মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের ২৭০ কিলোমিটার সীমান্তের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে রাখাইন রাজ্যের জাতিগত বিদ্রোহী গেষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)। গত রবিবার মংডু টাউনশিপ বা শহরাঞ্চল দখল করার পর এএ তাদের এই নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে।
কয়েক মাসের সংঘর্ষ শেষে রবিবার সকালে এএ মংডু শহরের বাইরের সীমান্তরক্ষী পুলিশ ব্যাটালিয়ন নং ৫ দখল করে। এটি ছিল জান্তা সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা শেষ সীমান্ত ঘাঁটি।
এএ জানায়, তারা জান্তা বাহিনী এবং তাদের সংশ্লিষ্ট রাখাইন রোহিঙ্গা আর্মি (এআরএ), আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএসএ) ও রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) বাহিনীকে আক্রমণ করে। তারা ঘাঁটি ছেড়ে পালাচ্ছিল।
রাখাইন সংবাদমাধ্যম সোমবার জানিয়েছে, এএ মংডুর লড়াইয়ের পর জান্তার মিলিটারি অপারেশন কমান্ড ১৫-এর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল থুরেইন তুনকে আটক করেছে। এছাড়া জান্তা বাহিনীর সেনাসহ প্রায় ৮০ জন রোহিঙ্গা সেনাকে আটক করেছে।
আরাকান আর্মি (এএ) গত মে মাসের শেষ দিকে মংডু অভিযান শুরুর ছয় মাস পর পুরো টাউনশিপের নিয়ন্ত্রণ নিল।
এএ দাবি করেছে, তারা এখন বাংলাদেশ সীমান্তসংলগ্ন মিয়ানমারের তিনটি টাউনশিপ— রাখাইন রাজ্যের মংডু ও বুথিডং ও চিন রাজ্যের পালেতোয়ার (যার ভারতের সঙ্গেও সীমান্ত রয়েছে) পূর্ণাঙ্গ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।
রাখাইনের সংঘর্ষ পর্যবেক্ষণকারী এক বিশ্লেষক বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য পুণরায় চালু হলে মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্যের মানুষের দুর্ভোগ কমবে।
গত মাসে জাতিসংঘ জানিয়েছে, রাখাইনের ২০ লাখ মানুষ অনাহারের ঝুঁকিতে রয়েছে। জান্তা সরকার সড়ক ও জলপথ অবরুদ্ধ করায় খাদ্য, জ্বালানি এবং ওষুধসহ আন্তর্জাতিক মানবিক সাহায্য সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে।
ওই বিশ্লেষক আরও উল্লেখ করেন, রাখাইনের জটিল রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশ সরকারকে আরাকান আর্মির সঙ্গে কার্যকর সংলাপে অংশগ্রহণ করতে হবে।
এএ সেনারা এখন রাখাইনের দক্ষিণাঞ্চলের গওয়া, তাউংগুপ ও আন টাউনশিপের নিয়ন্ত্রণের জন্য লড়াই করছে।
তারা আন টাউনশিপের অধিকাংশ এলাকা এবং জান্তা সরকারের ৩০টিরও বেশি ঘাঁটি ও অবস্থান দখল করেছে। এখন কেবল জান্তা সরকারের পশ্চিম সামরিক কমান্ড সদরদপ্তর অবশিষ্ট রয়েছে।
তাউংগুপ শহরের প্রায় পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণও এএ দাবি করেছে। সেখানে শহরের বাইরে মাত্র একটি জান্তা ঘাঁটি বাকি আছে।
এএ জাতিগত বিদ্রোহীদের জোট ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের সদস্য। গত বছরের অক্টোবরে ‘অপারেশন ১০২৭’ শুরু করার পর থেকে তারা উত্তর শান রাজ্যের অধিকাংশ এলাকার দখল নিয়েছে। এর মধ্যে উত্তর শান রাজ্যের রাজধানী লাশিওও রয়েছে।
গত বছরের নভেম্বরে আরাকান আর্মি (এএ) এই অভিযান তাদের নিজ রাজ্য রাখাইনেও সম্প্রসারিত করে। এখন পর্যন্ত এএ রাখাইন রাজ্যের ১৭টি টাউনশিপের মধ্যে প্রায় ১৩টি এবং পাশের চিন রাজ্যের পালেতোয়া টাউনশিপের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।
তথ্যসূত্র: দ্য ইরাবতী