অষ্টম উইকেটে রেকর্ড ৯২ রানের জুটি না হলে হতাশাটা আরও বাড়ত। দলীয় রা দেড়শর আশে পাশে আটকে যেতো। মাহমুদউল্লাহ ও তানজিম সাকিব জুটি গড়ে মুখরক্ষা করেন। দলীয় দুইশো রান হয়েছে তাদের ব্যাটে।
সিরিজের প্রথম ম্যাচে ২৯৪ রান করেও উইন্ডিজকে হারানো যায়নি। দ্বিতীয় ম্যাচে ২২৮ রানের লক্ষ্য দিয়ে জয়ের আশা করা কঠিন। উইন্ডিজ ব্যাটারদের সাবলীল ইনিংসগুলো তাদের ৮ উইকেটের জয় এনে দিয়েছে, সঙ্গে সিরিজও।
২০১৪ সালের পর এই প্রথম বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ জিতলো উইন্ডিজ। সেবারের পর হোম ও অ্যাওয়ে মিলিয়ে টানা চারটি ওয়ানডে সিরিজে ক্যারিবিয়ানদের হারিয়েছিল বাংলাদেশ। এবার আর সাফল্য আসেনি। ১০ বছর পর ওয়ানডে সিরিজ হারল ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে।
তার কারণ বরাবরের মতো ব্যাটিং ব্যর্থতা। ম্যাচের আগের দিনে সিনিয়র সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন কড়া বার্তা দিয়েছিলেন। জাতীয় দলে জায়গা পাওয়া মানে পারফরম করতেই হবে, এছাড়া উপায় নেই। নতুন বা অনভিজ্ঞতার দোহাই দেওয়া চলবে না। এই কথা বলে তিনি নিজেও শিষ্যদের আগলে রাখবেন না বলে জানিয়েছেন।
লিটন দাস, সৌম্য সরকার, মিরাজ ও আফিফদের দিকে তাকালে কোচের এই বার্তায় কতটুকু কাজ হয়েছে তা পরিষ্কার হয়। কারণ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ছাড়া এ সিরিজে ধারাবাহিক তো কেউই হতে পারলেন না। বরং ওপেনার তানজিদ তামিম দুই ম্যাচে চল্লিশ ছাড়ানো রান করেছেন।
টপ অর্ডারদের উচ্চাভিলাষী শটে উইকেট ছুঁড়ে আসায় মত্র ১১ ওভারের মধ্যে ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ২০ ওভার পার হতেই ৭ উইকেট পড়ে যায় ১১৫ রানে। ওই অবস্থা থেকে ম্যাচে ফেরা অবিশ্বাস্য কিছু না হলে অসম্ভব। তানজিম সাকিবকে নিয়ে অষ্টম উইকেটে বাংলাদেশের রেকর্ড ৯২ রানের জুটিতে চেষ্টা করেছিলেন মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি।
আগের মতো এখনও ক্যারিয়ারের শেষদিকে চলে আসা মাহমুদউল্লাহর দিকে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে রানের জন্য। তানজিম হাসান সাকিবের মতো একজন দাঁড়িয়ে যান বলে সম্মানজনক রান উঠে যায় বাংলাদেশের বোর্ডে।
বাংলাদেশের ইনিংস শেষে উইন্ডিজ স্পিনার গুদাকেশ মোতির কথায় জয়ের আত্মবিশ্বাসটা স্পষ্ট, “এমন উইকেটে ৩০০ রান হয়। ওদের আমরা তিনশোর চেয়ে অনেক কম রানে আটকাতে পেরেছি। সেদিক থেকে আমরা খুশি।”
দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ ব্যাটারদের জন্য দারুণ ভাবে ফাঁদ তৈরি করেছেন উইন্ডিজ বোলাররা। প্রতি ব্যাটারের জন্য ভিন্ন পরিকল্পনা ছিল। গুড লেন্থের বলে দুর্বল সৌম্য, লিটন অফস্ট্যাম্পের বাইরের বলে খোঁচা দেন, আফিফ ইনিংস বড় করার আগেই বড় শট নেন, তানজিদ তামিম টানা দুই ম্যাচে গালিতে আউট হলেন। এমন কিছু আউটের পরিকল্পনা করে বেশ সফল হলেন উইন্ডিজ বোলাররা।
বিপক্ষের পরিকল্পনায় পা না দিয়ে কিভাবে সফল হওয়া যায় তা এখনও শেখার আছে বাংলাদেশ ব্যাটারদের। আজকের ম্যাচ শেষে সালাউদ্দিন শিষ্যদের নিয়ে সেই কাজটা অবশ্যই করবেন। নয়তো শেষ ম্যাচে জয়ের দেখা মিলবে না।
ছোট টার্গেট তাড়া করার পথে ব্র্যান্ডন কিংয়ের ৭৬ বলে ৮২, ইভিন লিউইসের ৪৯ ও কেসি কার্টির ৪৫ রান ক্যারিবিয়ানদের জয় সহজ করে। তিনটি করে উইকেট নেন নাহিদ রানা, রিশাদ হোসেন ও আফিফ হোসেন।
টানা ১১ ম্যাচ হারের পর বাংলাদেশের বিপক্ষে জয়ের দেখা পেয়েছে ক্যারিবিয়ানরা। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিয়ে বাংলাদেশের বড় স্বপ্ন ধোঁয়াশা করে দিয়েছে। এই সিরিজের পর বাংলাদেশের আর ওয়ানডে খেলা নেই। ফেব্রুয়ারীতে সর্বশেষ সিরিজ হারের স্মৃতি নিয়ে নামতে হবে। শেষ ম্যাচে না জিতলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে স্মৃতি আরও তেতো হবে। এই অবস্থা পরিবর্তনে বড় বাধা ব্যাটিং। ব্যাটাররা তাদের ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠতে পারবে তো!
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
বাংলাদেশ : ২২৭/১০, ৪৫.৫ ওভার (মাহমুদউল্লাহ ৬২, তানজিম ৪৫, তানজিদ ৪৬, আফিফ ২৪; জেডন সিলস ৪/২২, মোতি ২/৩৬)। উইন্ডিজ : ২৩০/৩, ৩৬.৫ ওভার (ব্রেন্ডন ৮২, কেসি ৪৫, লিউইস ৪৯; আফিফ ১/১২, নাহিদ ১/৩৬, রিশাদ ১/৫৩)। ফল : উইন্ডিজ ৭ উইকেটে জয়ী। ম্যাচ সেরা : জেডন সিলস।
২০ ওভার শেষে প্রথম উইকেটের দেখা
জয়ের লক্ষ্যের পথে অর্ধেক পাড়ি দেওয়া হয়েছে উইন্ডিজের। তবুও উইকেটের দেখা মিলছিল না। নাহিদ রানার বলে ইভিন লিউইস পায়ে আঘাত পাওয়ার পর শক্তি খর্ব হয় এই ব্যাটারের।
আঘাত পাওয়ার এক ওভার পর রিশাদ হোসেনের বলে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন লিউইস। ২০ ওভার শেষে ১০৯ রানে প্রথম উইকেট হারায় উইন্ডিজ। ৬২ বলে লিউইসের রান ৪৯। জয়ের জন্য ১১৯ রান চাই উইন্ডিজের। উইকেটে অপরাজিত ৬৩ বলে ৫৯ রান করা ব্র্যান্ডন কিং।
শুরুতে উইকেট নেই চাপে বাংলাদেশ
লক্ষ্য কম থাকায় রান তোলার তাড়া নেই উইন্ডিজের। দলটির দুই ওপেনার স্বচ্ছন্দে এগিয়ে চলছেন টার্গেট লক্ষ্য করে। প্রথম পাওয়ার প্লেতে উইন্ডিজের উদ্বোধনী জুটিতে ফাটল ধরাতে পারেনি বাংলাদেশ বোলাররা।
১৫ ওভার শেষে বিনা উইকেটে উইন্ডিজের রান ৭৯। ব্র্যান্ডন কিং ৪৪ ও ইভিন লিউইস ৩০ রানে অপরাজিত। পাওয়ার প্লেতে সাবলীল ব্যাট করা দুই ওপেনারকে বিপদে ফেলতে পারেননি বাংলাদেশ বোলাররা। নতুন বলেও স্বচ্ছন্দে রান তুলেছেন তারা। আউটের সুযোগও তৈরি হয়নি।
অবশ্য ১৪তম ওভারে প্রথম উইকেট পেতে পারতো বাংলাদেশ। লং অনে লিউইসের সহজ ক্যাচ হাতে রাখতে ব্যর্থ হন সৌম্য। মেহেদি হাসান মিরাজের মিডলস্ট্যাম্পের বলটি মিস টাইমে তুলে মারেন লিউইস। লং অনে একটু দৌড়ে সহজ ক্যাচই পেয়ে যান সৌম্য। কিন্তু মিস করেন। ২৮ রানে জীবন পান লিউইস।
ব্যাটিং ব্যর্থতায় আড়াইশোও হলো না
আগের ম্যাচে ২৭০ রান চেয়ে ২৯৪ পেয়েছিলেন মেহেদি হাসান মিরাজ। তবুও ম্যাচ জিততে পারেননি। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে উইন্ডিজের বিপক্ষে এল ২২৭ রান। এবার ম্যাচ জয়ের চ্যালেঞ্জটা একটু বেশি। সঙ্গে সিরিজ বাঁচানোর চ্যালেঞ্জও পিস্তলের মুখে।
শুরুর ব্যাটারদের ব্যর্থতায় উইন্ডিজের বিপক্ষে ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে প্রায় ৪ ওভার বাকি থাকতে অলআউট হয়েছে বাংলাদেশ। মাহমুদউল্লাহর ৯২ বলে ৬২ ও তানজিম হাসান সাকিবের ক্যারিয়ার সেরা ৬২ বলে ৪৫ রানে খাদের কিনারা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছে বাংলাদেশ। ১১৫ রানে ৭ উইকেট হারানো অবস্থান থেকে ২২৮ রানের লক্ষ্য ছোঁড়া গেছে।
মাহমুদউল্লাহ সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিসের এই মাঠে প্রথমবার আউট হলেন। জেডন সিলসের অফস্ট্যাম্পের অনেক বাইরের বলে কাট করে উড়িয়ে মারার চেষ্টা ছিল তার। কিন্তু বাউন্ডারী লাইনে মোতির ক্যাচ হন। মাহমুদউল্লাহ শেষ কিছু ওভারে উইকেট থাকলে টার্গেট আরও বড় করার সুযোগ ছিল বাংলাদেশের।
মাহমুদউল্লাহর ৬২ ও সাকিবের ৪৫ রান ছাড়া ওপেনার তানজিদ তামিম ৪৬ রান করেন। আফিফ হোসেনের ব্যাট থেকে এসেছে ২৪ রান।
২০১৪ সালের পর এই প্রথম উইন্ডিজের কাছে ওয়ানডে সিরিজ হারের হুমকিতে পড়েছে বাংলাদেশ। সর্বশেষ চারটি সিরিজ জিতেছিল লিটন-মিরাজরা। এ সিরিজ হারলে এই প্রতিপক্ষের সঙ্গে টানা সাফল্যে ছেদ পড়বে।
সাহসী সাকিবের ফিফটির আক্ষেপ
অবিশ্বাস্য ভালো খেলেছেন তানজিম হাসান সাকিব। তার কাজ বল হাতে উইকেট নেওয়া। কিন্তু ব্যাটারদের ব্যর্থতায় মঙ্গলবার বোলার নয় ব্যাটারের ভূমিকা নিতে হলো তানজিমকে। এতে পুরোপুরি সফল সাকিব।
এই ম্যাচের আগে সাকিবের সর্বোচ্চ রান ছিল ১৮। ক্যারিয়ারে ৮ ম্যাচে রান ছিল ৫০। মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে দলকে লড়াইয়ে ফেরানো জুটিতে ক্যারিয়ার সেরা ৪৫ রান তুলে নিলেন। অষ্টম উইকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ৯২ রানের রেকর্ড জুটিও গড়েছেন।
৬২ বলে ৪টি চার ও ২ ছক্কায় ৪৫ রান করে প্রথম ওয়ানডে ফিফটির আক্ষেপ নিয়ে ফিরলেন সাকিব। সাকিবের বিদায়ে ২০৭ রানে অষ্টম উইকেট হারালো বাংলাদেশ। এদিকে ক্যারিয়ারের ১৭তম এবং সেন্ট কিটসে নিজের চতুর্থ ফিফটি তুলে ৯১ বলে ৬২ রানে অপরাজিত আছেন মাহমুদউল্লাহ।
আবারও ত্রাতা মাহমুদউল্লাহ
আফগানিস্তানের বিপক্ষে সবশেষ ম্যাচের কথা সবারই মনে আছে। রান না পাওয়ার সমালোচনা ৯৮ রানের ঝকঝকে ইনিংসে থামিয়ে ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। সঙ্গে দলকে ভালো স্কোরও এনে দেন কঠিন অবস্থা কাটিয়ে।
সুবাদে মাহমুদউল্লাহর ওয়ানডে দলে থাকা নিয়ে আর প্রশ্ন ওঠার অবকাশ নেই। উইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ম্যাচেও হাল ধরেছিলেন তিনি। করেছেন ক্যারিয়ারের ১৭তম ফিফটি। তার ব্যাটে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচেও বিপদ কিছুটা কটিয়ে উঠেছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাইলেন্ট কিলার আবারও তার ভূমিকায়। টপঅর্ডারদের ব্যাটিং ব্যর্থতা বরাবরই এই অভিজ্ঞ ব্যাটারকে তার দায়িত্বে ফেরায়। সময় নিয়ে ইনিংস সাজাতে বেশি পছন্দ করেন মাহমুদউল্লাহ। উইকেটে সেট হওয়ার পর রান-বল ইনিংস খেলেন। তাতে দল পায় সম্মান জনক স্কোর। মুথ থুবড়ে পড়া হারের জায়গায় কখনও দল জিতে যায় নয়তো লড়াকু সংগ্রহ পায়।
উইন্ডিজে আবারও নিজের প্রিয় ভূমিকায় সফল হতে চলেছেন মাহমুদউল্লাহ। তানজিম হাসান সাকিবকে সঙ্গে নিয়ে ইনিংসের প্রথম ফিফটি জুটি গড়েছেন তিনি। ১১৫ রানে ৭ উইকেট পড়ার পর দলকে দুইশো ছাড়ানো স্কোরের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন এ অভিজ্ঞ ব্যাটার।
মাহমুদউল্লাহ করেছেন ৭৭ বলে ৪৫। সাকিব অপরাজিত ৩৭ বলে ২১ রানে। এতে বাংলাদেশ ৩৭ ওভার শেষে ৭ উইকেটে তুলেছে ১৬৭ রান।
২০ ওভার শেষে বিপদে বাংলাদেশ
সিরিজের প্রথম ম্যাচে ব্যাটিং পরিকল্পনায় সফল হওয়ায় যে স্বস্তি মিলেছিল দ্বিতীয় ম্যাচে তা একদম মিলিয়ে গেল। ২১ তম ওভারে ব্যাটিং অর্ডারের ষষ্ঠ উইকেট হারিয়ে বিরাট বিপদে বাংলাদেশ।
সবশেষ ব্যাটার হিসেবে আউট হলেন জাকের আলি। ৯ বলে ৩ রানে ফিরেছেন গত ম্যাচে পাওয়ার হিটিং করা জাকের। গুদাকেশ মোতির বলে এলবিডব্লিউ হয়েছেন। তার বিদায়ে মাত্র ১০৪ রানে ৬ উইকেট হারালো বাংলাদেশ।
এর আগে ফিরেছেন আফিফ হোসেন। গত ম্যাচের মতো এবারও ইনিংসের শুরু কাজে লাগাতে ব্যর্থ আফিফ। আগের ম্যাচে করেছিরেন ২৮ রান এবার ২৯ বলে চার চারে ২৪। ইনিংস জুড়ে ভালো শট খেলছিলেন আফিফ। মাঝ ব্যাটেই হচ্ছিল সব। কিন্তু আউট হওয়ার বলটিতে ঠিক মাঝ ব্যাটে হয়নি।
ব্যাটিং ব্যর্থতায় এই ম্যাচে একটিও ফিফটি জুটি নেই বাংলাদেশের। গত ম্যাচে ছিল তিনটি। এবার সর্বোচ্চ ৩৬ রান এসেছে আফিফ-মাহমুদউল্লাহ জুটিতে।
তামিমের দারুণ ইনিংসের করুণ সমাপ্তি
একপ্রান্তে উইকেট পড়লেও সাবলীল খেলছিলেন তানজিদ হাসান তামিম। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে হাফসেঞ্চুরির পথেই ছিলেন। প্রতিটা শটে আত্মবিশ্বাসের বিচ্ছুরণ ছিল দারুণ। কিন্তু এমন ইনিংসের হতাশাজনক সমপ্তিতে পুরো বিপদে বাংলাদেশ।
মাত্র ৩৩ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় ৪৬ রান করেছিলেন তামিম। ঠিক গত ম্যাচের কার্বন কপি ছিল তার আউট। দুবারই গালিতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন। ওই একটি কাট শট বাদে বাকি সব শটেই তামিম ছিলেন পারফেক্ট। এত সুন্দর ইনিংসের এমন সমাপ্তিতে তামিম নিজেও ছিলেন হতাশ। আউট হওয়ার পর ব্যাটে ঘুষি মারলেন সজোরে।
৬৪ রারে চতুর্থ উইকেট হিসেবে তামিম আউট হলেন। উইন্ডিজ বোলারদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত শট নেওয়ার মাশুল দিলেন বাংলাদেশ ব্যাটাররা। রান বেশি তোলার চেষ্টায় একটু বেশি শট খেলছিলেন তারা। ভালো বলেও উড়িয়ে মারার চেষ্টায় প্রথম পাওয়ার প্লে-তেই ব্যাকফুটে পড়ে যেতে হলো বাংলাদেশকে।
পাওয়ার প্লেতে ফিরলেন সৌম্য-লিটন-মিরাজ
অভিজ্ঞতার বিচারে এ দুই ব্যাটারকেই এগিয়ে আসার কথা। দলের রান বাড়ানোর দায়িত্বটা নেওয়ার কথা। কিন্তু টানা দ্বিতীয় ম্যাচে ব্যর্থ হয়ে ইনিংসের শুরুতেই ফিরলেন সৌম্য সরকার ও লিটন দাস। আর ইনিঙস গড়ে তোলার আগেই নিজের ভুলে বোল্ড হলেন মেহেদি হাসান মিরাজ। তিনটি উইকেটই নিয়েছেন জেডন সিলস।
দুই ব্যাটার আউট হয়েছেন ক্যাচ অনুশীলন করিয়ে। বিপক্ষ ফিল্ডারদের সরাসরি হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে সৌম্য মাত্র ৫ বলে ২ ও লিটন ১৯ বলে ৪ রান করে ফিরলেন। দুজনের বিদায়ে ১০ ওভার শেষ হওয়ার আগেই জোড়া উইকেট নেই বাংলাদেশের।
দুটি উইকেটই নিয়েছেন জেডন সিলস। বাংলাদেশ ব্যাটারদের দুর্বলতা দারুণ ভাবে ধরে ফেলেছেন এই পেসার। বিশেষ করে লিটন দাসকে নিজের “বানি” বানিয়ে ফেলেছেন সিলস। সিরিজে এ নিয়ে তৃতীয়বার লিটনকে ফেরালেন।
এবার সিলসের শট বলে পুল করতে গিয়ে মিস টাইম করেছেন লিটন। বল তার কাছে আসার আগেই ব্যাট চালিয়ে দেওয়ায় ব্যাটের উল্টো পাশে লেগে ক্যাচ উঠে যায় গালিতে। টানা দুই ম্যাচে রান করতে ব্যর্থ লিটন। ২০২৩ বিশ্বকাপের পর এমন ব্যাড প্যাডে পড়েছিলেন বাংলাদেশ ব্যাটার। একই ভয় তৈরি হচ্ছে তার পারফরম্যান্সে।
এদিকে আগের ম্যাচে ভালো কিছু শট পাওয়া সৌম্য এবার ক্যাচ তুলে দিয়েছেন অন সাইডে। সিলসের মিডল স্ট্যাম্পের বলটিতে লফটেড ড্রাইভ খেলতে চেয়েছিলেন অন সাইডে দাঁড়ানো ফিল্ডারের মাথার ওপর দিয়ে। কিন্তু ব্যাট-ব্যাটে সঠিক টাইমিং না হওয়ায় সরাসরি ক্যাচ যায় গুদাকেশ মোতির হাতে।
পাওয়ার প্লেতে শেষ ব্যাটার হিসেবে ফিরলেন মেহেদি হাসান মিরাজ। গত ম্যাচের মতো শান্ত ভাবে ইনিংস শুরু করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ৫ বল খেলার পর সিলসের অফস্ট্যাম্পের বাইরের বল ছাড়তে গিয়ে বোল্ড হন। বল তার ব্যাটের ভেতরের কানায় লেগে স্ট্যাম্পে আঘাত করে।
জোড়া উইকেট হারানোর পর গতি কমেছিল বাংলাদেশের রান তোলার। ইনিংসের শুরুতে ফ্রি ফ্লোতে রান তুলতে থাকা তানজিদ তামিমও আটকে গেছেন। ৩০ বলে ৩৮ রান তার। বাংলাদেশ ৫৫ রানে হারিয়েছে ৩ উইকেট।
আবারও আগে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ
উইন্ডিজের বিপক্ষে টানা দ্বিতীয় ম্যাচে আগে ব্যাটিং করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। এবার টস হেরে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ পেয়েছেন মেহেদি হাসান মিরাজরা।
আগের ম্যাচের একাদশে একটি পরিবর্তন এনেছে বাংলাদেশ। ওয়ার্ক ম্যানেজমেন্ট -এর কারণে এই ম্যাচে খেলছেন না তাসকিন আহমেদ। তার জায়গায় সুযোগ পেয়েছেন শরিফুল ইসলাম। কাঁধের ইনজুরির পর থেকে তাসকিনকে বিশ্রাম দিয়েই খেলানো হচ্ছে।
আগের ম্যাচে ইনিংসের শেষদিকে পাওয়ার হিটিংয়ের ভুল কাটিয়ে এ ম্যাচে আরও বড় রান করার লক্ষ্য বাংলাদেশের। এ ম্যাচ হারলে উইন্ডিজের কাছে টানা চারবার পর সিরিজ হারের হতাশা মিলবে বাংলাদেশের।
বাংলাদেশ : তানজিদ তামিম, সৌম্য সরকার, লিটন দাস, আফিফ হোসেন, মাহমুদউল্লাহ, মেহেদি হাসান মিরাজ (অধিনায়ক), জাকের আলি, রিশাদ হোসেন, শরিফুল ইসলাম, নাহিদ রানা, তানজিম হাসান সাকিব।
উইন্ডিজ : ব্র্যান্ডন কিং, ইভিন লিউইস, কেসি কার্টি, শেই হোপ (অধিনায়ক), রোস্টন চেজ, শারফেন রাদারফোর্ড, জাস্টিন গ্রিভস, রোমারিও শেফার্ড, গুদাকেশ মোতি, জেডন সিলস, আলজারি জোসেফ।