সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) নেতা আবু মোহাম্মদ আল জুলানি বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী গাজী আল জালালির সঙ্গে ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে বৈঠক করেছেন।
সোমবার প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, এইচটিএস নেতা এবং গোষ্ঠীটির সমর্থিত স্যালভেশন সরকারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আল-বশির বিদায়ী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন।
বিদ্রোহীরা জানিয়েছে, বৈঠকের উদ্দেশ্য ছিল ‘সিরিয়ার জনগণের সেবা নিশ্চিত করে ক্ষমতা হস্তান্তরের সমন্বয় করা’।
সিরিয়ার এক সূত্র সিএনএনকে জানিয়েছে, “পরবর্তী অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী এখনো চূড়ান্ত হয়নি। জুলানি, মোহাম্মদ আল-বশির এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকটি হয়েছে দামেস্কের ফোর সিজনস হোটেলে।”
মোহাম্মদ আল-বশির হলেন বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইদলিব অঞ্চলে কার্যরত স্যালভেশন সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা এইচটিএস সমর্থিত নেতা।
ভিডিওতে এইচটিএস নেতা জুলানিকে বলতে শোনা যায়, “আমাদের লোকেরা এখন অনেক অভিজ্ঞ। তারা শূন্য থেকে কাজ শুরু করেছে। মনে রাখবেন, ইদলিব ছোট এবং সেখানে কোনো সম্পদ নেই। তা সত্ত্বেও আমরা অতীতে অনেক কিছু করতে পেরেছি।
“আপনারা দেখবেন, তারা অভিজ্ঞ। বিভিন্ন বিষয়ে সফলভাবে কাজ করার ভালো রেকর্ড তাদের রয়েছে। এজন্য আমাদের তাদের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যেতে হবে এবং তাদের অভিজ্ঞতা থেকে উপকৃত হতে হবে।”
বিদ্রোহীদের হাতে দামেস্কের পতনের পরই বাশার আল আসাদের প্রধানমন্ত্রী এক বার্তা দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি বিদ্রোহীদের সঙ্গে সহযোগিতা এবং ‘সরকারি কার্যক্রমের মসৃণ ও সুশৃঙ্খল হস্তান্তর’ নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি দেন। পাশাপাশি ‘রাষ্ট্রীয় স্থাপনাগুলো সংরক্ষণ’ করার কথাও তিনি বলেন।
আসাদের বাহিনীকে এইচটিএসে যোগদানের আহ্বান
সিরিয়ার বিদ্রোহীরা আসাদ সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ‘সমঝোতা কেন্দ্রে’ নিবন্ধনের আহ্বান জানিয়েছে। এইচটিএসের সমন্বয়ে গঠিত বিদ্রোহী জোট, মিলিটারি অপারেশনস কমান্ড আসাদের আমলের ‘অপরাধী সেনা সদস্যদের জন্য একটি সমঝোতা কেন্দ্র’ খোলার ঘোষণা দিয়েছে।
এজন্য সাবেক শাসনের সেনাদের সমস্ত নথিপত্র, সরকারের দেওয়া অস্ত্র নিয়ে আসার জন্য বলা হয়েছে। নির্দেশ না মানলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।
সোমবার বিদ্রোহীরা সিরিয়ার সেনাবাহিনীতে চাকরির জন্য নিয়োজিত সৈন্যদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছে। তারা জানিয়েছে, “তাদের জীবন রক্ষার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। তাদের কোনও ক্ষতি করা হবে না। তবে অফিসার ও স্বেচ্ছাসেবী সেনাদের ক্ষমা করা হবে না।”
সীমান্ত খুলে দেবে তুরস্ক
সিরিয়ার পরিস্থিতি বিবেচনায় তুরস্ক ইয়াইলাদাগি সীমান্ত খুলে দেবে বলে জানিয়েছে। এতে সিরিয়ার শরণার্থীরা নিরাপদে ও স্বেচ্ছায় দেশে ফিরতে পারবেন বলে জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান। তুরস্কে বর্তমানে ২৯ লাখ সিরীয় শরণার্থী অবস্থান করছে।
এরদোয়ান বলেন, “গত ১৩ বছর ধরে আমাদের সিরীয় ভাই-বোনেরা তাদের মাতৃভূমির জন্য অপেক্ষা করছেন। আমি বিশ্বাস করি, তাদের এই অপেক্ষার শেষ হতে চলেছে। তুরস্ক দিনরাত কাজ করবে যাতে সিরিয়া স্থায়ী শান্তি ও স্থিতিশীলতা অর্জন করতে পারে।”
এইচটিএস এখনও তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী দল
যুক্তরাষ্ট্র এখনও সন্ত্রাসী তালিকা থেকে এইচটিএসের নাম বাতিলের কোনও সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করছে না। তবে ভবিষ্যতে এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হতে পারে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এক ব্রিফিংয়ে বলেন, “আমরা সবসময় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ডের ভিত্তিতে আমাদের নিষেধাজ্ঞার অবস্থান পর্যালোচনা করি। কোনো প্রতিষ্ঠান ভিন্ন পদক্ষেপ নিলে আমাদের নিষেধাজ্ঞার অবস্থানেও পরিবর্তন হতে পারে।”
মিলার জানান, সন্ত্রাসী তালিকায় থাকা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের এইচটিএসের সঙ্গে যোগাযোগের সক্ষমতা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার গুরুত্বপূর্ণ গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে আলোচনা করতে চায়। এর মধ্যে এইচটিএসও অন্তর্ভুক্ত। তবে এইচটিএস নেতা জুলানির সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের কোনো পরিকল্পনা আছে কি না, সে বিষয়ে তিনি মন্তব্য করেননি।
চুক্তি লঙ্ঘন করেছে ইসরায়েল: জাতিসংঘ
জাতিসংঘের ডিসএঙ্গেজমেন্ট অবজারভার ফোর্স (ইউএনডিওএফ) জানিয়েছে, সিরিয়ার বাফার অঞ্চলে ইসরায়েলের উপস্থিতি ১৯৭৪ সালের সিরিয়ার সঙ্গে চুক্তি লঙ্ঘন করবে।
রবিবার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানান, তিনি ইসরায়েলি সেনাদের বাফার অঞ্চল ‘নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার’ নির্দেশ দিয়েছেন। এই অঞ্চলটি ইসরায়েল-অধিকৃত গোলান মালভূমিকে সিরিয়ার বাকি অংশ থেকে আলাদা করে।
জাতিসংঘ নিশ্চিত করেছে যে, ইসরায়েলি সেনারা বাফার অঞ্চলে প্রবেশ করেছে এবং সেখানে অন্তত তিনটি স্থানে অবস্থান করছে।
তথ্যসূত্র : সিএনএন