ঋণ খেলাপিদের বাড়ি-অফিসের সামনে ব্যাংককর্মীদের অবস্থান কর্মসূচি চলছেই; তার ধারাবাহিকতায় এবার এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম মাসুদের বাড়ির সামনে জড়ো হলেন ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক কর্মকর্তারা।
চট্টগ্রাম নগরীর সুগন্ধা আবাসিক এলাকায় এস আলমের বাড়ির সামনে মঙ্গলবার অন্তত একশ কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়ো হয়ে এই কর্মসূচি পালন করেন। সেখানে বক্তৃতায় তারা ঋণের টাকা পরিশোধের দাবি জানান।
খেলাপি ঋণ আদায়ে চট্টগ্রামে ২০ দিন ধরে ব্যবসায়ীদের বাসা-বাড়ি এবং অফিসের সামনে অবস্থান নিয়ে কর্মসূচি পালন করে আসছে বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মীরা। এস আলমের বাড়ির সামনে অবস্থান কর্মসূচি এই প্রথম।
রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের আগ পর্যন্ত সাইফুল আলম মাসুদের মালিকানাধীন ব্যাংক ছিল ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত আগস্ট মাসে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি এটিসহ অন্তত ছয়টি ব্যাংকের কর্তৃত্ব হারান।
আওয়ামী লীগ সরকারের মদদপুষ্ট হয়ে এস আলমের বিরুদ্ধে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ আছে। অভিযোগ আছে, হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ খেলাপির।
বিপুল ঋণ থাকার পরও আগস্টের আগ পর্যন্ত এস আলম গ্রুপের নাম ঋণ খেলাপির তালিকায় কখনোই ওঠেনি।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নভেম্বর মাসে এস আলম গ্রুপের কাছ থেকে এক হাজার ৮৫০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য জামানত হিসাবে থাকা সম্পত্তি নিলামে তোলে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক।
এস আলম গ্রুপের অন্যতম সহযোগী প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ট্রেডিং কর্পোরেশন লিমিটেডের মাধ্যমেই এই বিপুল অঙ্কের ঋণ নেওয়া হয়েছিল।
এখন ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষও নিজেদের ঋণ আদায়ে মাঠে নেমে কর্মসূচি পালন করল।
তবে তাদের কাছ থেকে এস আলম গ্রুপ কত টাকা ঋণ নিয়েছে এবং কত টাকা অনাদায়ী আছে, তার সুনির্দিষ্ট তথ্য ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে পাওয়া যায়নি।
সুগন্ধা আবাসিক এলাকার ‘এস আলম হাউস’র সামনে কর্মসূচিতে ছিল বেসরকারি ব্যাংকটির চট্টগ্রাম অঞ্চল ও নগরীর ১১টি শাখার কর্মকর্তারা। সেখানে বক্তব্য দেন ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখার ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মোস্তফা, আগ্রাবাদ শাখার ব্যবস্থাপক মোশাররফ হোসেইন চৌধুরী, জুবিলী রোড শাখার আনোয়ারুল আলম।
তারা বলেন, এস আলম ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ৪০-৪৫ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। বকেয়া এই টাকা আদায় না হওয়ায় ব্যাংকে তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে। তাই বড় অঙ্কের বিনিয়োগের টাকা আদায়ে তারা এখানে অবস্থান নিয়ে একটি বার্তা দিচ্ছেন।
ব্যাংকটির খাতুনগঞ্জ শাখার ব্যবস্থাপক ও সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোস্তফা বলেন, “এটা এখন জাতীয় সংকট। সংকট সমাধানে আমাদের সবচেয়ে বড় গ্রাহক এস আলম গ্রুপ এবং এই গ্রাহকসংশ্লিষ্ট যে বিনিয়োগগুলো আছে, তা আদায়ের জন্য প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশে আজ আমরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করছি।”
৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে সাইফুল আলম মাসুদ এবং তার পরিবারের প্রায় সবাই বিদেশে। ফলে এনিয়ে তাদের কারও কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
২০০৪ সালে সিকদার গ্রুপ থেকে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ যায় এস আলম গ্রুপের কাছে। এর পর থেকে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ছিলেন এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম নিজেই।