বিএনপিকে মাইনাস করার ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কারও নেই বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, তিনবার ক্ষমতায় ছিল বিএনপি। আবার ক্ষমতায় যাবে তারা। এটা নিশ্চিত। বিএনপি নির্বাচনের জন্য সবসময় প্রস্তুত। কালকে বলবেন, কালকে নির্বাচনে যাবে।
শনিবার বিকালে লন্ডনে মাইলএন্ড এলাকায় রিজেন্টস লেইক ব্যাংকুয়েটিং হলে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপির যুক্তরাজ্য শাখা ওই সভার আয়োজন করে।
তারেক রহমানের দেশে ফেরার প্রসঙ্গে দলটির মহাসচিব বলেন, “দল যখন মনে করবে, তার এই মুহূর্তে দেশে যাওয়ার প্রয়োজন, তিনি দেশে চলে যাবেন। সবাই জানেন, তার কতগুলো লিগ্যাল ইস্যু আছে। সেই ইস্যুগুলো নিয়ে কাজ হচ্ছে। কাজ শেষ হলে তিনি দেশে চলে যাবেন।”
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদে ইস্তফা দিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা। এরপর বিভিন্ন সময়ে তার বক্তব্য আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রকাশ করা হয়। দলের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে তার ফোনালাপও সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌঁছে যায়।
শেখ হাসিনার এ কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “শেখ হাসিনা তাদের দেশে (ভারত) আশ্রয় নিয়েছে, এটা তাদের ব্যাপার। আমরা সবসময় প্রত্যাশা করি, সব দেশের একটা মূল নীতি আছে। সেটা হচ্ছে, আশ্রিত ব্যক্তি কখনও কথা বলবে না।
“কিন্তু তিনি কথা বলছেন, এটা আমরা প্রতিবাদ করেছি। এমনকি অন্তর্বর্তী সরকারও প্রতিবাদ করেছে। সুতরাং এটা পরিষ্কার যে, ভারতের সঙ্গে আমাদের নীতি কী হবে, সেটা নির্ভর করবে আমাদের প্রয়োজনের ওপর, তাগিদের ওপর, কী সমস্যা হয় তার ওপর।”
শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে ভারত। এর মধ্যেই গত ২৫ নভেম্বর রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার হন ধর্মীয় নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী। তার গ্রেপ্তার ও পরবর্তী সময়ে তাকে জামিন না দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি হয়, যা এখনও চলছে।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে কংগ্রেস নেতা প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা ও চিন্ময়কে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে পড়ে যখন গত ২ ডিসেম্বর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী পাঠাতে ভারতের বিজেপি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান এবং একই দিন চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর মুক্তি দাবিতে ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাই কমিশনে হিন্দুত্ববাদী স্থানীয় এক সংগঠন হামলা করে বসে।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের এই টানাপোড়েন তুলে ধরে বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “আমাদের সার্বভৌমত্বের ওপর যদি কোনও হাত পড়ে, তা আমরা কোনোদিনই সহ্য করব না। আমরা পরিষ্কার করেই বলেছি, আমাদের দেশ নিয়ে সিদ্ধান্ত আমরাই নেব; অন্য কেউ নেবে না। এখানে কেউ দাদাগিরি করবে, তা আমরা কখনোই মেনে নেব না।
“আমরা ৭১ সালে দেশ স্বাধীন করেছি, পাকিস্তান থেকে বের হয়ে এসেছি ভারতের পেটের মধ্যে ঢোকার জন্য নয়। আরেকটা দেশ ১৫ বছর ধরে তার প্রভাব খাটিয়েছে হাসিনা সরকারের ওপর। সুতরাং আমাদের মধ্যে যারা দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি আছে আমরা কোনোমতেই মেনে নেব না যে, আমার দেশের ভেতরে কেউ হস্তক্ষেপ করবে।”
জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারেরও সমালোচনা করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, “অনেক আত্মত্যাগ, রক্তপাতের মধ্য দিয়ে হাসিনামুক্ত, ফ্যাসিবাদমুক্ত হতে পেরেছি। কিন্তু যখন কাউকে জিজ্ঞেস করি, ‘ভাই কেমন আছেন?’ বলে, ‘স্বস্তি পাচ্ছি না’।
“এত রক্তপাত, এত ত্যাগ, এত কষ্ট তারপর যদিও এই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়, তাহলে তো কষ্ট হবেই। আমাদের সবার একটাই প্রত্যাশা ছিল- সুন্দর গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা ফিরে পাব। কিন্তু আকাশে মেঘ করেছে, যা প্রত্যাশিত ছিল না। আমরা এখান থেকে বের হয়ে আসতে চাই।”
তিনি বলেন, “ছোটখাটো ঘটনাকে কেন্দ্র করে সম্প্রীতি নষ্ট করার অভিযোগ আনা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ নিজের হাতে দেশের ভবিষ্যৎ নষ্ট করেছে। পতিত ফ্যাসিস্টরা এখন দেশে অরাজকতা তৈরির চেষ্টা করছে।”