অক্টোবর মাসে দেশে মোবাইলে আর্থিক লেনদেন হয়েছে ১ লাখ ৫৪ হাজার ৮৫৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা। দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর এটাই এই খাতে সবোর্চ্চ সংখ্যক লেনদেন।
আর সামগ্রিক হিসেবে দ্বিতীয় সর্বাধিক, এর আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুনে এমএফএস খাতে লেনদেন হয়েছিল ১ লাখ ৫৫ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত একক মাস হিসেবে ওই অর্থবছরের জুনের লেনদেনই শীর্ষে রয়েছে।
বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংক মোবাইলে আর্থিক লেনদেনের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে। যেখানে অক্টোবর পর্যন্ত হিসাবই তুলে ধরা হয়েছে।
তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরে এমএফএসে লেনদেন হয়েছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৮ কোটি টাকা, আগস্টে লেনদেনের অঙ্ক ছিল ১ লাখ ৩৭ হাজার ৯২১ কোটি টাকার। আর অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে হয়েছিল ১ লাখ ২২ হাজার ৯২২ কোটি টাকার লেনদেন।
জুলাইয়ে যখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে তীব্র ছাত্র-গণআন্দোলন চলছিল তখন স্বাভাবিকভাবেই আর্থিক লেনদেনের পরিমাণ কমে গিয়েছিল। কয়েকদিন ইন্টারনেট না থাকা, ব্যাংকসহ সব ধরনের প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত বন্ধ থাকা, পোশাক কারখানাসহ উৎপাদনমুখী শিল্প বন্ধ থাকার কারণে অন্যান্য খাতের মতো মোবাইলে আর্থিক লেনদেনও কমে গিয়েছিল।
আবার আন্দোলনের সমর্থন দিতে গিয়ে অনেক প্রবাসীও পাঠাননি রেমিটেন্স। এটিও এফএফএসসহ অন্যান্য আর্থিক খাতে লেনদেনের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত তথ্যেও তাই জুলাইয়ের লেনদেন কমই দেখা যাচ্ছে।
আগস্টে ক্ষমতার পালাবদল ও নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর কিছুটা বাড়ে মোবাইলে লেনদেনের পরিমাণ, সেপ্টেম্বরে এসেও লেনদেনে উন্নতির দেখা মিলেছে। সবশেষ অক্টোবরে গিয়ে দ্বিতীয় সর্বাধিক লেনদেন দেখা গেল।
এমএফএস খাতে লেনদেনের মধ্যে রয়েছে মোবাইল ফোনের সাহায্যে অন্যকে টাকা পাঠানো, মোবাইল রিচার্জ, বিভিন্ন পরিষেবা ও কেনাকাটার বিল পরিশোধ, টিকেট কেনাসহ বিভিন্ন রকমের সেবা। বিকাশ, রকেট, নগদ ও উপায়ের মতো মোবাইলে আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে এসব লেনদেন করা হয়।
গত বছরের অক্টোবরে লেনদেন হয়েছিল এক লাখ ২০ হাজার ৫৯৬ কোটি টাকা, সেপ্টেম্বরে এক লাখ ৮ হাজার ৩৭৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা এবং আগস্টে হয়েছিল এক লাখ ৯ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকার লেনদেন। অর্থাৎ, চলতি বছরের জুলাইয়ে নানা করণে লেনদেন কম হলেও তা এক বছর আগের তুলনায় বেশি।
গত কয়েক অর্থবছরের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে মোবাইলে আর্থিক সেবা বা এমএফএস ব্যবহার প্রত্যাশার চেয়েও দ্রুত গতিতে বাড়ছে।
গ্রাহক ২৩ কোটি ৫৭ লাখ
মোবাইল লেনদেনে গ্রাহক সংখ্যা বাড়ছে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে মোট গ্রাহক সংখ্যা ছিল ৬ কোটি ৭৬ লাখ ৭০ হাজার ৪৬৮। এ বছরের অক্টোবরে সেই গ্রাহক সাড়ে ৩ গুণ বেড়ে ২৩ কোটি ৫৭ লাখ ৪ হাজার ৭১৩ তে দাঁড়িয়েছে।
আগের মাস সেপ্টেম্বরে গ্রাহক সংখ্যা ছিল ২৩ কোটি ৩৭ লাখ ৭৩ হাজার ৫২৩।
একজন গ্রাহক একাধিক এমএফএস সেবায় হিসাব খুলতে পারেন। ঠিক কত নাগরিক এমএফএসের আওতায় এসেছেন সে সম্পর্কে কোনও পরিসংখ্যান না থাকলেও খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের প্রায় প্রতিটি পরিবারেই পৌঁছেছে এমএফএস সেবা।