আরও ব্যাপক সংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটবে আশা করছি।”

তীব্র ছাত্র-গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের। এরপর গত ১৯ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি শহর, দীঘিনালা উপজেলা এবং ২০ সেপ্টেম্বর রাঙ্গামাটি শহরে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় দুই জেলায় চারজন নিহত হয়, আহত হয় শতাধিক মানুষ। খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটিতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার তদন্ত কার্যক্রম চলমান থাকাকালেই গত ১ অক্টোবর ধর্ষণের অভিযোগে খাগড়াছড়ি সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে রাঙ্গামাটির সাজেক ভ্যালিতে পর্যটকদের ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করে জেলা প্রশাসন। এরপর ৮ অক্টোবর থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান– তিন পার্বত্য জেলায় পর্যটকদের ভ্রমণ থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানায় সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনগুলো।

পরে ১ নভেম্বর থেকে রাঙ্গামাটি ভ্রমণে বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হয়।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত